মার্চ ১৬, ২০১৯
৪২জন প্রার্থী দেওয়ার মতন সংগঠন ওদের নেই, তারা নাকি আবার বাংলা দখল করবে: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ পুরুলিয়া জেলার জয়পুরে গুঞ্জা সবনপুর ফুটবল মাঠে এক কর্মীসভাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখেন।
দেখে নিন তার বক্তব্যের কিছু অংশঃ
তৃণমূল দল মানুষের দল। আমাদের দল সবসময় মানুষের পাশে থাকে এবং আমরা উন্নয়নে বিশ্বাসী। এই দল কোনওদিনও মানুষের সাথে বেইমানি করবে না। এই দল কোনওদিন আত্মসমর্পন করেনি।
কিছু মুষ্টিমেয় সাম্প্রদায়িক অসুর কয়েকটি বুথে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে শান্ত পুরুলিয়াকে অশান্ত করে তুলছে। আমি থাকতে পুরুলিয়ার মাটি অশান্ত হতে দেবনা।
২০১১ সালে সিপিএম ভস্মীভূত হয়েছিল আর ২০১৯ সালে মোদীকে এই আগুনেই ভস্মীভূত হতে হবে। মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না।
২০১৪ সালে বিজেপি বলেছিল “আচ্ছেদিন আনে ওয়ালা হ্যায়, দু কোটি বেকারের চাকরী হবে”। একটা কাউকে চাকরী দেয়নি। এই সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে পুরুলিয়ায় কোনও সাহায্য করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বারে বারে তিনি এখানে ছুটে এসেছেন। পশ্চিমাঞ্চলের জেলা গুলির মধ্যে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূমে তিনি উন্নয়নের ডালি নিয়ে বারে বারে পৌঁছে গিয়েছেন।
আমরা যা বলেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে এই জেলাতে প্রায় ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। শিশু সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৭০০ বাচ্চাকে সঠিকভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এই জেলাতে। নির্মল বাংলার মাধ্যমে প্রায় ৩ লক্ষ শৌচাগার করে দেওয়া হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল বাংলার জন্য অনেক উন্নয়ন করব কিন্তু কিছুই করেননি। কেন্দ্র সরকারের একাধিক জনবিরোধী কাজকর্মের জন্য ভারতবর্ষ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে গেছে। আমি বলি, আচ্ছে দিন তবেই আসবে যেদিন নরেন্দ্র মোদী দেশ থেকে পালাবে। আচ্ছে দিন তবেই আসবে যেদিন বিজেপি নিঃস্ব হবে। ২০১৯ সাল মোদী-শাহ জানে ওয়ালা হ্যায় , আচ্ছে দিন আনে ওয়ালা হ্যায়। ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ এটাই আমাদের মূল মন্ত্র।
সভাপতি হোক বা কর্মী হোক সকলকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রত্যেকটা বুথ থেকে যেন তৃনমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে সেটা আমাদের সকলকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
সরাসরি জোড়া ফুলে ভোট মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে ভোট, উন্নয়ন, শান্তি, সংহতি, কৃষ্টি, এসসি, এসটি, ওবিসি, কৃষক, শ্রমিক, কর্মী, ছাত্র, যু্ব, জঙ্গলমহলের পক্ষে ভোট। বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে জীবনে দুঃখ আর অন্ধকার নেমে আসা।
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার নাম পাল্টে বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা করায় ওদের আপত্তি। আমরা পারলে মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা নাম রাখতে পারতাম। কিন্তু আমরা চাইনা। বাংলার নামটা ব্যবহার হয়েছে বলে এরা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
আগামীদিন এই বাংলাই ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে। ৪২-এ ৪২/ বিজেপি ফিনিশ।
