সাম্প্রতিক খবর

ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৯

এটা প্রহসনের বাজেট: অমিত মিত্র

এটা প্রহসনের বাজেট: অমিত মিত্র

আজ কেন্দ্রীয় বাজেট সম্বন্ধে নিজের বক্তব্য জানাতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ফেসবুক লাইভ করেন। তিনি বলেন, এটা প্রহসনের বাজেট। জলে তলিয়ে যাওয়ার আগে খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে বিজেপি।

অমিত মিত্রের বক্তব্যের কিছু অংশ:

  • একটি পার্টি যারা জলে তলিয়ে যাচ্ছে, কয়েকটি খড়কুটো ধরে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা, একটি আর্তনাদ আমরা শুনলাম, যাকে বলতে পারেন বাজেট।
  • তারা জানেন এই বাজেটকে তারা রূপায়িত করতে পারবেন না। তাদের সরকার আর এক মাসের বেশী নেই।
  • এটা জুমলা ছাড়া আর কিছু না। একদিকে কিছু মানুষকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, তাদের ভোটগুলো যাতে নিতে পারে, সেই প্রচেষ্টা।
  • ১০০দিনের কাজে ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের সংশোধিত হিসেবের থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় কোনও বৃদ্ধি নেই বরাদ্দে। এই বরাদ্দ না বাড়ালে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেই রাস্তা তৈরী হবে না।
  • স্বচ্ছ ভারত মিশনের বাজেট ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। গ্রামীণ বিকাশের টাকা ২০১৮-১৯ সালে ছিল ১.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা, এবছরে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। মুদ্রাস্ফীতির কথা ভাবলে এই পরিমাণ আগের থেকে কম।
  • তপশিলি জাতি ও উপজাতির ক্ষেত্রে আমব্রেলা প্রকল্প ২৯ শতাংশ কমানো হয়েছে। সেই মানুষগুলো যাদের উন্নয়নের জন্য আমরা সকলে লড়ছি, বাজেটে তাঁদের বরাদ্দ ছেঁটে দেওয়া হল।
  • দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বরাদ্দ ছেঁটে দেওয়া হল। অনগ্রসর, অর্থনৈতিকভাবে দুঃস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও বরাদ্দ ছেঁটে দেওয়া হল। ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ ছিল ২২৮৭ কোটি টাকা, সেটা কমিয়ে ১২২৭ কোটি করা হয়েছে।
  • উজ্জ্বলা প্রকল্পে ১৪.৯ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হয়েছে। ভেবেছিল কেউ ফাইন প্রিন্ট পড়বে না। কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেস ফাইন প্রিন্ট পড়ে, সত্য যাচাই করে।
  • কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বরাদ্দ ২.৬শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হল। বিদ্যুৎ ক্ষেত্র নিয়ে কত কিছু বলা হচ্ছে। কিন্তু, বাজেটে ৪.৪ শতাংশ ছেঁটে দেওয়া হচ্ছে।
  • একদিকে ২ একর কম জমি সম্পন্ন কৃষককে ৬০০০ টাকা দেবে তিন ভাগে নতুন সরকার, কিন্তু, বাহবা কুড়োবে মোদী সরকার। মধ্যবিত্তকে খুশি রাখার জন্য আয়করের সীমা বাড়িয়ে আড়াই লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ করা হল। কিন্তু, সেটির বাস্তবায়ন কে করবে? এখন ড্রাম পেটাচ্ছে যদি ভোট পাই। তথ্য নিয়ে খেলা করছে এই কেন্দ্রীয় সরকার।
  • স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশনের চেয়ারম্যান ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করলেন। তিনি আজ টিভিতে বলছেন, আমরা রিপোর্ট তৈরী করেছিলাম ৬.১ শতাংশ হারে বেকারত্ব বেড়েছে। সেই রিপোর্ট এই সরকার প্রকাশ করতে দিলনা বদনামের ভয়ে। তথ্য বিকৃত করা হচ্ছে।
