সাম্প্রতিক খবর

ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯

বিজেপির মিথ্যা অভিযোগ খন্ডন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপির মিথ্যা অভিযোগ খন্ডন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপির মিথ্যা অভিযোগ খন্ডন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পড়ুন:

ওনার সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। কারণ, ওনার সরকারের এক্সপায়ারি ডেট হয়ে গেছে। উনি জানেন ওনার বিদায় আসন্ন। বিজেপির সরকারের পাঁচ বছর শেষ হয়ে গেছে। এই পাঁচ বছর ধরে মানুষকে সিবিআই, ইডি এবং আইটি দিয়ে শোষণ করেছে।

ওরা দাঙ্গা লাগিয়েছে, কৃষক হত্যা করেছে, বেকার যুবকদের ভবিষ্যৎ করে নিয়েছে, গো-রক্ষার নামে মানুষ হত্যা করেছে, পুলিশকেও হত্যা করেছে।

দেশের জন্য কোনও কাজ করেনি। নোটবন্দির নামে দেশকে তছনছ করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

ভারতের কোনও রাজ্যের কোনও বিরোধী নেতা আজ স্বস্তিতে নেই, প্রত্যেকের মুখ বন্ধ করার জন্য ফ্যাসিস্ট কায়দায়, হিটলারি কায়দায় এজেন্সি দিয়ে ঘিরে রেখেছে।

একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কি বলতে হয় কি না বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রীর আসনকে কী ভাবে সম্মান জানাতে হয় কী ভাবে সম্মান না জানাতে হয়, সেই সৌজন্যতাবোধ ওনার নেই। উনি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন।

বিজেপির রাজনৈতিক সত্ত্বা বা পলিটিকাল কেরিয়ার হল গোধরার দাঙ্গা। ২০০১-০২ সালে গুজরাটে প্রচুর মানুষ খুন হয়েছেন। ওদের জিজ্ঞেস করুন হরেন পান্ডের কি খবর? ওনাদের হোম মিনিস্টার ছিলেন। তাঁকে পর্যন্ত কি করা হয়েছে আজ পর্যন্ত মানুষ জানে না।

গুজরাটের দাঙ্গার আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। যাদের চোখে মুখে সারা দেহে দাঙ্গার রক্ত, তাদের মধ্যে মানবিকতা নেই। তাঁদের থেকে দানবিক প্রশ্নই শুনব। এদের দেখে লজ্জা হয়, ঘৃণা হয়।

আমরা ব্রিগেডে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র‍্যালি আয়োজন করেছি। ওনার জোটসঙ্গী আছে? উনি নিজস্ব ফ্যাশন প্যারেড নিয়ে ব্যাস্ত। নিজস্ব প্লেনে ছড়েন, মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখভাল করান, বক্তৃতা পর্যন্ত দেন টেলিপ্রম্পটারের মাধ্যমে। তিনি নিজে কিছুই পারেন না করতে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য নন।

সমস্ত কালো টাকা ফিরিয়ে এনে জনগণের অ্যাকাউন্টে ১৫লক্ষ টাকা করে দেবার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। পাঁচ বছরে সব উলটে গেছে।

আমাদের নির্বাচন হয়েছে মাত্র দুবছর আগে। আজ যেহেতু তাদের বিদায়ঘন্টা আসন্ন, অন্যদের বিদায় নিয়ে চিন্তা না করে নিজেদের সরকার নিয়ে ভাবুন। উত্তর প্রদেশ, ত্রিপুরা, রাজস্থান থেকে নেতা এনে বাংলায় ভাষণ দেওয়াচ্ছে। ওদের এইসব ভাষণ দিতে যা খরচ হয়েছে, তার একাংশ যদি মানুষকে মানুষকে দিত, মানুষের উপকার হত। যতই অপপ্রচার, কুৎসা করুক, এই নির্বাচনে ওরা শূন্য হবে।

আমরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিই, উনি দেন না। আমরা ২ টাকা কিলো চাল দিই, উনি দেন না। আমরা কন্যাশ্রী দিই, উনি দেন না। আমরা শিক্ষাশ্রী দিই, উনি দেন না। আমরা সমব্যাথী দিই, উনি দেন না। আমরা বৈতরণী দিই, উনি দেন না। আমরা কৃষক বন্ধু দিই, উনি দেন না।

ওনার রাজত্বে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে।

আমাদের বলছে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট করে দাও। কেন করব? এনআরসির নাম করে অসম থেকে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালী খেঁদাও, বিহারী খেঁদাও, উত্তর প্রদেশ খেঁদাও, নেপালি খেঁদাও এর ব্যবস্থা করছে। কাল গোর্খারা অসমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সারা উত্তর-পূর্ব ভারত জ্বলছে। ওনাদের দাঙ্গা লাগানোর জন্য এই বিলে আমরা সমর্থন দেব না। সারা ভারতবর্ষ এক থাকবে, উনি বিদায় নেবেন। ওনাকে তাড়ানো আমাদের প্রথম কাজ। আমরা বলছি সরকারকে এই বিল প্রত্যাহার করতে হবে।

