ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
আমার ভাষা কাউকে ঘৃণা করতে শেখায়নি: মুখ্যমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা শহীদ স্তম্ভে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, এই দিনটি আমাদের কাছে খুব পুণ্য দিন, পবিত্র দিন, স্মরণীয় দিন, বরণীয় দিন। ভাষা আন্দোলনের শহীদরা যারা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদ হয়েছিলেন, তাদের যেমন শ্রদ্ধা জানাই, তেমনই সারা পৃথিবী জুড়ে কোথাও না কোথাও কখনও না কখনও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার জন্য অনেকে অনেক আন্দোলন সংগঠিত করে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের বলিদান বৃথা যায় না। সেই বলিদানকেও আমরা সম্মান জানাচ্ছি।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেন। এক্ষেত্রে বাংলার একটা অবদান আছে। ভাষার দিক থেকে বাংলা বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম এবং এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। বাংলা ভাষা আমার প্রাণ। তেমনই আমরা সব ভাষাকে ভালোবাসি।”
তিনি বলেন, “মাতৃভাষা আমাদের শিখিয়েছে বিদ্বেষ ছড়াবে না, কুৎসা ছড়াবে না, অপপ্রচার ছড়াবে না, মানুষকে ভালবাসতে, মানুষকে আপন করতে। এটাই আমাদের মানবধর্মের সবথেকে বড় কথা।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই ভারতবর্ষ এক থাকুক, ভারতবর্ষ মাথা তুলে দাঁড়াক, ভারতবর্ষ কখনও উগ্রপন্থার দেশ হতে পারেনা, ভারতবর্ষ কখনও রুদ্ধপন্থার দেশ হতে পারেনা, ভারতবর্ষ কখনও অর্ধশিক্ষার দেশ হতে পারে না। ভারতবর্ষ রৌদ্রদীপ্ত তেজস্বিকতার জন্য চিরকাল বিখ্যাত।”
তিনি আরও বলেন, “সব ভাষাকে ভালোবাসব। সব ধর্মকে ভালবাসব। সব সংস্কৃতিকে ভালবাসব। সব মানুষকে ভালবাসব। কোনও ভেদাভেদের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। কোনও ভেদাভেদের সংস্কৃতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। কোনও ভেদাভেদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতাকে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, বিন্ধ্য পর্বত থেকে দ্বারকা, ত্রিপুরা থেকে বাংলা, উত্তর প্রদেশ থেকে অসম, সর্বত্র সব মানুষ ভালো থাক।”
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা কী কখনো ভাবতে পারি যে কাশ্মীরের একটা শালওয়ালা আমরা তাড়িয়ে দেব শুধুমাত্র একটা কান্ড ঘটল বলে? যদি কেউ অন্যায় করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। যদি কেউ মনে করে থাকেন যে নিজের ইচ্ছেমতো আইন বলবৎ করে – আমরা যাকে চাইব, সেই থাকবে, অন্য কেউ থাকবে না — আমি এই পন্থায় বিশ্বাস করি না এবং আগামীদিনেও করব না। এত বড় ঔদ্ধত্ব যে একজন ডাক্তারকে যিনি ২০ বছর এখানে আছেন তাকে বলছে – বেড়িয়ে যাও।”
তিনি আরও বলেন “একটা রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ এসে বলছেন, যারা দেশ ভাগ করে দিতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে আজকে আমি মাতৃভাষাতেই বলব যে আমার ভাষা কাউকে ঘৃণা করতে শেখায়নি। বাংলাকে জানতে হলে বাংলার মাটিকে চিনতে হবে। বাংলার সংস্কৃতিকে জানতে হবে আর তা জানতে হলে ভারতের সভ্যতাকে জানতে হবে”।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কথায় কথায় বলছে যে ও পাকিস্তানের দিকে আর এ ভারতের দিকে। ওরা সব দেশপ্রেমিক আর আমরা সব দেশের শত্রু? আমি আপানাদের সবাইকে বলব শক্তিশালীভাবে এই উগ্রবাদকে জবাব দিতে হবে। কিছু মানুষ এখন বলে দিচ্ছে কে দেশে থাকবে আর কে থাকবে না। কে কোন ভাষায় কথা বলবে, কে কোন ভাষায় বলবে না। কে কি খাবে কে কি খাবে না”।
দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা সংস্কৃতি না বাঁচলে দেশের ইতিহাস বাঁচবে না। রুখে দাঁড়ান। অনেক মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন, দেশকে ভালবেসে প্রাণ দিয়েছেন। আমরা কখনো এই দেশের সাথে, এই ভাষার সাথে, এই দেশের ঐক্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না”।
তিনি আরো বলেন যে “আমরা চাই ঐক্যবদ্ধ ভারত। আসুন আমরা একসাথে ভাবি, ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলি। এই বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলি।”