সাম্প্রতিক খবর

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯

আমরা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছি আর বিজেপি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

পুলওয়ামাতে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমরা সকলেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছি, বিরোধীরা একসাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলিনি কারণ আমরা মনে করেছি সবাই আমরা একসাথে লড়াইটা লড়ব।

সন্ত্রাসবাদীরা আমার দেশকে দখল করবে না, তারা কোনরকম পাত্তা পাবে না। আমার দেশের মাটিটা রক্ষা হবে।এই একটা শর্ত আমাদের সকলের কাছে আছে। সুতরাং, আমরা কারো কাছে দেশপ্রেম শিখব না।

৪৮ ঘন্টা ধরে আমি লক্ষ করছি একটা প্রবণতা শুরু হয়েছে, কখনো কোন সাংবাদিককে সোজা বলা হচ্ছে you are not patriot, go out বলে তাকে মিছিল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, লন্ডনের এন আর আই মিছিলে এই ঘটনা ঘটেছে। এন ডি টিভির আর একজন সাংবাদিককেও এভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। এমনকি আরও কয়েকজন সাংবাদিককে anti national বলে আক্রমণ করা হয়েছে। বারখা দত্তকেও বলা হয়েছে।

হঠাৎ দেখছি গত ২ দিন ধরে রাত্রিবেলা ১২টা – ১টায় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ নিয়ে আর এস এস এর কিছু প্রচারক, বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কিছু লোক রাস্তায় বেরোচ্ছে যারা মানুষকে ঘৃণা করতে শেখায়। এই সাম্প্রদায়িক সংগঠন রাস্তায় বেরিয়ে প্যানিক তৈরী করছে। গতকাল বেহালায়, বনগাঁয় এই ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে, আমার কানে এসেছে।
শ্রীরামপুরে কোন এক সম্প্রদায়ের একটা জলসা চলছিল, গতকাল সেখানে আর এস এসের মিছিল নিয়ে গিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন রকম ঘটনা ঘটানো হচ্ছে এবং আর এস এসের প্রচারকরা যারা আউট সাইডার, ওরা বাংলার নয়, ওরা এই সুযোগে হিন্দু-মুসলমান-শিখ-খিস্তান দের মধ্যে দাঙ্গা লাগিয়ে দিচ্ছে।

কয়েকদিন আগে আমেরিকার ইন্টেলিজেন্স বলেছিল যে তারা একটা উপদেশ দিয়েছে যে নির্বাচনের নাম করে ভারতবর্ষে দাঙ্গা হবে, এই নিয়ে সকলকে সতর্ক করেছিল।

এখন দেখছি আমরা চুপ করে বসে আছি আর মোদী জি, আমিত শাহ রোজ ভাষণ দিয়ে বেড়াচ্ছে। আর এমন ভাষণ দিচ্ছেন মনে হচ্ছে তারা একাই দেশপ্রেমিক আর বাদ বাকি সবাই বিদেশী, উগ্রপন্থী। এটা ঠিক নয়।

আমাদের এই মিথ্যে খবর ও গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে এবং এই পরিকল্পিত ঘটনা গুলি ঘটতে দেওয়া চলবে না।

কেন ২০০৫ জনের ৭৮ টি কনভয়কে একসাথে যেতে দেওয়া হল যখন সরকারের কাছে আক্রমণ হতে পারে এই খবর আগে থেকেই ছিল! সরকারের ইন্টেলিজেন্স ইনপুট তাই বলে। কাগজটাও আমার কাছে আছে।

আমার ফোন সবটাই এজেন্সি ট্যাপ করে, আমি অফিসিয়ালি আওনাদের বলছি , আমি প্রমাণও পেয়েছি, ঠিক সময়মত আপনাদের সেটা দিয়ে দেব।

এই ঘটনাগুলো তো মিথ্যে নয়, আমাদের কাছেও ইনফরমেশন আছে। ইনফরমেশন আছে যে এই ঘটনাগুলো যে ঘটবে তা আগে থেকে জানাই ছিল। সরকারের কাছে ৮ তারিখ, ১৩ ও ১৫ তারিখের নোটিস ছিল, যেহেতু ১৪ তারিখ ঘটনাটা ঘটে গেছে তাই আর কিছু করা যায়নি। কিন্তু ঘটনাটা যে ঘটবে তা নোটিফিকেশনে ছিল। আমি ডকুমেন্ট ছাড়া কথা বলি না।

কেন আগে ঠিকমত অ্যাকশন নেওয়া হয়নি? কেন এতগুলো লোককে মরতে হল? সরকারের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চে রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও কেন একসাথে এতগুলো কনভয় একই দিনে গেল? এই প্রশ্নগুলো তো থাকবেই

আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপ নিতে।

তোমরা পাকিস্তানকে এটা করতে দিলে কী করে? গত পাঁচ বছরে কোন ব্যবস্থাটা নিয়েছ? এখন যখন ভোট এসে গিয়েছে তখন মনে হল যে দেশে আরেকবার যুদ্ধ বাঁধানো দরকার? মানুষের জীবন নিয়ে খেলা দরকার?

আর আমি আশা করব মিডিয়া আমার কথা বিকৃত করবেন না। এগুলো খব সংবেদনশীল বিষয় কারণ মিডিয়া একটা গুরত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করছে। আমি তার জন্যে তাদের-কেও সম্মান জানাই। তাই আমি অনুরোধ করব , এমন কোনও পরিবেশ বানাবেন না যেটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে।

বিজেপি, আরএসএস এবং ভিএইচপি দেশে শান্তির বদলে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াচ্ছে। তারা জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হলে, এইরকম সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াচ্ছে কেন? আমি জানতে চাই। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিজেপির নেটওয়ার্কের ছড়ানো এইসব উস্কানির ফাঁদে পা দেবেন না।

আমি এতদিন চুপ করেছিলাম কিন্তু এখন একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। ওরা এরকম প্ল্যান করে দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছে তাই আমাকে এই নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।

আমি এখন কোনরকম রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দেব না। বর্তমানে সমস্ত বিরোধীরা একজোট হয়েছি। আমাদের কোনও বৈঠক হলে, আমরা আমাদের বক্তব্য জানাব এই বিষয়ে। আমি এই মুহূর্তে আলাদা করে কোনও মন্তব্য করলে সেটা দৃষ্টিকটু লাগবে। কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলে, সেখানে আমি বক্তব্য জানাতে পারি।