সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
সিঙ্গুর ফিরেছে শস্যের ভাণ্ডারে

দুই বছর আগে অর্থাৎ ৩১শে আগস্ট ২০১৬ তারিখে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’আখ্যা দেন। মহামান্য আদালত বর্তমান তৃণমূল সরকারকে নির্দেশ দেন কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ ১০ বছরের অক্লান্ত সংগ্রামের এক মধুর সমাপতন ঘটে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানান। তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে ঘোষণা করেন রাজ্যের সব ব্লকে সিঙ্গুর উৎসব পালিত হবে। ২রা সেপ্টেম্বর রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা মিছিল বার করেন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। বিধান সভায়ও ‘সিঙ্গুর বিজয় দিবস’ পালন করা হয়।
সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের চাষিদের হাতে জমির পরচা ও ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন। প্রায় ৯১১৭টি পরচা তুলে দেওয়া হয়। প্রায় ৮০০ জন অনিচ্ছুক কৃষকদের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার অন্যান্য মন্ত্রীরা। সিঙ্গুরের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রথম দফায় ৯১১৭টি পরচা তুলে দেওয়া হয়, আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে জমি চাষযোগ্য করে ফেরত দেওয়া হবে। সরকার চেক বাঁধ ও ছোট টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করছে সিঙ্গুরে সেচের জন্য।” তিনি আরও বলেন, জমি পরীক্ষার কাজ চলছে এবং এই জমিকে উর্বর ও চাষযোগ্য করে তুলতে যা সার লাগে, সব চাষিদের প্রদান করা হবে।
১৭ই অক্টোবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ২০ই অক্টোবর থেকে শুরু করা হবে ও ১৫-২০ দিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। ২০শে অক্টোবর যে জমি বামফ্রন্ট সরকার কেড়ে নিয়েছিল, সেই জমিতে সরিষার বীজ ছড়িয়ে পুনরায় চাষ করা শুরু করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
নভেম্বর মাসের মধ্যে জমি হস্তান্তরের কাজ শেষ হয়। জমিতে আলু উৎপাদন হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসেই। এই আলুর জন্যই সিঙ্গুর বিখ্যাত সারা বিশ্বে।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রায় ২৩০ একর ধান জমিতে ফলন হয়েছিল। তিল, ভুট্টা, শসা ও কলার চাষও শুরু হয়েছে। রবি ও বোরো শস্যও ফলন হচ্ছে সিঙ্গুরে। জৈব সার ব্যবহার করতেও উৎসাহ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার বীজ ও সার দিয়েছিল কৃষকদের। এছাড়া, নতুন যন্ত্রপাতি কেনা ও চাষের সহযোগিতা করতে অতিরিক্ত লোকের জন্য ১০,০০০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছিল।
রাজ্য সরকারের এই সকল পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে সিঙ্গুর আবারও শস্যের ভাণ্ডারে নিজের জায়গা ফিরে পেয়েছে।