বাংলায় ওদের একটাও নেতা নেই। বাইরে থেকে নেতা এনে বক্তৃতা দেওয়াতে হয়। ওদের জনসভা ভরাতে স্পেশ্যাল ট্রেনে লোক নিয়ে আসা হয়।

ওরা রাজনীতি করার যোগ্য নয়। অটল বিহারী বাজপেয়ীজি রাজনীতি করতেন, ওনার প্রতি আমাদের সম্মান ছিল। বারবার মন্ত্রীসভার বদল করা হচ্ছে, বহুরূপী কায়দায় এই সরকার চলছে। রাজনাথ সিংএর ছেলেকেও কি ফাঁসানো হয়নি? রাজনাথ সিংকে যা বলতে বলা হচ্ছে, তাই তিনি বলছেন।

নোটবন্দী একটি বড় দুর্নীতি। রাফায়েল একটি বড় দুর্নীতি। ৫৯ মিনিটে ঋণ পাওয়ানো একটি বড় দুর্নীতি। গ্যাস কেলেঙ্কারি বড় দুর্নীতি। শিশু পাচার বড় দুর্নীতি। দলিত হত্যা করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, হিন্দু-হিন্দু দাঙ্গা লাগায়, হিন্দু মুসলমানে দাঙ্গা লাগায়। দেশে আগুন লাগিয়েছে।

বিজেপির নৈতিক অধিকার নেই অন্য দলের দিলে আঙুল তোলার। যখন দেশ বিপন্ন হয়, যখন গণতন্ত্র বিপন্ন হয়, সরকার বিপন্ন হয়, মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, বিচারব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়, মিডিয়াকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়, গণতন্ত্রের সমস্তও হাতিয়ারকে ভয় দেখানো হয়, এজেন্সি দিয়ে গায়ের জোর দেখানো হয়, তখন সব মানুষ এক হয়ে যায়।

ভারতের সমস্ত প্রান্তের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল এক হয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। সকলের একটাই লক্ষ্য – মোদী হঠাও, দেশ বাঁচাও।

উনি দোষী ছিলেন, তাই ওনাকে সিবিআই জেরা করেছিল। উনি দাঙ্গা করেছিলেন, লোক মেরেছিলেন, এই কথা সত্য, সকলে জানে।

আয়ুষ্মান ভারতে কিছুই হবেনা। আমরা এখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিই যা ভারতবর্ষের কোথাও নেই। ভোটের সময় ওনার সব মনে পড়ল?
ভোটের সময় কৃষকদের সাহায্য করবে বলছে, স্বাস্থ্য দেবে বলছে, কোথা থেকে দেবে? স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা এগুলো রাজ্যের বিষয়। প্রত্যেকটি সরকারি হাসপাতালে আমরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিই। আমাদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প অনেক আগেই করা হয়েছে, যেটাতে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়।

ওনারা সব মিথ্যা কথা বলছে। অসংগঠিত শ্রমিকদের ১৫ হাজার টাকা বেতন হলে যে তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলছে ওগুলো সব মিথ্যা বলছে। আমাদের আগে থেকেই সামাজিক সুরক্ষা আছে যেটা আমরা পাঁচ বছর আগেই করে দিয়েছি। উনি এগুলো টুকলি করছেন। টুকলিটাও ভালো করে করতে পারছেন না।

কন্যাশ্রীতে আমাদের এখনও পর্যন্ত সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে আর ওনারা ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬০ কোটি টাকা দিয়ে মোদীর ছবি ছেপেছে।

আমাদের সরকার কৃষকদের আয় তিন গুন বাড়িয়েছে যেটা উনি বলেছিলেন ২০২২ সালে দ্বিগুণ করবেন। আমাদের এখানে কৃষকদের খাজনা লাগেনা। কৃষকদের জমির মিউটেশন ফি আমরা মুকুব করে দিয়েছি। আমরা কৃষাণ ক্রেডিট কার্ড করে দিয়েছি। কৃষকদের শস্য বীমার যে প্রিমিয়াম সেগুলো আমাদের সরকার দিয়ে দেয়। কেন্দ্র সরকার যে ২০ শতাংশ টাকা দিত আর বাকি ৮০ শতাংশ আমরা দিতাম সেটাও আমরা বাতিল করে দিয়েছি। কৃষকদের সব কিছু আমরা দিচ্ছি।

কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা এক একর জমিতে পাঁচ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। আমাদের এখানে প্রান্তিক চাষী বেশি আছে, তাই যাদের দু কাটা চার কাটা করে জমি আছে তাদেরও সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা করে দিয়েছি।

