ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯
গত ৭ বছরে বাংলার কৃষকদের আয় ৩ গুন বৃদ্ধি পেয়েছেঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সংবিধানকে রক্ষার স্বার্থে গতকাল রাত থেকে মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সেই ধর্নাস্থল থেকেই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কৃষক সমাবেশে বক্তব্য রাখলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
আজ তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কৃষক সম্মেলন হচ্ছে কিন্তু আপনারা জানেন এক জরুরি পরিস্থিতির জন্য আমি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারিনি।
নরেন্দ্র মোদীর সরকার রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ধ্বংসাত্মক মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করছে। এমনকি যারা প্রশাসনিক কাজ করেন তাদের ওপর প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনীতির প্রয়োগ করেছেন, যা উনি গত ৫ বছর ধরেই করে আসছেন।
সারা ভারত দেখছে, ভয়ে অনেকে কথা বলেন না কারণ আজ মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে মোদী সরকার।
দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার (বিজেপির সরকার, মোদী বাবুর সরকার) কৃষকদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। দেশে প্রায় ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। কৃষকদের বিক্ষোভ মন জায়গায় গেছে যে কৃষিজীবী মানুষকে প্রতারণা করা হচ্ছে।
যখন কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল, তখন একমাত্র আমরা কৃষকদের জন্য আন্দোলন করেছে।
আজ আমি যেখানে বসে ধর্না করছি, ২০০৬ সালে এখানেই ২৬ দিনের অনশন করেছিলাম কৃষকদের স্বার্থে। তারপর থেকে সারা দেশে কৃষকদের মধ্যে একটা জাগরণ শুরু হয়েছে।
কৃষকরা আমাদের সম্পদ, শিল্প আমাদের গৌরব।
নোটবন্দির পর সারা বাংলা জুড়ে, সারা দেশ জুড়ে আজ কৃষকদের যে অসহায় অবস্থা হয়েছে তাতে অনেক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, অনেক কৃষক পরিবার না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছে, অনেকে সর্বশান্ত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত মজদুর অসহায় হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ভারতের বুকে আমাদের সরকার একমাত্র সরকার যারা সিঙ্গুরের কৃষিজমি ফিরিয়ে দিয়েছে, উত্তরবঙ্গে কাওয়াখালিতে কৃষিজমি ফিরিয়ে দিয়েছি।
আমরা কৃষকদের জমির খাজনা মুকুব করে দিয়েছি। কৃষকদের জমির মিউটেশনের টাকা ফ্রি করে দিয়েছি।
আমরা কৃষক বন্ধু প্রকল্প চালু করেছি। ১ একর জমি থাকলে প্রতি বছর রাজ্য সরকার যে কোনও একটা চাষের জন্য দু ক্ষেপে একর পিছু ৫ হাজার টাকা করে। জমি ছোট হলে, একরের অনুপাতে টাকা পাবে। প্রকল্প চালু হয়ে গেছে, ৩০ হাজার কৃষক এই টাকা পাবেন।
১৮ বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত যদি কোনও কোনও কৃষক বা ক্ষেত মজুর মারা যান, সে স্বাভাবিক মৃত্যু হোক বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু হোক, আমাদের সরকার সেই কৃষক পরিবারকে দু লক্ষ টাকা করে দেবে। রাজ্যে প্রায় ৭২ লক্ষ কৃষক ও খেত মজুর পরিবার আছে।
বাংলার কৃষকদের জন্য ফসল বীমা যোজনা, মোদীবাবু ছবি দিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন, উনি নাকি টাকা দিয়েছেন।কিন্তু উনি কোন টাকাই দেননি। ৮০% টাকা রাজ্য সরকার দেয়। গত বছর আমাদের সরকার ৬৫২ কোটি টাকা দিয়েছে বীমার জন্য।
ইতমধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফসল বীমার কেন্দ্রীয় কোন টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে নেব না, কোন টাকা কৃষকদের থেকেও নেব না। পুরো টাকাই রাজ্য সরকার নিজের ফান্ড থেকে দেবে।
বাংলার ৭০ লক্ষ কৃষকদের কিষান ক্রেডিট কার্ড করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
