ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
স্বৈরাচারী মোদী সরকারের পরিবর্তন চাই: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ কলকাতার নজরুল মঞ্চে দলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের তৈরী হওয়ার বার্তা দেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভয়ানক। তিনি বলেন যে আগামী দিনে দিল্লিতে পরিবর্তন চাই।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ:
যাদের কাজ নেই তারা না করে কোন কর্ম, সারাক্ষণ বকবক করাই তাদের ধর্ম।
দূরদর্শন থেকে শুরু করে সব এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করে, প্রজেক্টের টাকায় শুধু নিজের প্রচার করছে।
চাকরির নিরাপত্তা থেকে দেশের নিরাপত্তা, কৃষকদের স্বার্থরক্ষা থেকে কর্মসংস্থান, নোটবন্দি থেকে পুলওয়ামা – প্রতিটি ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে গত ৫ বছরে আমরা এক বিপর্যস্ত ভারতবর্ষকে দেখলাম। এটা ভয়াবহ-ভয়ার্ত।
ভয়ানক এক গর্ধশক্তি বিষাক্ত হয়ে ক্ষমতায় এসে বসে আছে, ভারতবর্ষকে উপড়ে ফেলেছে। ভারতবর্ষের ঐক্য, ঐতিহ্য, সংসদ, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো, সংবিধান, ইতিহাস সব কিছুর পরিবর্তন করে দিয়েছে। পুরোটাই আরএসএস মার্কা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মার্কা।
এরা উগ্র দানবীয় এক বিদ্বেষী শক্তি যাদের দেখলে আঁতকে উঠতে হয়, ভয় পেতে হয়। এত ভয়াবহ রাজনৈতিক দল ভারতবর্ষে কখনো ক্ষমতায় আসেনি। এরা হিটলারের চেয়েও অনেক বড় – এই পরিস্থিতির মধ্যে আজ দেশ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
কাউকে ছাড়ছে না – যেই তাদের বিরুদ্ধে একটা কথা বলছে, সে যদি কোন সাংবাদিকও হয় তাকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে (ফেসবুক-টুইটারে), তার বাড়িতে ফোন করে, লোক পাঠিয়ে শাসানো করা হচ্ছে।
আজ আমরা এমন এক দেশে বাস করছি যেখানে আইন বলে কিছু নেই। বাংলার রাজনৈতিক দলগুলি এর মর্ম বুঝতে পারবে না কারণ তারা বাংলায় ভালো আছে। তাদের কোন সমস্যা নেই, কারণ আমরা বলেছিলাম বদলা নয় বদল চাই – আমরা কোন বদলা নিই নি। কিন্তু তারা আমাদের গালি দেন। কিন্তু মনে রাখবেন বাংলায় আমরা যা করি অন্য কোথাও তা হয় না।
বিজেপি সঙ্গে আঁতাত করে, সমঝোতা করে কখনো কেউ বেঁচে থাকতে পারে না। একদিন না একদিন মুখোশ খুলে পরবেই। সব চোরগুলো-ডাকাতগুলো এক হয়েছে। সব সিবিআইপন্থী গুলো, ইডিপন্থী গুলো, গদ্দারপন্থী গুলো একজোট হয়েছে।
রাজনীতিতে সামান্য সৌজন্যবোধ নেই। আমরাও ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করেছি। বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে আমরা এমন কোন কটু বক্তব্য করি না যা নিয়ে ভবিষ্যতে বিতর্ক হতে পারে।
এরা এক একজন ভুঁইফোড় – কোন কাজে লাগে না। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মাথায় ফেটি বেঁধে তিলক কেটে নিচ্ছে। এরা রামকৃষ্ণ মিশন বা ভারত সেবাশ্রমের সাধু নয়। একটা ছোট মন্দিরে যে পুজো করে তাকেও আমি সম্মান করি। কিন্তু এরা না সাধু না সন্ত। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আদি অনন্ত চুরিতে ভরা। সাধুর নাম করে গেরুয়া পরে রাতে কি করে বেড়াচ্ছে?
