জুলাই ১৫, ২০১৯
যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে “উৎকর্ষ বাংলা”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত রাজ্য সরকার উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্প শুরু করে ২০১৬ সালে। স্কুলছুটদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উপযুক্ত করা এই অভিনব প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পের অধীনে যুবরা বিনামূল্যে ৪০০ থেকে ১২০০ ঘণ্টার জন্য মূলত প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার, রিটেল, বিউটিশিয়ান, হেলথকেয়ার, পর্যটন ও হসপিট্যালিটি ম্যানেজমেন্ট, পোষাক তৈরী, কৃষি, ঢালাইয়ের, অটোমোবাইল সার্ভিসিং প্রমুখ ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং নিয়োগ করা হবে। এই প্রকল্পের দায়িত্বে আছে পশ্চিমবঙ্গ সোসাইটি ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট।
উৎকর্ষ বাংলা প্রকল্পতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ক্যাম্পাসিং-এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি বছর ৬ লক্ষ যুবকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে রাজ্যের পক্ষে। এই মুহূর্তে বাংলায় ৫৭০ জন প্রশিক্ষক ১১৯৮টি স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ২৫০টি আইটিআই, ১৫২টি পলিটেকনিক এবং ৩৩৯০টি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৩.২৩ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে ৩০টি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেন।
আগের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমেছে। বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ দিনের কাজ, ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প সহ নানা ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বেড়েছে। আগে সঠিক কর্মসংস্থানের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল না। নিয়োগ কর্তাদের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি ৪০০’রও বেশী সংস্থা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়েছে। সারা দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো প্রখ্যাত সংস্থা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।
পশ্চিমবঙ্গ স্কিল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির অধীনে বেসরকারি প্রশিক্ষণ সংস্থার মাধ্যমে যেসব গরিব ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ নেবে, তাদের টিফিন বাবদ দৈনিক ৫০ টাকা দেবে রাজ্য সরকার। কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে মূলত আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়। তাই তাদের আকর্ষণ বাড়াতে সামান্য টিফিন খরচের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
কারিগরি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে দিনে ছ’ঘণ্টা করে সময় বাঁধা থাকে। কিন্তু সেখানে বহু ছেলেমেয়ে কৃষক পরিবার থেকে আসে। অনেক ক্ষেত্রে তারা দিনে এতটা সময় দিতে পারে না। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই প্রশিক্ষণের নির্দিষ্ট সময় অপরিবর্তিত রেখে দৈনিক প্রশিক্ষণের সময়সীমা কমিয়ে দু’ঘণ্টা করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পুরো কোর্স শেষ করার ক্ষেত্রে বাড়তি সময় লাগলেও প্রতিদিনের দীর্ঘ সময় আটকে থাকার সমস্যা মিটবে।
এবার এই প্রকল্পের জন্য একটি উন্নত পোর্টাল চালু করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিলিকন ভ্যালি বাংলার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মঞ্চ থেকে এই পোর্টাল চালু করেন তিনি। এই পোর্টাল-টি হলো www.pbssd.gov.in । এর মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের বহুবিধ কাজ করা যাবে, যেমন – প্রার্থী নথিভুক্তকরণ, অনলাইন বায়োমেট্রিক এটেন্ডেন্স, প্রশিক্ষণের সহযোগী সংস্থা নথিভুক্তকরণ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নথিভুক্তকরণ ইত্যাদি। এই পোর্টালের মাধ্যমে আসবে স্বচ্ছতা। পরবর্তী পর্যায়ে এই পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট, প্রশিক্ষণের মনিটরিং, শিল্প ইন্টারফেস, প্লেসমেন্ট এর পরে প্রার্থীর কাজের খতিয়ান, অভিযোগ এর নিষ্পত্তিকরণ ইত্যাদি করা যাবে।
এই প্রকল্পে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। এতদিন এই প্রশিক্ষণ হত যোগানভিত্তিক। এবার রাজ্য সরকার এই ব্যবস্থার ভোল বদলে সেটাকে চাহিদা নির্ভর করবে। এবং তার জন্য আরও বেশী করে শিল্পোদ্যোগী ও চেম্বার অফ কমার্সের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।