নির্বাচন ঘোষণার এক সপ্তাহ পরেও সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস কোনও রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি।
এবার লড়াইটা সাম্প্রদায়িক মোদী আর বাংলার জননেত্রী দিদির লড়াই। আমাদের লড়াইটা শুধু বিজেপি বা সিপিএমকে হারানোর লড়াই নয়, বাংলার সম্মান, কৃষ্টি, সংস্কৃতি নিয়ে যারা ছেলেখেলা করেছিল তাদেরকে জবাব দেওয়ার লড়াই।
বিজেপি বলেছিল ক্ষমতায় এলে পেট্রোলের দাম, ডিজেলের দাম কমবে। বিজেপি যখন ৫ রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়ল তখন পেট্রোল ডিজেল, আর রান্নার গ্যাসের দাম কমল। তিনমাস আগে রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৯৭৭টাকা, আর ৫ রাজ্যে হারার পর একধাক্কায় ৬৭০ টাকা করে দেয়।
৮ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার পরিচালনা করছে ১% বাড়তি কর মানুষের উপর চাপায় নি।
আমরা বলেছিলাম জঙ্গল মহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করব, ৮ বছরে একটাও আশান্তির খবর আসেনি, সিঙ্গুরে কৃষকের জমি ফিরিয়ে দেব, আমরা দিয়েছি। রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, আইটিআই, বিশ্ববিদ্যালয় করে তুলব, আমরা করেছি।
ওরা বলেছিল আচ্ছে দিন আসলে ২কোটি বেকারের চাকরি হবে, ১৫ লাখ টাকা করে গরিবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে, কাউকে ১৫ পয়সাও দেয় নি।
আজ বাঘমুন্ডিতে পঞ্চায়েত গঠন হয়েছে সিপিএম-বিজেপি কংগ্রেস একসাথে হাত মিলিয়ে একটা জোট করে মানুষকে গিয়ে একে অপরের নামে বলছে। মানুষ ভোট দেওয়ার পরে জোট করে নিজেদের মত তৈরী করে নিচ্ছে। এরা যাতে আগামীদিন দুর্নীতিটা ভালো করে করতে পারে তা সুনিশ্চিত করছে।
২০১৪ ও ২০১৯ এর লড়াইটা আলাদা। ২০১৪ এর লড়াইটা ছিল সিপিএম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ২জি কেলেঙ্কারি ও কয়লা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত কংগ্রেস যার পরিমান লক্ষ লক্ষ টাকা। বিজেপির দুর্নীতি ৪২ হাজার কোটি টাকার রাফাল বিমান। নমামি গঙ্গের দুর্নীতির পরিমান আট হাজার কোটি টাকা। গঙ্গা থেকে রাফাল সব বিক্রী করে দিয়েছে বিজেপি। আগামীদিন একটি নতুন বিকল্প তৈরী করতে হবে খেটে খাওয়া সাধারণ কৃষক, শ্রমিকের কথা ভাববেন।
আদিবাসীদের মধ্যে একটা মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে জমি কেড়ে নেওয়া হবে বলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলাদা করে আইন পাস করিয়েছেন যে কেউ যা ইচ্ছে করুক আদিবাসীদের জমি কেউ কাড়তে পারবে না। আদিবাসীদের জমি আদিবাসীদেরই থাকবে।
ওরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারে না তাই ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে। কিন্তু আমাদের কাজ সকল জাতি ধর্মের মানুষের জন্য উন্নয়ন। যখন দেখছে দাঙ্গা কাজ করছে না তখন নকল দেশপ্রেম কাজে লাগাচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদীর যদি বুকের পাটা থাকে তো হাফিজ সঈদকে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে তুলে আনুক। যদি ক্ষমতা থাকে নীরব মোদীকে দেশে ফিরিয়ে আনুক। যদি ৫৬ ইঞ্চি বুকের পাটা থাকে তো ললিত মোদীকে ফিরিয়ে আনুক। যদি বুকের পাটা থাকে তো লন্ডন থেকে বিজয় মালিয়াকে ধরে আনুক। জগাই -মাধাই পালিয়ে গেছে আর কোটি কোটি টাকা বিজেপির অ্যাকাউন্ট এ ভরে দিয়ে গেছে।
কংগ্রেস চোর হলে, বিজেপি হল ডাকাত। ৪২জন প্রার্থী দেওয়ার মতন সংগঠন ওদের কাছে নেই, তারা নাকি আবার বাংলা দখল করবে। পরিবর্তনের পথ দেখাবে বাংলা, পারলে দিল্লী সামলা – এটাই আমাদের অঙ্গীকার।