সবাইকে সতর্ক পাহারায় থাকুন। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, এই ধরণের কোন অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাবেন। পুলিশ অ্যাকশন না নিলে আমার বাড়িতে চিঠি দিয়ে যাবেন। যদি দেখেন কেউ দাঙ্গা করছে, কুৎসা করছে, টাকা বিলোচ্ছে ছেড়ে দেবেন না, নির্বাচনে টাকা বিলোনো বেআইনি।
সংসদে আমাদের সাংসদদের পারফর্মেন্স বেস্ট। তারা এতো কিছুর মধ্যেও মাথা উঁচু করে কাজ করেছে, যেই কোন কথা বলেছে তার বিরুদ্ধে সিবিআই লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সারাজীবন মার খেয়ে রাজনীতি করার পরও আমার আঁকা নিয়ে এরা প্রশ্ন করে? হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে যারা রাজনীতি করছে তারা আজ বাংলার দিকে আঙুল তুলছে।
১৯৯৫ সাল থেকে আমি নির্বাচনী সংস্কারের কথা বলে আসছি নির্বাচন কমিশনকে। আমরা পারি না তাই আমরা চাই নির্বাচন কমিশনই সব খরচ করুক। কেউ কেউ কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ইলেকশনের জন্য যে ফান্ড দরকার সেই টাকাটা নির্বাচন কমিশনকে দিলে রাজনৈতিক দলগুলি আর ইচ্ছেমতো টাকা খরচ করতে পারে না। দেখা গেছে, যে দল বেশি টাকা খরচ করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনরকম অ্যাকশন নেওয়া হয় না, এটা একটা বড় সমস্যা।
গত ৫ বছর ধরে একটা সরকার সবাইকে ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখে দেশের সর্বনাশ করে দিয়েছে, কেউ আজ গর্ব করে বলতে পারবে না যে আগামীদিনে ভরতবর্ষ কোনদিকে এগোবে
আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, বৈদেশিক নীতি, ইন্সটিটিউশনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একটা অধঃপতন শুরু হয়েছে। মানুষে মানুষে বিদ্বেষ-ঘৃণা তৈরী করা হয়েছে, যা কোনদিন ভারতবর্ষে ছিল না।
হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ফেক সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক তৈরী করা হয়েছে। ফেক টুইটার, ফেক পোস্টের – লন্ডনের, বাংলাদেশের, উত্তরপ্রদেশের ছবি নিয়ে বাংলায় লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরোটাই মিথ্যের ওপর চলছে। এমন অবস্থায় আপনাদের আরও সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে।
সিপিএম কার সাথে ভাব করবে, কংগ্রেস রাজ্যস্তরে কি করবে আমাদের দেখার দরকার নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জগাই-মাধাই-বিদায় ৩ জনে একসাথে কাজ করেছে, আবারও করবে।
৫০ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করেও সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সাথীর আওতায় এনেছি।
২ টাকা কিলো চাল, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, রূপশ্রী চালু হয়েছে। মৃত্যুর পরও ২০০০ টাকা দেওয়া হয়। কৃষকদের চাষ করার জন্য বছরে ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। ফসল নষ্ট হলে টাকা দেওয়া হচ্ছে, কৃষিজমির খাজনা, মিউটেশন ফি মুকুব করে দেয়া হয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির মিউটেশন ফি মুকুব করা হয়েছে।
কাউকে বোরখা পরিয়ে বলছে ছেলেধরা এসেছে – এইভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে হিন্দুদের। এলাকায় ছেলেধরা গুজব রটিয়ে ভাঙচুর – সন্ত্রাস – তান্ডব চালাচ্ছে। কোনও গুজবের খবর পেলে, থানায় জানান।
বেহালায় রাত্তিরে বাইক মিছিল বের করেছিল তান্ডব করার জন্য। গুন্ডা ডাকাতরাই রাত্তিরে তান্ডব করে। এদের তাড়া করতে হয়, পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে হয়।
আমরা যদি ৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে সরাতে পারি, ৫ বছরের মোদী নামক স্বৈরাচারী সরকারকে সরাবোই সরাবো।