ওনার আমলে এক বছরে দু কোটি যুবক-যুবতীর চাকরি চলে গিয়েছে। আমাদের বাংলায় যা ৪০ শতাংশ কম। ওদের লজ্জা করেনা? স্কিল ডেভেলপমেন্টে বাংলা এক নম্বর হয়েছে কেন্দ্র সরকারই সার্টিফিকেট দিয়েছে। কৃষি কর্মণ অ্যাওয়ার্ড আমরা পরপর পাঁচবার পেয়েছি কেন্দ্র সরকার থেকে। উনি হয়তো না জেনে এগুলো বলেছে। ওনার কাগজ পত্র পড়া উচিত। যেটা আমি বলি গর্দ শিক্ষিত কিছুই জানেনা, ভাঁওতা বাজ। MSME তে আমরা এক নম্বর।

ভাঙ্গরের প্রকল্পটিও কেন্দ্র সরকারের কিন্তু আমরা সেটা গতকালকে চালু করে দিয়েছি। দেউচা পাচামি কয়লার প্রকল্প পাঁচ বছর ধরে কেন পড়ে আছে? তারা পরিস্কার করছে না কেন? তাজপুর পোর্ট কেন পড়ে আছে পাঁচ বছর ধরে? সুন্দরবনের গঙ্গাসাগর পোর্ট কেন পড়ে আছে পাঁচ বছর ধরে? হিংসার জন্য করেনি এগুলো বাংলাকে বঞ্চিত করবে বলে।
আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন বাংলাকে অনেক কিছু দিয়েছি। এখন পাঁচ বছর ধরে রেল মন্ত্রক থেকে বাংলা কি পেয়েছে? একটা রেলও দেয়নি। যা দিয়েছে সব কেটে নিয়ে চলে গিয়েছে।

আয়করে পাঁচ লক্ষ টাকা করে যে ছাড় দেওয়ার কথা বলছে সেটা পুরো মিথ্যা কথা। মানুষ এতে লাভবান হবে না। এই সরকার বাজেট করতে পারে না। আগামী বছর তো এই সরকার থাকবে না। মুখে এলেই বলে দিয়ে যাব অথচ টাকা নেই, তার দাম কি? মিথ্যা বলে যাচ্ছে আর অপপ্রচার করে যাচ্ছে। আর টাকা দিয়ে অপপ্রচার করে যাচ্ছে।
শপিং মলের মতো তাদের পার্টি অফিস। হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিল্লীতে পার্টি অফিস করেছে। কত টাকার সম্পত্তি তারা করেছে? বিদেশে তারা কত টাকার সম্পত্তি করেছে? হাজার হাজার কোটি টাকায় ওরা ভোটে লড়াই করে।
মোদীর সরকার আর নেই দরকার। দিল্লীর সরকার এখনি পরিবর্তন হওয়া দরকার।
এত ঔদ্ধত্ব কিসের? এত অহঙ্কার কিসের? আমি এগুলো বললে কি করবে আমাকে? আমাকে খুন করবে? আমকে এজেন্সি দেখাবে? জেলে থাকব তবু ভালো কিন্তু মাথা নত করতে রাজি নই।

চিরকাল মাথা উঁচু করে চলা লোক আমরা। বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার সভ্যতা আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে শিখিয়েছে।

দিদি শান্তিতে আছে বলে, বাংলা শান্তিতে আছে বলে আপনাদের হিংসা। কোথায় ছিলেন ৩৪ বছর যখন বাংলাটা যখন সর্বশান্ত হয়ে গেছিল? সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই থেকে শুরু করে কেন্দুয়া থেকে শুরু করে কি না হয়েছে বাংলার বুকে? আজকে বাংলা হাসছে, আর আপনারা হিংসায় জ্বলছেন। বাংলার মানুষ শান্তিতে থাকলে আপনাদের হিংসা হয়।

বাম আর রাম এক। আর নতুন করে বলতে হবে? এই দেখবেন আজকে যারা মিটিংয়ে এসেছে, তারা আবার কালকে বামেদের মিটিংয়ে চলে যাবে। পঞ্চায়েতে তো একসাথে লড়েছে। পঞ্চায়েতে বাম-রাম-ডান একসাথে লড়েছে তো। জগাই, মাধাই, বিদাই তিনজনই তো একসাথে লড়েছে। এখানে পশ্চিমবাংলায় অনেক জায়গাআছে যেখানে তিনটে দলের একসাথে পঞ্চায়েত চলছে।

চিটফান্ডগুলো তৈরী হয়েছিল ১৯৮০ সাল থেকে। কেন ১৯৮০ সাল থেকে২০১১ পর্যন্ত তদন্ত করা হয়নি?

দাঙ্গার সিন্ডিকেট মানুষ কতদিন দেখবে? লিনচিঙের সিন্ডিকেট মানুষ কতদিন দেখবে? গোরক্ষকের সিন্ডিকেট মানুষ কতদিন দেখবে? নোটবন্দির সিন্ডিকেট মানুষ কতদিন দেখবে? জিএসটি নিয়ে সিন্ডিকেট মানুষ কতদিন দেখবে? উনি হচ্ছেন সমস্ত সিন্ডিকেটের নেতা। সেই সিন্ডিকেট কবে ভাঙবে?