অনেক জায়গায় ব্যাঙ্ক নেই, কৃষকরা ঠিক করে টাকা পায় না। আমরা কৃষকদের সুবিধার জন্য কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক করে দিয়েছি।
আমাদের কৃষি পেনশন আছে। আগে ৬৫,০০০ কৃষক পেনশন পেতেন মাসে ৭৫০ টাকা করে, আমরা সেটা বাড়িয়ে ১,০০০ টাকা করেছি। এবং কৃষি পেনশন প্রাপকের সংখ্যা বাড়িয়ে ১,০০,০০০ করেছি।
রাজ্য সরকার কৃষি রত্ন অ্যাওয়ার্ড, মাটি উৎসব চালু করেছে। কোন মাটিতে কি ভালো চাষ হবে, সেই সয়েল টেস্ট কার্ড কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
কৃষকদের জন্য কাস্টম হায়ারিং সেন্টার করা হয়েছে, যেখান থেকে কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ধার পাওয়া যায়। ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণও পাওয়া যেতে পারে।
কৃষক পরিবারের ছেলে মেয়েরা, কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী, শিক্ষাশ্রী, ২টাকা কিলো চাল পাচ্ছে। সকলে সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাচ্ছে।
এছাড়া কৃষকদের থেকে উৎপাদিত ধান সরকার সরাসরি কিনে নেয়। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই সহায়ক মূল্য খুব কম ছিল, সেটা বাড়িয়ে ক্যুইন্টাল প্রতি ১,৭৫০ টাকা করা হয়েছে এবং সরকারি কেন্দ্রে কৃষক নিজে এসে ধান বিক্রী করলে আরও ক্যুইন্টাল প্রতি ২০ টাকা উৎসাহ মূল্য দেওয়া হয়। আমাদের স্লোগান ‘ধান দিন চেক নিন’।
আগের বছর আমরা প্রায় ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। সরকারি যে কোনও কাজের জন্য আমরা কৃষকদের থেকে কেনা ধান ব্যবহার করি।
২টাকা কিলো চাল সকলকে দেওয়ার জন্য আমাদের কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়।
সেচের সুবিধার জন্য আমরা চেক ড্যাম তৈরী করেছি। ২৫০০ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্প আসছে, বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলী, মেদিনীপুর এই জেলাগুলোয় অনেক সুবিধা পাবে। এছাড়া, বীরভূম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় অনেক চেক ড্যাম করেছি।
জল ধরো জল ভরো প্রকল্পের মাধ্যমে ২লক্ষের বেশী পুকুর কাটা হয়েছে। এর ফলে চাষের সুবিধাও হচ্ছে এবং মাছ চাষও হচ্ছে।
প্রাকৃতিক যেকোনও বিপর্যয়ে আমরা কৃষকদের পাশে দাঁড়াই। ৩০ লক্ষের বেশী কৃষক পরিবারকে ১২০০ কোটি টাকার বেশী সাহায্য করা হয়েছে।
আমরা ক্ষেত মজুরদেরও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসেছি। এই প্রকল্পে প্রায় ১ কোটি মানুষ নথিভুক্ত আছেন।
২০১২ সালে আমরা মাটি উৎসব চালু করি, সেটা দেখে রাষ্ট্রসঙ্ঘ অনুরুপ উৎসব শুরু করে। কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে আমরা পরপর পাঁচবার কৃষি কর্মন পুরষ্কার পেয়েছি।
যারা বাংলার নামে উল্টোপালটা কথা বলে, তাদের বোঝা উচিৎ আমরা মানুষের পাশে থাকি, কাজ করি। শুধু নির্বাচনের আগে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিই না। এই বাজেটের পুরোটাই মিথ্যে।
কৃষকরা ভালো করে মাথা তুলে দাড়ান। আপনাদের দুর্বলতা নিয়ে কেউ যেন রাজনীতি করতে না পারে। আমাদের সমস্ত কৃষক সংগঠনকে বলব কৃষকদের পাশে থাকুন, আরও বেশী করে সাহায্য করুন।
কেন্দ্রীয় সরকার বলছে ২০২২ সালে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে, সেখানে আমরা ইতিমধ্যেই রাজ্যের কৃষকদের আয় তিনগুণ করে দিয়েছি। আমরা সব দিক থেকে এগিয়ে।
কৃষি সমাবেশে শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে না পারার জন্য আমি দুঃখিত। একদিন আপনাদের জন্য প্রাণপাত করে সংগ্রাম করেছিলাম, আজও আপনাদের পাশে আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।
আগামীদিন দিল্লীর সরকার পরিবর্তন হলে, সকল রাজনৈতিক দল মিলে কৃষকদের জন্য আরও ভালো কি করা যায়, সেটা আমরা দেখব। কৃষক না থাকলে দেশ থাকবে না। কৃষি আমাদের দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে। কৃষি ও শিল্প দুটিরই প্রয়োজন।
ফাইল চিত্র