বাংলা চায় বিজেপি যাক, দেশ থাক। বাংলা চায় বিজেপি যাক, মানুষ থাক। বাংলা চায় বিজেপি যাক, কৃষক থাক। বাংলা চায় বিজেপি যাক, ছাত্র-যুব থাক। বাংলা চায় বিজেপি যাক, সব ধর্ম থাক। বাংলা চায় বিজেপি যাক, সব সম্প্রীতি থাক। বাংলা চায় বিজেপি যাক, দেশে ঐক্য থাক।
ওরা ক্ষমতা থেকে চলে গেলে, সর্ষে থেকে ভূত বেরিয়ে পড়বে। কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারির কথা জানতে পারবে।
চারপাশে একটা ঘৃণার ঝড় তুলেছে, যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। একটা সরকার চালাচ্ছে জগাই মাধাই – দাঙ্গা করে অভ্যস্ত দুই ভাই দেশ চালাচ্ছে।
আগে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলে সঙ্গে সাংবাদিকরা যেত। এখন কোনও সাংবাদিককে নিয়ে যাওয়া হয় না।
একটা কেউ নেই প্রতিবাদ করার। একটা লোকও ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারল না। একটা লোকও ভয়ে প্রতিরোধ করতে পারল না। একমাত্র আমরা প্রতিবাদ করলাম, প্রতিরোধ করলাম। তাই আমাদের প্রতি ওদের এত জ্বালা। আমরা প্রতিবাদ করেছি, ঠিক করেছি। আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে এদের জবাব দেব।
ভারতবর্ষে আগামীদিন পরিবর্তন চাই চাই চাই। মোদী-অমিত শাহের বিদায় চাই চাই চাই। বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও। ব্রিগেডে আমরা বলেছিলাম ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ।
সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পর পুলওয়ামাতে একটি দুর্ঘটনা ঘটল। আমরা সকলেই এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করি। শোকার্ত পরিবারদের সমবেদনা জানাই। যখন ঘটনা ঘটেছিল, মোদীবাবু তখন কোথায় ছিলেন?
পুলওয়ামাতে ঘটনা যে ঘটবে আপনি তো আগে থেকেই জানতেন। সরকারের কাছে তো ইন্টেলিজেন্সের তথ্য ছিল। তাহলে কেন সেদিন জওয়ানদের প্লেনে করে না এনে, নাকা চেকিং না করে, রাস্তা সুরক্ষিত না করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন? ভোট আসছে তাই রাজনীতি করবেন বলে? জওয়ানদের রক্ত দিয়ে ভোটের রাজনীতি হয়না, হবে না। একজন মানুষ সকলকে প্রতিবার বোকা বানাতে পারে না। ছায়া যুদ্ধ, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, দেশে দাঙ্গা-যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে শান্তি পুরষ্কার নিচ্ছেন!
কর্মীরাই তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পদ। নেতা সেই হয়, যে সকলকে নিয়ে চলে। নেতা গাছ থেকে পড়ে না, কাজের মধ্যে দিয়ে তৈরী হয়।
এই বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। ইভিএম যন্ত্র ট্যাম্পার করার অনেক চেষ্টা করবে, বাংলার মেশিনগুলি ম্যানিপুলেট করতে কোনও এক সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে। বলছে যে, ২৩টা পাব, ২৪টা পাব, ভাবছে ইভিএম ট্যাম্পার করে করবে। আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব নেব।
যারা ভিভিপ্যাট যন্ত্রের ব্যবহার জানে, এমন লোককেই কাউন্টিং-এ নেবেন। দরকার হলে ব্লক প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে নিয়ে তাদের আগে প্রশিক্ষণ দেবেন।
ম্যাডি বাবুর দিন শেষ। ঔদ্ধ্যত্যের দিন শেষ। গদ্দারদের দিন শেষ। বিদায় ঘন্টা বাজছে, পরিবর্তন আসছে।
বাংলা ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে। বাংলা তো এগিয়ে গেছেই, এবার বাংলা বাকিদের এগিয়ে দেবে।
নৈতিকভাবে এত অধঃপতন আমি বিজেপি ছাড়া আর কোনও দলের দেখিনি। এদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে হবে।
৪২শে ৪২ পেতে হবে আমাদের।