সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮
কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল

কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আজ প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল কংগ্রেস। মৌলালি মোড় থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত ছিল এই মিছিল। এছাড়াও, জেলায় জেলায় মিছিল ও মিটিং করা হয় এই ইস্যুতে।
আজই অন্য বিরোধী দল এই একই ইস্যুতে ভারত বনধের ডাক দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল কর্মনাশা বনধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। তাই ইস্যুটি সমর্থন করলেও, বনধে সামিল হয়নি।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু অংশ:
ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে কিছু কংগ্রেস শাসিত, কোথাও আঞ্চলিক দলগুলি রয়েছে, আর বেশিরভাগ জায়গাতেই রয়েছে বিজেপি। বাংলা ছাড়া এই ২৮টি রাজ্যে আজ কি হয়েছে তার খবর আমরা দিনের শেষে পাব। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আজ বাংলা তথা কলকাতা ও সব জেলায় মানুষ বনধকে পরাস্ত করে মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
এই বনধ আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে নষ্ট করেছে। বনধ এর কারণে সিপিএম আমলে প্রায় ৮০ লক্ষের বেশি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। আমাদের আমলে এই সংখ্যাটা কমে হয়েছে শূন্য।
পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রথম দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেসে, তৃণমূল যুব কংগ্রেস, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। দেড়-দু মাস আগে আমরা সভা করেছিলাম উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায়। পার্ক স্ট্রীট মোড়ে সভা হয়েছিল, যাদবপুর থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিল হয়েছিল।
ভারতবর্ষের বুকে যে জনবিরোধী সরকার নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে রয়েছে তারা মানুষের কথা কম চিন্তা করছে, তারা নিজেদের পকেট ভরতে বেশি আগ্রহী। ২০১৪ সালে মানুষ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে।
প্রধানমন্ত্রী ৫০ দিন সময় চেয়েছিলেন। ভারতবর্ষের আমজনতা, খেটে খাওয়া শ্রমিক-কৃষক-মজুররা বিজেপিকে প্রায় ১৫০০ দিন সময় দিয়েছে। ফলস্বরূপ আজ সকালেও ২২ পয়সা দাম বেড়েছে পেট্রোলের, পেট্রোল প্রায় ৮৫ টাকা প্রতি লিটার, ডিজেল প্রায় ৭৪ টাকা প্রতি লিটার, আর ডলার ৭৪ – তিনটের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে যে কে আগে সেঞ্চুরি করবে। এটাই এখন ভারতবর্ষের পরিস্থিতি। এর বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।
প্রথম দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলকে রাস্তায় নামিয়েছিল, কিন্তু আজ যেসব দল বনধ ডাকছে দেড় মাস আগে তাদের পাত্তাও ছিল না।জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যদি কেউ ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা, প্রতিবাদ ও গণ আন্দোলন করে থাকে সেই দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস আর যার নেতৃত্বে হয়েছে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয় নিয়ে কোন দ্বিমত বা সংশয় নেই.
আমরা বলেছিলাম পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি যদি অবিলম্বে প্রত্যাহার না করা হয় আমরা আগামী দিনে ভারতবর্ষের বুকে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো। মেয়ে রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আমরা ৬ ঘন্টা এক অবস্থান বিক্ষোভও করেছিলাম। তারপর আমরা সেদিন পায়ে হেটে যে যার বাড়ি ফিরেছিলাম। তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনরকম পদক্ষেপ নেয়নি, ভারতবর্ষের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।
হিন্দু মুসলমান নিয়ে কথা বলে ওরা মানুষকে ভুলিয়ে রাখছে। ওরা ভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। টাকা গাছে ফলে না, গরিব মানুষকে নিজের জীবন দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে হয়। ২০১৯ এ মানুষ আর আপনাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে না। এটাই আমাদের আজকের শপথ।
কিছু হলেই হিন্দু-মুসলমান, সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলছে। পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ছে, ডলারের দাম এতো, কেন দৈনন্দিন জীবনের জিনিসের দাম বাড়ছে এর জবাব নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপিকে দিতে হবে। আমরা কেউ ছেড়ে কথা বলব না।
ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি আজ ভীত, সন্ত্রস্ত, তাদের ধমকে, চমকে, ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যেতে পারে কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে কোনদিন ধমকে, চমকে আটকানো যায়নি, যাবেও না। আমরা আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো।
গত পরশু দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে আমাদের নেত্রীর নির্দেশিকার কথা জানিয়েছিলেন। সেই মতো সব জেলার সব ব্লকে আজ প্রতিবাদ সভা ও মিছিল হয়েছে। আগামী দিনেও আমরা এই লড়াই থেকে পিছপা হব না।
নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় আসার পর ২ কোটি বেকারের চাকরি হবে। যদি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে পারেন আমরা আর কোনদিন এর বিরুদ্ধে কোন প্রশ্ন তুলবো না – যদি দেখতে পারেন, একটা যুবক-যুবতীর চাকরি হয়েছে নরেন্দ্র মোদির তৎপরতায়।
ওরা বলেছিল গ্রামের রাস্তা করবে, ডলারকে ৩০ টাকায় নিয়ে আসবে। ওরা বলেছিল স্কুল গড়ব, কলেজ গড়ব। বদলে বাংলাকে কিছুই দেয় নি।
কিন্তু তাতে বাংলা পিছিয়ে থাকে নি। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা আজকে উন্নয়নের ধ্বজাকে সামনে নিয়ে চলেছে। প্রত্যেক ক্ষেত্ত্রে যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প সব জায়গায় বাংলা সুপ্রতিষ্টিত হয়েছে।
ওরা সবসময় বলছে রাজ্য কেন কর প্রত্যাহার করছে না। আমি বলছি, গত চার বছরে রাজ্য একবারও কর বাড়ায় নি, কিন্তু সেন্ট্রাল এক্সাইজ বাড়িয়েছে ন’বার।
২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলের দাম ছিল ১২০ ডলার আর এখন ৭০ ডলার। সেই অনুযায়ী আজকে কোলকাতায় পেট্রোলের দাম হওয়া উচিৎ ৪০ টাকা। কিন্তু আদতে তা ৮০ টাকার ওপরে। তাহলে এই বাকী টাকাটা কোথায় যাচ্ছে তার তো জবাব দিতে হবে।আমরা তো ছেড়ে দেব না।
ভারত নাকী সস্তায় পেট্রোল ডিজেল রপ্তাণি করছে অন্য দেশকে। আর দেশের মানুষ তা কিনছে ৮৮, ৮৬, ৮৫ বা ৮৩ টাকায়। এটা চলতে পারে না। আমাদের লড়াই চলবে এবং যত দিন না পেট্রো পণ্যের দাম কমে ততদিন আমরা দিল্লীর বুকে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব। আমরা ছাড়ব না। আমাদের ধমকে চমকে আটকানো যাবে না।
আজকে কংগ্রেস বনধ ডেকেছে আর সমর্থন করেছে সিপিএম। অথচ আজকে এমনি দিনের থেকে বেশী গাড়ি চলছে। আজকে সাধারণ মানুষদের আস্থা, ভালোবাসা, দোয়া, আশির্বাদ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ওপরে রয়েছে। এই কর্মনাশা বনধকে তারা ব্যর্থ করেছে।
ঠিক যেমনভাবে আপনারা বনধকে ব্যর্থ করেছেন, ঠিক তেমনভাবে আমাদের এই জনবিরোধী সরকারকে দিল্লী থেকে উৎখাত করতে হবে। এমন এক সরকার বসাতে হবে যে শ্রমিকের কথা ভাববে, যে কৃষকের কথা ভাববে, যে খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাববে। যে ভাববে, মজদুরের কথা, যা ভাববে যুবক-যুবতীদের কথা, যে ভাববে বাংলার কথা, যা ভাববে দিল্লীর কথা, যে ভাববে অন্যান্য রাজ্যের কথা। তাই আমাদের আজকে সকলকে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে সংকল্প ও ঐক্যবদ্ধ ভাবে অঙ্গীকার এবং শপথ আজকে এই সভা থেকে নিতে হবে, যে আগামীদিন আমাদের নেত্রী যা নির্দেশ দেবে তা মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করব।
আমরা এই মিছিল বা সভাটি বিকেল পাঁচটাতে করতে পারতাম বা তারও পড়ে। কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তখন কাজ থেকে বাড়ী ফেরেন, তাদের অসুবিধা হত। সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে তৃণমূল কংগ্রেস কোনও কাজ করে না তাই এই মিছিলটা রোদ উপেক্ষা করেই হল। আমরা ঘাম ঝড়াতে প্রস্তুত, আমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত, আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু সাধারণ মানুষের পেটে যেন আঘাত না পরে এটাই মমতা বন্দোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়েছেন তাই আমরা সেই পথের পথিক।তার আদর্শকে পাথেয় করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
আজকে দলমত নির্বিষেশে সাধারণ মানুষ এই বন্ধকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কেন করেছে, কারণ রাজ্যের বিরোধী দলগুলো বাংলার বিরুদ্ধে, উন্নয়নের বিরুদ্ধে, ধর্মনিরেপেক্ষতার বিরুদ্ধে, কোথায় কোথায় ধর্ম টেনে এনে আজকে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করতে চাইছে। এদের মুল লক্ষ্য বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করা।
আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত কিন্তু বাংলাকে অশান্ত করতে দেব না।