সাম্প্রতিক খবর

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯

কেন্দ্রের ভিক্ষে আমরা চাই না, ন্যায্য পাওনা চাই: মুখ্যমন্ত্রী

কেন্দ্রের ভিক্ষে আমরা চাই না, ন্যায্য পাওনা চাই: মুখ্যমন্ত্রী

আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারকেশ্বরে বার্ষিক মাটি উৎসবের উদ্বোধন করেন। প্রতি বছরের মত এবছরও কৃষকদের সাফল্যের জন্য তাদের মাটি সম্মান পুরস্কারে ভূষিত করেন তিনি।

সেই মঞ্চ থেকেই তিনি শিলান্যাস করেন রানি রাসমণি গ্রীন ইউনিভার্সিটি ও চন্দননগরের লাইট হাবের। এছাড়া, কর্মরত মহিলাদের জন্য হোস্টেল – যার নাম মুখ্যমন্ত্রী রেখেছেন কর্মাঞ্জলি – এর উদ্বোধনও করেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:

বাংলায় ইতোমধ্ই ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি আমরা, স্বাধীনতার পর থেকে ছিল ১২, আরও ১০টির কাজ চলছে

কন্যাশ্রী আমাদের ভাবনা, যা সারা বিশ্ব জয় করেছে। কন্যাশ্রী নামে সরকারি গেস্ট হাউস, লঞ্চ, বিশ্ববিদ্যালয় আছে

মাটি তীর্থ আমাদের ভাবনা। মাটিকে ঘিরেই আমাদের জীবন স্বপ্ন। অর্থাৎ বাংলাই পথ দেখায়। মাটিকে ভালোবেসে আমি একটি কবিতাও লিখেছিলাম, এই কবিতা থেকেই এই উৎসবের কথা ভেবেছিলাম

সিঙ্গুরের জমিহারাদের জমি ফেরত দিতে পেরে আমি গর্বিত

যখন ওরা সিঙ্গুরের জমি দখল করেছিল, তখন আমি কলকাতায় ২৬ দিন অনশন করেছিলাম, আর সিঙ্গুরেও ১৪ দিন ধরনায় বসেছিলাম, সেই দিন গুলির কথা আনার আজ ও মনে পড়ে

আমরা কথা দিয়ে কথা রেখেছি। সিঙ্গুরের জমিহারা পরিবারদের আমরা ২৫০০ টাকা করে দিয়েছি এবং তাদের একটা চালের স্পেশাল প্যাকেজ দেওয়া হয়। শুধু জমি নয়, জমিতে যাতে তারা চাষ করতে পারে সেজন্য তাদের ১০০০০ টাকা করে দেওয়া হয়।

সিঙ্গুরে আজ একটি স্মারকের শিলান্যাস হল, এছাড়াও এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে

সিঙ্গুরের সেই কৃষকদের আজ সম্মান দিতে পেরে আমরা ধন্য, কৃষকদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ

আমাদের সরকার কৃষকবান্ধব। কৃষিজমির খাজনা আমরা মুকুব করে দিয়েছি। কৃষি জমির মিউটেশন ফিও মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির আর মিউটেশন ফি লাগবে না।

কৃষকদের ফসল বীমা দিতে হয় না, রাজ্য সরকার দেয়। গত বছর রাজ্য সরকার ৬২৫ কোটি টাকা দিয়েছে আর এবছর ৭০০ কোটি টাকা দিচ্ছে।

কেন্দ্র সরকার ছবি দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে, ওটা ফেলে দিন, ওতে কোন কাজ হয় না। আমরা করে দিয়েছি, আমরাই করব। এবার পুরো প্রিমিয়ামের টাকা রাজ্য দেবে।

কেন্দ্রের ভিক্ষে আমরা চাই না, আমাদের প্রাপ্য টাকাই দেয় না।

আমরা কৃষক বন্ধু প্রকল্প চালু করেছি। যাদের ১ একর জমি আছে, তাদের সরকার বছরে ২ ইনস্টলমেন্টে ৫০০০ টাকা দেবে। ১৮ -৬০ বছরের মধ্যে কোন কৃষক মারা গেলে তার পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা দেবে সরকার। এজন্য সরকারের খরচ হচ্ছে ৫০০০ কোটি টাকা।