  • এখনও কিছু কিছু সংবাদপত্রের মধ্যে সেই ক্ষমতা আছে যারা সেই রিপোর্টটি বের করে দিয়েছে। এখন ঝুলির থেকে বেড়াল বেরিয়ে গেছে যে ৬.১% হারে বেকারদের সংখ্যা বেরেছে যা আজ ৪৫ বছরে কখনও হয় নি। ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। এটা কি ওরা লকোতে পারবে?
  • রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্ণর তার সময় শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করলেন কেন? সবাই জানে তার ঘাড়ে চেপে থেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা হচ্ছিল, সিবিআই-র ডিরেক্টারকে রাত ১২টার সময় তাড়িয়ে দেওয়া হল। যেখানে হাত দিয়েছে একই চিত্র।
  • ব্যাঙ্কের নাকি বিরাট পুনর্গঠন হয়েছে আজকের বাজেটে শুনলাম? নন-পারফর্মিং অ্যাসেটস যা ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে একটা ইঙ্গিত দেয়, তা ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা ২০১৪ সালে। তা নিয়ে সবাই আমরা খুবই চিন্তিত ছিলাম যে এত টাকা ঋণ শোধ হয়নি, ব্যাঙ্কগুলির হবে কী? আজকের ছবিটা কী? সেই এনপিএ ১০ লক্ষ কোটি; পাঁচ বছরে পাঁচ গুণ।
  • বাজেটে শুনছি তিনটে ব্যাঙ্ক নাকি তাদের স্বাস্থ্য ফিরে আসার জন্যে নতুন জায়গায় পৌঁছে গেছে। মিথ্যে কথা, অসত্য। মানুষ বিশ্বাস করবে এনপিএ-র তথ্য দেখার পরে?
  • তথ্য-র ক্ষেত্রেও একই প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন স্বয়ংশাসিত সংস্থা – যেমন রিজার্ভ ব্যাংক, সিবিআই, স্ট্যাটিসটিকাল কমিশন – সব জায়গায় একই ছবি, কন্ট্রোল করে রাখো। এত ফ্যাসিবাদী বক্তব্য, সব কিছুই কন্ট্রোল করবে।
  • এটা একটি অদ্ভুত, হতাশাজনক বাজেট। ডুবে যাওয়ার আগে ওই খরকূটো ধরে কোনওরকমে যদি বাঁচি। তবে সাধারণ মানুষ কি বাঁচতে দেবে? কৃষক যে ধাক্কা খেয়েছিল, তারা কি তা ভুলে গেছে? নোটবন্দি-র কথা মানুষ কি ভুলে গেছে? জিএসটি-এ ক্ষেত্রে ছোট-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কি ভুলে গেছে? গুজরাটে চেম্বার অফ কমার্স এক মাস আগে বলেছে ৪০% ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে সুরাটে।
  • তাই এই ধরনের জুমলা দিয়ে বাজেট তৈরি করে রাজস্বে অনিয়ম করা। রাজস্ব ঘাটতি সর্বমোট লক্ষ্য ছিল ৩.৩%, তিনি নিজেই স্বীকার করলেন তা ৩.৪% উঠে যাবে।
  • বাজেটের বক্তৃতা পড়লে খুব সুন্দর লাগবে; যেই গভীরে যাবেন তখনই দেখবেন প্রহসনযোগ্য। আসলে মানুষের যা সব প্রকল্প তা সব ছেঁটে দিয়েছেন আর যা করছে তা একটা দেখনসই, যে আমরা মানুষের জন্য করছি।
  • ভারতের একসময় প্ল্যানিং কমিশন ছিল। নীতি আয়োগ আজকে তথ্য সম্বন্ধে কথা বলছে। তাদের সাথে তথ্য-র কী সম্পর্ক? তা তো অর্থ কমিশন বলবে, স্ট্যাটিসটিকাল অফিস বলবে। তা না। নীতি আয়োগের এক কর্তা আছেন; তিনি সরকারকে সাপোর্ট করেন। তার মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এর জবাব দেবে, ২০১৯-র নির্বাচনে, তারা সরাসরি বুঝিয়ে দেবে সত্যটা কোথায়।
  • বাংলায় কৃষকের আয় তিনগুণ হয়েছে তার তথ্য কেন্দ্রীয় সরকার চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি তারা সেটা জানে।
  • আমি মনে করি এটা একটি প্রহসনের বাজেট । সত্যি হচ্ছে তলিয়ে যাওয়ার আগে খড় কুটো ধরার ব্যর্থ চেষ্টা।

ফাইল চিত্র