সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
অশুভ চক্রান্তের জন্য শিকাগো যেতে পারিনি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বামী বিবেকানন্দর ঐতিহাসিক শিকাগো বক্তৃতার ১২৫তম বার্ষিকী আজ। এই উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান হবে রাজ্যজুড়ে। এই দিনটিকে সম্প্রীতি দিবস হিসেবে পালন করছে রাজ্য সরকার।
এই ঐতিহাসিক দিনটিকে উদযাপন করতে বেলুড় মঠে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “আমার শিকাগো যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত সেখানে যাওয়া হল না। স্বামীজি যে হলে বক্তৃতা করেছিলেন সেখানে যেতে পারলাম না। এর পিছনে অশুভ চক্রান্ত রয়েছে। কেউ কেউ চাইছিল আমি যাতে না যেতে পারি।”
স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিকাগোতে এক অনুষ্ঠানে মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশন। সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু চলতি বছরের ১১ জুন হঠাৎ তাঁকে চিঠি দিয়ে ২৬ অগস্টের ওই অনুষ্ঠান বাতিল করার কথা জানায় শিকাগোর বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
স্বামী বিবেকানন্দ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, গান্ধীজি – দেশের নেতা যারা ছিলেন, কেউ রাজনৈতিক নেতা, কেউ ধর্মীয় নেতা, কেউ নবজাগরণের নেতা – তাদের কথার মধ্যে অমিল আমি খুব কম খুঁজে পাই।
চিকাগো গিয়ে স্বামীজি বিশ্ববাসীর মন জয় করেছিলেন।
আমার শিকাগো যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত সেখানে যাওয়া হল না। স্বামীজি যে হলে বক্তৃতা করেছিলেন সেখানে যেতে পারলাম না। এর পিছনে অশুভ চক্রান্ত রয়েছে। কেউ কেউ চাইছিল আমি যাতে না যেতে পারি।”
যে অশুভ চক্র আমাদের চিকাগো যাওয়া আটকাল, তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব স্বামীজি কি বলেছিলেন, ভালো করে পড়ে দেখুন।
স্বামীজি যে হিন্দু ধর্মের কথা বলেছিলেন, সেটা বাইরে থেকে আমদানি করে আনা নয়। সেই ধর্ম এ মাটিতে তৈরী হয়েছে, বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ থেকে উঠে এসেছে।
স্বামীজি বলতেন হিন্দু ধর্ম বিশ্বজনীন। তিনি বলেছেন, ভারতীয় ধর্ম শুধু সকল ধর্মকে সহ্য করে না, সকল ধর্মকে সত্য বলে বিশ্বাস করে।
আমরা হিন্দু ধর্মের ব্যাখ্যা নেব রামকৃষ্ণের কাছে, আমরা হিন্দু ধর্মের ব্যাখ্যা নেব স্বামীজির কাছে, কোনও আমদানি করা ব্যাখ্যা নেব না।
আমি স্বামিজির বই পড়ি ও তাঁর নীতিগুলো বিশ্বাস করি। স্বামিজির চিন্তাধারা আমাদের ছাত্র যুবদের জানানো উচিত।
দেশ শাসন করো বলে মাথায় পা দিয়ে চলতে দেব না। নেতা হতে গেলে ত্যাগ করতে শিখতে হয়। নেতা সেই হয় যে দেশের-জাতির জন্য নিবেদিত প্রাণ।
হিন্দু ধর্মে সহ্যশক্তি সবথেকে বড় কথা। হিন্দু ধর্ম বিশ্বজনীন, সার্বজনীন।
স্বামিজি মাত্র ৩৯ বছরের জীবনকালে একটা দেশের মেরুদন্ড তৈরী করে দিয়ে গেছেন।
আজ যখন কেউ বলে, এটা খেতে হবে, ওটা পরতে হবে, অমুক লোক এখানে থাকবে, অমুক লোক এখানে থাকবে না, তখন নিজেদের লজ্জা হয়।
বাংলার মাটি সহনশীলতার মাটি। হিন্দু ধর্ম মানুষকে ভালোবাসে, ভেদাভেদ করেনা।
আপনারা এগিয়ে এসে দেশকে নতুন করে জাগ্রত করুন। আজ কন্যাকুমারিকায় নতুন লোক এসে বাসা বেঁধেছে। কবে আবার বেলুড় মঠটা দখল করে নেবে; আমরা তা হতে দেব না।
গোঁড়ামি ত্যাগ করা উচিত। মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে সকলকে আবেদন জানাবো। মানিবিকতাই ধর্ম। ধর্ম যার যার উৎসব সবার।
নতুন করে দেশকে পুলকিত করুন। নতুন করে সত্যকে প্রচার করুন। আপনারা নতুনকরে দেশকে জাগ্রত করুন।
স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদের আদর্শকে ভালোবাসতে হয়।
আমি আজকের দিনে সবাইকে মানুষকে কাছে টেনে নেবার জন্য আহ্বান জানাবো। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
রামকৃষ্ণ পরমহংস কি বলেন ‘টাকা মাটি মাটি টাকা’। ‘ওরে মা মানে মা’। মেক কেউ আম্মা বলে আবার কেউ মাদার বলে। আমরা সকলে মানুষ এটা আমাদের সবথেকে বড় পরিচয়। সাম্প্রদায়িকতা নয় সম্প্রীতি।
আমাকে শিকাগো যেতে দেওয়া হয়নি। আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে দোষ দিইনা। আমি বলতে চাই এভাবে আটকানো যায় না।
স্বামীজী আমাদের মনের মধ্যে। মানুষকে ভালোবাসো মানুষকে গ্রহণ করো। হিন্দু ধর্ম সব ধর্মের জননী।
স্বামীজী বলেছেন “I am proud to belong to a religion which has taught the world both tolerance and universal acceptance” আমরা মনে করি এই কথাটাই আমাদের সবার কথা।
আমরা বিবেকানন্দ ইউনিভার্সিটি কে দেড় কোটি টাকা দিচ্ছি। আমরা ১০ কোটি টাকার একটা অনুদান স্বামীজীর হাতে তুলে দিচ্ছি। আমি সমস্ত মহারাজদের আমার প্রণাম জানাচ্ছি।