সাম্প্রতিক খবর

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯

দেশের স্বার্থে আমি নিজের জীবন দিতেও রাজিঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দিল্লীর যন্তরমন্তরে আপ আয়োজিত ‘তানাশাহী হঠাও, দেশ বাঁচাও’ সত্যাগ্রহে বক্তব্য রাখেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যে তিনি নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহকে ‘দুই গব্বর’ বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি আরও বলেছেন দেশের স্বার্থে তিনি নিজের জীবন দিতেও রাজি।

এর আগে সকালে তিনি সংসদে গিয়েছিলেন, সেখানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তিনি প্রার্থনা করেন ভারতীয় সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু বিষয়ঃ

নরেন্দ্র মোদীর সরকার চলে যাওয়ার পর রামলীলা ময়দানে আমরা সভা করব

অনেক নেতা অনেক কথা বলেছেন, আমি সেই একই কথা বলব না

আজ নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সময়সীমা শেষ হল। আজ লোকসভার শেষ দিন ছিল। এক্সপায়ারি ডেট ওভার হয়ে গেল

আর ১ মাসের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ জানা যাবে, তখন মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট শুরু হয়ে যাবে। মোদীবাবু আর যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন না।

জন্য মামলা, খুন, দাঙ্গা, ঘরে ঘরে আগুন লাগানোর, দেশকে বিক্রি করা আর বেশিদিন করা যাবে ন । তাই এত ভয় পাওয়ার বা ভাবার কোন দরকার নেই

যে ভয় পায় সে মরে যায়, যে লড়ে সেই জেতে। আমরা লড়ে জিততে জানি। কি করবে ওরা? মেরে ফেলবে? এজেন্সি লাগিয়ে দেব? জেলে পাঠিয়ে দেবে? আমি দেখতে চাই ওদের কত জেল আছে

মিডিয়া কিছু বলতে পারে না তাই চুপ করে থাকে। কিছু বললেই এজেন্সি পাঠিয়ে দেবে। কি করবে বেচারা? কিছু করতে পারে না

আমি সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে কোট করছি, গতকাল ওনার একটা টুইট দেখলাম, উনি বলেছেন ২টো টিভি চ্যানেল আছে যারা বিজেপি অফিস যা বলে তাই করে। বিজেপির সদস্যই একথা বলছে, আমি না

আর বি এই এর গভর্নর রেজিগনেশান দিয়ে চোলে গেছে, সিবিআইকে শেষ করে দিয়েছে। ওরা যদি থাকে তাহলে আপনার ব্যাঙ্কে রাখা টাকা আপনি ফেরত পাবেন না, লুঠেরা সব লুঠ করে নিয়ে যাবে

আমাদের ফোনের সার্ভিলেন্স তো আছেই, মিডিয়ার লোকজনের ফোন, বিজেপির কর্মী, নেতা, সেক্রেটারি থেকে শুরু করে আইপিএস, আইএএস – সব অফিসারদের ফোনেও আছে, ও কাউকে বিশ্বাস করে না

মধ্যপ্রদেশে ব্যাপম কেসে পুলিশকে মেরেছে, উত্তরপ্রদেশের একই ঘটনা, যে পুলিশ তদন্ত শুরু করছিলো তাকেই মেরে দিল।

আমাদের বাংলায় গিয়ে বলছে ডিপার্টমেন্টাল ইনকোয়ারি হবে, পুলিশ অফিসারদের মেডেল কেড়ে নেবে, কটা মেডেল দিয়েছে ওরা? এতো অডাসিটি হয়ে গেছে? ক্ষমতা দেখাচ্ছে? পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই পাঠিয়ে দিচ্ছে? আমি অনেক সরকার দেখেছি কিন্তু এরকম নীচ সরকার কখনো দেখিনি

আমিও জীবনে অনেক লড়াই করেছি। আমরা সবাই চোর আর আপনারা সবাই সাধু? কোথা থেকে এসেছেন?