খাদ্যসাথী প্রকল্পে সাড়ে ৮ কোটি লোককে ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়া হচ্ছে, সরকার চাল কেনে ২৯ টাকায় কিন্তু মানুষকে দেয় ২ টাকায়। অতিরিক্ত ৫০০০ কোটি টাকা খরচে রাজ্য সরকার এই কাজ করছে মানুষের জন্য। জনগণের কাজ জনগণের সরকার করছে।

কয়েকদিন আগে বিজেপি নেতার ছবি দিয়ে একটা করে ভাঁওতা চিঠি দিল্লি থেকে পাঠাচ্ছিল – আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকার বীমা, আমরা বলেছি হবে না। কারণ তার মধ্যে অর্ধেক টাকা রাজ্য সরকারের। তাই আমরা ওটা withdraw করে নিয়েছি। আমরা বাংলার মানুষকে স্বাথ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় এনেছি, বাংলার প্রোগ্রাম হল স্বাস্থ্য সাথী, এখানে আয়ুষ্মান ভারত ক্যানসেল ওটা মিথ্যে কথা।

আমরা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প চালু করেছি। এই প্রোগ্রামের জন্য অতিরিক্ত ৯২৫ কোটি টাকা খরচ করছে রাজ্য সরকার। আগে ৯৫ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পেত, এখন দেড় কোটি পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে।

পরিবারের প্রধান হিসাবে মহিলাদের স্বাস্থ্যসাথী স্মার্ট কার্ড আমরা পৌঁছে দেব। যার মাধ্যমে পাঁচ লক্ষ টাকার চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে। মহিলাদের স্বাবলম্বী করার জন্য এটা মহিলাদের দেওয়া হচ্ছে। অবিবাহিত মহিলাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যেমন এর দ্বারা উপকৃত হবেন, তেমনই বিবাহের পরও তার শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও পাবেন। অর্থাৎ একজন মহিলা তার পুরো পরিবারকে পরিচালনা করবে এই স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে।

মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী আছে। স্কুলে কন্যাশ্রী-১, কলেজের পাঠরতা মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী-২, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কন্যাশ্রী-৩। কলা বিভাগে পড়লে দুই হাজার টাকা পাবে, আর বিজ্ঞান বিভাগে পড়লে পাবে আড়াই হাজার টাকা।

“সবুজসাথী” প্রকল্পে বিনামূল্যে ১ কোটি সাইকেল দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের জন্য স্বামী বিবেকানন্দ মেধা প্রকল্প আছে। সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েরাও বৃত্তি পায়, তফসিলী, উপজাতি সম্প্রদায়ের অন্তভূর্ক ছেলেমেয়েরাও বৃত্তি পায়।

সাংবাদিকদের জন্যও “মাভৈ” প্রকল্প আছে, পেনশন প্রকল্প আছে।

সারা বিশ্বের প্রায় ১৫০০-১৬০০ প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি সেরা প্রকল্প নির্বাচিত হয়েছে। ভারতবর্ষ থেকে শুধুমাত্র বাংলার প্রকল্প ‘সবুজসাথী’ ও ‘উৎকর্ষ বাংলা’ নির্বাচিত হয়েছে। ‘উৎকর্ষ বাংলার’ মাধ্যমে আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে প্রশিক্ষন দেওয়া হয় এবং থেকে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে এই ‘উৎকর্ষ বাংলার’ মাধ্যমে চাকরিও পেয়েছে। তার জন্য সারা পৃথিবী আজ সম্মান করছে। সবাই আমাদেরকে ভালোবাসছে। এটাই আমাদের প্রাপ্তি।

আজকে দেশে কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়েছে। আমরা সবসময়ই কৃষকদের পাশে আছি। আমাদের রাজ্য সরকার কৃষকদের থেকে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু কিনবে। এর জন্য আমাদের আরও ৫৫০ কোটি টাকা লাগবে কিন্তু তাও আমরা চাষীদের মদত করব। আইসিডিএস, মিড ডে মিলের জন্য যা আলু লাগবে সবগুলো আমরা চাষীদের থেকে কিনব।

বন্যা বা খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমরা সাহায্য করি। এর জন্য ১২০০ কোটি টাকা আমরা খরচ করেছি।

আমরা আগামীদিনে বন্যা কমানোর জন্য নতুন প্রকল্প করছি। এই প্রকল্পের জন্য খরচ হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি হয়ে গেলে এখানে বন্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করা যাবে। বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলী ও হাওড়া জেলার প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে।

আরামবাগের জন্য আলাদা করে আরও ৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রন করার জন্য।

ভারতে যেখানে ২ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে সেখানে বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে।