ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
আগামী সপ্তাহে দিল্লীতে প্রতিবাদ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ধর্মতলায় ‘সেভ ইন্ডিয়া’ ধর্না তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু সংবিধান ও গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই চলবেই, জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন যে দিল্লীতে আগামী সপ্তাহে (ফেব্রুয়ারি ১৩-১৪) প্রতিবাদ সভা আয়োজিত হবে।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ:
আমরা ওমর আবদুল্লাহ থেকে মেহবুবা মুফতি, বাবুলাল মারান্ডি থেকে হেমন্ত সোরেন, হার্দিক প্যাটেল থেকে জিগ্নেশ মেভানি, স্টালিন থেকে তেজস্বী যাদব, বিজেডি দল, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই সমর্থন করার জন্য।
আমরা প্রত্যেকটি সমিতি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতি জগতের মানুষদের ধন্যবাদ জানাই আমাদের সমর্থন করার জন্য।
এটা তৃণমূল দলের ধর্না ছিল না, কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, সেটা আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি। এই ধর্না ছিল আমাদের গণতন্ত্র, সংবিধান, আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো,আই এ এস এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক অফিসারদের বাঁচানোর জন্য।
আমরা যখন এই লড়াইটা সবাই মিলে লড়ছি, তখন আমি একা এই সমস্ত রাজনৈতিক দলের পরামর্শ না নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।
আমরা চন্দ্রবাবু নাইডুজি-র সাথে পরামর্শ করেছি, তেজস্বী-র সাথে করেছি। দেবগৌড়া-জি সকালে আমার সাথে কথা বলেছিলেন।
এই ধর্না বাংলার মানুষের জয়। এটা ভারতের সাধারণ মানুষের জয়।এটা আমাদের গণতন্ত্র, সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জয়।
আজকে সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ মানুষের জন্য, তাদের স্বার্থে একটি যথার্থ রায় দিয়েছে। আমরা এখানে ধর্না তুলে নেওয়ার সিধান্ত নিয়েছি। কিন্তু আগামী সপ্তাহে দিল্লীতে আমাদের প্রতিবাদ সভা আয়োজিত হবে।
আমি আগেও ধর্নায় বসেছি, কখনও ২১ দিনের জন্য (বন্দি মৃত্যুর প্রতিবাদে), কখনও ২৬ দিনের জন্য (সিঙ্গুর আন্দোলন)। আমি এখনও চালিয়ে যেতে পারি, কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির অনুরোধে আমি এই ধর্না তুলে নিচ্ছি।
আজকে আমরা গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ থেকে সুবিচার পেয়েছি। আজকে আদালত পরিস্কার বলে দিয়েছে যে কোনওরকম গ্রেফতার করা যাবে না। ওরা বলেছেন যে ওনারা একটি নিরপেক্ষ বৈঠক করবেন। আমরা সেটা মেনে চলব। আমাদের পুলিশ ইতিমধ্যেই সুপ্রীম কোর্টের অর্ডার অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
আমি শুনলাম রাজনাথ সিং, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, চিঠি লিখেছেন রাজ্যপালকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানতে চান কেন রাজীব কুমার ধর্নায় অংশ গ্রহণ করেছেন? তিনি কখনওই যোগ দেন নি। রাজ্য, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক স্তরের মিডিয়া এখানে আছে। আপনারাই বলুন,- ধর্না মঞ্চে তিন দিন ওনাকে কি আমার পাশে দেখেছেন? তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার কেন এই পুলিশ অফিসারকে এত ভয় পাচ্ছে?
আমি জানি তাদের রাতের ঘুম চলে গেছে, রাজীব কুমার ওদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজীব কুমার কেন্দ্রীয় সরকার আর বিজেপি দলের হয়ে দালালি করেনি বলেই কি তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে? এসব কি হচ্ছে? ওরা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছে।
মনে রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রধাণমন্ত্রী, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি এদের সবাইকে সুরক্ষা দেওয়াই পুলিশের কাজ। এটাই আইন। এমনকি নির্বাচনের সময়ও এসপি, সিপি সহ সবাই এদের পাশে থাকে। আমি মুখ্যমন্ত্রী, তাই আমার পাশেও ছিল, ওরা কি কথা বলতে পারবে না? এটা শুধু রাজনৈতিক ধর্না মঞ্চ নয়। এর পাশেও মন্ত্রীদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করার জন্য আলাদা ঘর আছে।
ওরা যা করছে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ওরা সমস্ত এজেন্সিগুলোকে, এমনকি রাজ্যের এজেন্সিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলছি। দিল্লীর গদি ছেড়ে গুজরাটে ফিরে যান। ওখানে গিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান।
আপনি দেখছি রাজ্যপ্রশাসনকেও দখল নিতে চাইছেন, আইন-শৃঙ্খলা, কৃষি, শিক্ষা – আপনি সব কিছু কুক্ষিগত করতে চান! একনায়কতন্ত্রর সরকার চলছে। একদলীয় শাসন চলছে। আপনাদের দেখছি গনতন্ত্রের কোনও দরকার নেই।
রাজ্য সরকারের একটা এক্তিয়ার যেমন আছে, কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন একটা এক্তিয়ার আছে। আমরা কখনই অন্যের দপ্তর বা কাজে হস্তক্ষেপ করি না। আমরা সকলকে সম্মান করি। এটাই আমাদের সংবিধানে আছে। কিন্তু ওরা সব এক করে দিচ্ছে, যা খুশি, তাই করছে। ওরা আইপিএস, আইএএস অফিসারদেরও ছাড়ছে না! মিডিয়াগুলোকেও ছাড়ছে না।
ওরা কি চাইছে! একমাত্র মোদি এই দেশে থাকবে, আর কেউ এই দেশে থাকবে না? আমরা মোদি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেই ছাড়ব।
আমরা চাই নৃশংসতা বন্ধ হোক। অনেক নৃশংসতা হচ্ছে। আমরা একসাথে লড়াই করব। আমরা শুধুমাত্র সংবিধান মেনে চলব, আইন মেনে চলব। আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক।
আমার লক্ষ লক্ষ পুলিশ ফোর্স আছে, তারা দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচনের সময় এসপিজি প্রধানমন্ত্রীর সাথে যায় কি যায় না। রাজনৈতিক সভায় যায় কী যায় না? আর আমাদের সরকারের পুলিশ এখানে কথা বলতে আসতে পারবে না? কী কালো আইন দেশ কে শেখাচ্ছেন?
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুলিশ আসতেই পারে, মুখ্যমন্ত্রীকে সুরক্ষা দেওয়া, সাধারণ মানুষে কে সুরক্ষা দেওয়া তাদের দায়িত্ব। কিন্তু এটা ঠিক নয়। একটা চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে, চিঠির জবাব আমরা কাল দিয়ে দেব, চিন্তা করবেন না, কিচ্ছু হবে না। কোনও মূল্য নেই, ভিত্তিহীন, মূল্যহীন।
এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক, খুব খারাপ। ওরা পাগল হয়ে গেছে। ওদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমরা আবার পরের সপ্তাহে দেখা করছি।