আমরা চাই যে যেখানে শক্তিশালী সেই সেখান থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। বাংলায় আমরা শক্তিশালী, আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ব। অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লিতে আপ, উত্তরপ্রদেশে বি এস পি, সমাজবাদী পার্টি অজিত সিং-র দল লড়াই করবে।

আমি ফারুক আবদুল্লাজি-র কথা পুরো সমর্থণ করে বলছি বড় কাজের জন্য কাউকে কাউকে কখনও বলিদান দিতে হয়।

কংগ্রেস তুমি মধ্য প্রদেশে শক্তিশালী, তুমি লড়, তোমরা রাজস্থান, ছত্তিসগড়ে শক্তিশালী, তোমরা লড়। কিন্তু আমার যেখানে শক্তি বেশি সেখানে বিজেপি-কে জেতানোর জন্য ভোট কেটো না।

আমার তো কংগ্রেস, বিজেপি আর সিপিএম-র সাথে লড়াই করা অভ্যেস হয়ে গেছে। আমাদের ওখানে ওরা একসাথে আমাদের বিরুদ্ধে লড়ে। আমার সাথে জোট হলেও ট্রান্সফার করবে না। আমি এই নিয়ে ভাবি না। যত লড়ুক না কেন, ৪২-টায় ৪২-টাই আসবে আমাদের নামে। এটা আমি বিশ্বাস করি।

আপনাদের এখানে সাতটা আসন আছে, আপনারা কর্মীরা এমন লড়াই করুন যে সাতটায় সাতটাই যেন আপনাদের আসে।

আঞ্চলিক দলগুলি এখন আর দুর্বল নয়। আমাদের দলও জাতীয় দল – সর্বভারতীয় তৃণমুল কংগ্রেস। শরদজি-র দলও আছে, বিএসপি আছে, সমাজবাদীরা আছেন, আর অনেক দল আছে।

এখন বিজেপি-র কাছে প্রচুর পয়সা এসে গেছে। একটা মোদীর সভায় কত খরচা হয় জানেন? জিজ্ঞেস করুন? বাইক দিয়ে দেয়, গাড়ি দিয়ে দেয়। হাজার হাজার টাকা দিয়ে দেয়। দিল্লীতে দেখুন দলের অফিস করেছে শপিং মলের মতো। তারচেয়ে বড় পার্টি অফিস খুলে বসেছে। আর তারপর আমাদের গণতন্ত্রের পাঠ দেবেন আর আমরা তা শুনবো?

সবাইকে এমন ভয় দেখাচ্ছে যেন গব্বর সিং এসে গেছে। আগে তো বাচ্চাদের ঘুম পাড়াবার জন্য গব্বর সিং-র উল্লেখ করা হত। আর আজ শিল্পপতিরা বলছে, চুপ করে যা, নাহলে গব্বর সিং ধরবে। মিডিয়াকে বলছে, চুপ করে যাও, নাহলে গব্বর সিং এসে ধুরবে। রাজনৈতিক দলগূলোকে ভয় দেখাচ্ছে। কৃষকদের, যুবকদের ভয় দেখাচ্ছে। এটা কি হচ্ছে?

কত গব্বর সিং আছে? দুজন তো আছে- মোদী আর অমিত শাহ। গুজরাটের ঘটনা আমাদের মনে আছে। আমার তো লজ্জা লাগে যে, যাদের হাতে রক্ত লেগে আছে, তারাই দেশের ক্ষমতায় আছে

আমি এইসব বলছি দেখে কাল দেখবেন আমার ঘরেও সিবিআই-কে পাঠিয়ে দেবে। আমি বলব কবে আসবে বলে দিও, আমি ওদের জন্যে খাবার বানিয়ে রাখব। যা পছন্দ তাই বানিয়ে রাখব।

আমি ভয় পাই না। আমি লড়ি। কফন আমাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে, আমরা কফনের জন্যে অপেক্ষা করে নেই – এটাই আমাদের জীবনের ধর্ম।

এইজন্যেই আমি বলতে চাই যে আসুন, আমরা একজোট হই।

গণতন্ত্র আজ ‘নমোতন্ত্র’ হয়ে গেছে যেন। রাজ্যগুলোকে একটা পয়সা দেবে না অথচ লোকের ঘরে ঘরে চিঠি পাঠিয়ে প্রকল্পগুলো ওরা করেছে বলে দাবী করবে।

ওড়া তো ইতিহাসকে পালটে দিতে চাইছে। সব নাম বদলে দিচ্ছে। এতো জরুরী অবস্থার থেকেও খারাপ।

আগামীদিনে গুজরাটে মোদীকে তাড়িয়ে দেবে। গুজরাট থেকেই তো রাজনীতিতে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি প্রকৃত নেতা। মোদী লিডার তো নয়ই ল্যাডারও নয়। খালি বলে ৫৬ ইঞ্চি ছাতি। আরে রাবনেরও তো ৫৬ ইঞ্চি ছাতি ছিল।

মোদী হঠাও, দেশ বাঁচাও। বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও।

একতা বাঁচাও, বিজেপি হঠাও, নওজোয়ান বাঁচাও। বিজেপি হঠাও। কিসান বাঁচাও, মোদী হঠাও।