সাম্প্রতিক খবর

অগাস্ট ৩১, ২০১৮

সাত বছরে উন্নত হয়েছে বাংলার ধান সংগ্রহ ব্যবস্থা

সাত বছরে উন্নত হয়েছে বাংলার ধান সংগ্রহ ব্যবস্থা

সাত বছরে উন্নত হয়েছে বাংলার ধান সংগ্রহ ব্যবস্থা। ধান উৎপাদন থেকে শুরু করে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা খাদ্যশস্যের গুনমান নিয়ন্ত্রণ – পুরো প্রক্রিয়াটিই অনেক উন্নত হয়েছে। খাদ্যশস্য মজুত রাখার ক্ষমতাও বেড়েছে বিপুল ভাবে।

এখন রাজ্য সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান সরবরাহ করার পর তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নেফটের মাধ্যমে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় অর্থ প্রদান করা অনেক সহজ ও দ্রুত। এই পদ্ধতিকে কেন্দ্রীয় সরকার মডেল হিসেবে অন্য রাজ্যগুলিতেও চালু করতে চলেছে।

গত সাত বছরে, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর অনেক উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সেগুলি হল:

কৃষক বাজারেই ধান সংগ্রহ কেন্দ্র

২০১৪-১৫ খারিফ মরশুম থেকে কৃষক বাজারগুলিতেই ধান সংগ্রহ কেন্দ্র চালু করে রাজ্য সরকার।

ধান সংগ্রহ কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি

২০১৪-১৫ খারিফ মরশুমে ৪৬টি কিষাণ মান্ডিকে কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১৭-১৮ খারিফ মরশুমে কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩২৫। এছাড়াও, ২০১৭-১৮ খারিফ মরশুমে ৯৫০টি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।

কৃষকদের উৎসাহ মূল্য

কেন্দ্রীয় ধান সংগ্রহ কেন্দ্রগুলিতে এসে ধান বিক্রি করতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে ২০১৪-১৫ খারিফ মরশুম থেকে কৃষকদের প্রতি কুইন্টাল ধানের জন্য ১,৩৬০ টাকা ন্যুনতম সহায়ক মূল্যের সাথে আরও ১৫ টাকা করে উৎসাহ মূল্যও দেওয়া হত। ২০১৭-১৮ খারিফ মরশুমে উৎসাহ মূল্য বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা প্রতি কুইন্টাল।

অনলাইনে ধান সংগ্রহের টাকা প্রদান

২০১৬-১৭ খারিফ মরশুমে ই-প্রোকিওরমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। নেফটের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ধানের মূল্য প্রদান করা হয়। ২০১৭-১৮ সাল থেকে নেফটের মাধ্যমে ধানের মূল্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়।

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ

ধান সংগ্রহে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও সংঘগুলির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ২০১৭-১৮ সালের খারিফ মরশুমে ৩০০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী অংশগ্রহণ করে এবং ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩১,২১৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয় ৯,৬০০ ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে।

ধানের অভাবী বিক্রি হয়নি

রাজ্য খাদ্য দপ্তরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৭-১৮ খারিফ মরশুমে ধানের অভাবী বিক্রির কোনও খবর পাওয়া যায়নি। দপ্তরের উদ্যোগের ফলে ধানের বাজারদর বেড়েছে এবং সারা রাজ্যে কৃষকদের জন্য ন্যুনতম সহায়ক মূল্যও বেড়েছে।

খাদ্যশস্য মজুতের ক্ষমতা বৃদ্ধি

গত সাত বছরে অতিরিক্ত ৭.৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। এর ফলে, রাজ্যে খাদ্যশস্য মজুতের ক্ষমতা ৬৩,০০০ মেট্রিক টন (২০১০-১১ সাল) থেকে বেড়ে হয়েছে ৮.৪৮ লক্ষ মেট্রিক টন (মে, ২০১৭)।

এছাড়া, দপ্তরের লক্ষ্য যে আগামী দু’বছরের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৩ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রাখার ক্ষমতা বাড়ানো হবে। সেক্ষেত্রে চাল মজুত রাখার ক্ষেত্রে রাজ্য স্বনির্ভরতা অর্জন করবে।

গুনমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

যেসব খাদ্য শস্য কৃষকদের থেকে সংগ্রহ করা হয়, তার গুনমান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে খাদ্য দপ্তর অনেক উদ্যোগ নিয়েছে।

কলকাতা (সদর দপ্তর), কৃষ্ণনগর এবং বর্ধমানের গুনমান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগারগুলির আধুনিকীকরণ এবং উন্নতিকরণ হয়েছে, যার ফলে খাদ্যশস্যর সঠিক গুনমান যাচাই করা যায়।
৭৫টি সরকারি গুদামে এবং ১২০টি বেসরকারি গুদামে ছোট গুনমান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার নির্মিত হয়েছে।

শিলিগুড়ি, মালদা, সিউড়ি এবং মেদিনীপুরে আরও ৪টি আঞ্চলিক গুনমান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার তৈরী করার পরিকল্পনা রয়েছে দপ্তরের। এছাড়া, খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের ১৫টি জেলা দপ্তরে গুনমান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কৃষি ক্ষেত্রে বাংলা দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা রাজ্য। পরপর পাঁচ বছর কৃষি কর্মণ পুরস্কার পেয়েছে বাংলা। তাই, শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, গুনমান নিয়ন্ত্রনেও আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে রাজ্য।