ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
দেশের ঐক্যকে বিজেপি নষ্ট করে দিয়েছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর প্রদেশে আজ ওই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যেতে বাধা দেয় পুলিশ। এই ঘটনার নিন্দা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
নরেন্দ্র মোদি আর ওনার দলের সভাপতি, বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে গিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলেন। যারা সবরকম মিটিং করে, সব কিছু করে তারপরেও গালি দেয়, আর ওনাদের নিজের রাজ্যে পুলিশ কাজ করলে, তাকে খুন করা হয়, লিনচিং এর নামে এবং গো-রক্ষার নামে মানুষকে মারা হয়।
অখিলেশ যাদবের এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সেমিনারে যাওয়ার কথা ছিল। ওনাকে বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছে। উনি কারণ জিজ্ঞাসা করলে, বলা হয় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা। তার কারণ যোগীর রাজ্যে একটা কলেজের অনুষ্ঠানে কোনও নেতা যেন যেতে না পারেন, যেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যেতে না পারেন, সবার জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।
আজ দেশের এইরকম পরিস্থিতি। কারও কোথায় যাওয়ার অনুমতি নেই। গুজরাটে জিগনেসকেও দেখলাম, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে ওনাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল, বিজেপির গুন্ডারা ওকে হুমকি দিচ্ছে। আর এরাই আমাদের জ্ঞানের কথা বলে! বড় বড় কথা বলে!
আজ পুরো দেশের ঐক্যকে বিজেপি নষ্ট করে দিয়েছে। সব জায়গায় শুধু হিংসার রাজনীতি চলছে। ওরা ঘৃণার রাজনীতি করে, আর টাকা দিয়ে যা খুশি করাচ্ছে, এজেন্সিকে অপব্যবহার করছে। আমাদের দেশে এগুলো কখনও আগে হয়নি। আমাদের একতার পরম্পরা কখনও নষ্ট হয় নি।
‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’- হল দেশের ভিত্তি। কাউকে অন্যের রাজ্যে যেতে দেওয়া হবে না, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। আমি এর বিরোধিতা করছি।
দেশের জনগন খুবই বুদ্ধিমান। ভূপেন হাজারিকা আমাদের কাছে প্রণম্য। তিনি শুধুমাত্র অসমের সংগীতশিল্পী নন, তিনি পুরো দেশের গর্ব। তাকে আমরা সম্মান করি। তার পরিবার নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যে আবেগ প্রকাশ করেছে, আমরা তাদের আবেগকে সমর্থন করছি। আমি মনে করি মোদী সরকারকে উত্তর-পূর্ব ভারতের অধিবাসী ও অনান্যদের অনুভূতিটা বোঝা উচিত। আমরাই একমাত্র দল, যারা প্রথম থেকেই নাগরিকত্ব বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছি সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং ও অন্যান্য মিটিংয়ে।
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ওরা প্রথমে বলবে আপনি বিদেশী হয়ে যান। তারপরে তারা ঠিক করবে কাকে নাগরিকত্ব দেবে আর কাকে দেবে না। দ্বিতীয়বারের জন্য আবার নাগরিকত্ব কিসের? ইন্ধিরা গান্ধী, মুজিবার রহমানের যে চুক্তি হয়েছিল, লিয়াকাত-নেহেরু চুক্তি হয়েছিল দেশভাগের সময়, যারা বাংলাদেশ-পাকিস্তান থেকে এসেছে তারা এখন সবাই ভারতবর্ষের নাগরিক। কেন তাদের বিদেশী হতে হবে? তারা নাগরিকত্ব বিলের নামে দেশের নাগরিকদের সবসময় অসম্মান করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের জনগণ প্রতিদিন যন্ত্রণায় ভুগছে। আমি তাদেরকে পূর্ণ সমর্থন করব। তারা যেন মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে না পারে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টান – সবার সম্মানের সঙ্গে বসবাস করার অধিকার আছে।
আমার দিল্লির সফরসূচি খুব স্পষ্ট। অরবিন্দ কেজরিওয়াল আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ওনাদের ধর্নার জন্য। তাই আমরা এই ধর্নায় উপস্থিত থাকব। এছাড়া জিটিএ দিল্লিতে গোর্খা ভবন তৈরী করতে চায়, সেই অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকব। এবং অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে।
এখন আমাদের রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। এরপর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে, সিবিএসই, আইসিএসই চলবে, তাই পরীক্ষার জন্য আমার শুভ কামনা রইল। আমি চাই ছাত্র-ছাত্রীরা আগামীদিনে খুব ভালো করে পরীক্ষা দিক, সফল হোক।
নরেন্দ্র মোদী জানেন উনি আর ক্ষমতায় আসছেন না, ওনার এক্সপায়ারি ডেট এসে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। আমরা নতুন মুখ দেখতে চাই। আমরা নতুন সরকার দেখতে চাই। দেশ পরিবর্তন চাইছে কারণ তারা ইউনাইটেড ইন্ডিয়া দেখতে চায়। আমরা গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চাই এবং এই দেশকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে চাই।