সাম্প্রতিক খবর

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮

দুর্গা পুজো বিসর্জন শোভাযাত্রা ২৩শে অক্টোবর: মুখ্যমন্ত্রী

দুর্গা পুজো বিসর্জন শোভাযাত্রা ২৩শে অক্টোবর: মুখ্যমন্ত্রী

আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতার বিভিন্ন দুর্গা পুজো কমিটিগুলির সাথে সমন্বয় বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে এ বছর রেড রোডে বিসর্জন কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হবে ২৩শে অক্টোবর।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:

পুজো কমিটিগুলো যেভাবে বাংলার সম্মান রক্ষা করে মায়ের পুজো করেন তা এক কথায় তুলনাহীন।

পুজোর ভলেন্টিয়াররা দিন রাত জেগে কয়েক কোটি লোককে সামলায়। পুলিশের বন্ধুরা, ফায়ার ডিপার্টমেন্ট, ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্টকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ২৪ ঘন্টা থাকতে হয়।

গত কয়েক বছর একসাথে ঈদ আর পুজো একসাথে পড়ছে, কিন্তু তাও কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি, শান্তিপূর্ণভাবে দুই কমিউনিটি একে অপরকে ভালোবেসে নিজেদের উৎসব পালন করেছে। পুলিশ সহ সব ধর্মের মানুষ, সব বাঙালি-অবাঙালি তাদের সহযোগিতা করেছে।

কয়েক দিন আগে লন্ডনে টেমস নদীর ধরে বাংলার দুর্গা পুজো নিয়ে একটি প্রদর্শনী হল, আমাদের পর্যটন দপ্তর সেখান থেকে ঘুরে এলো।

এখন অনেক বিদেশিরা দুর্গাপুজোয় আসছে এটা গর্বের কথা, তাদের ভালো করে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেন, সব জেলায় সব ধর্মের সব লোকেদের নিয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন মিটিং করার কথা বলবো পুলিশদের।

কারো কোনরকম প্ররোচনায় পা দেবেন না। আগে এসব ছিল না, এখন এক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হয়েছে। ধর্ম নিয়ে মানুষের মধ্যে ঝগড়া লাগাচ্ছে।

আমরা সব ধর্মকে ভালোবাসি। হিন্দু ধর্ম ইমপোর্টেড নয়। হিন্দু ধর্ম তৈরী হয়েছে ভারতবর্ষের ভেতর থেকে।

অনেকে বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু তাদের বকরি ইদ ও দুর্গা পুজা একসঙ্গে করতে বলুন, পারবে না। গতবার মহরমের জন্য একদিন বিসর্জন বন্ধ রাখতে হয়েছিল, তাই নিয়েও কুৎসা রটানো হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিছু কিছু লোক শুধু বসে আছে সোশ্যাল মিডিয়ায় বদনাম করার জন্য। শুধু মাথায় রাখবেন এসব বিশ্বাস করবেন না। এই সরকার এমন কিছু করবে না যেটা মানুষের বিরুদ্ধে যায়।

কয়েকদিন আগে ফেক নিউজ ছড়ানো হল যে পুজা পাঠ নাকী সব বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ বিশ্বাস করবে সেটা। ইদ, বড়দিন পালন করা বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ বিশ্বাস করবে। এই সব করে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। দাঙ্গা লাগানোর খুব সহজ, আগুন লাগানো কিন্তু সহজ, আগুন নেভানো খুব কঠিন এটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা আগুন নিয়ে কোনও খেলা কাউকে করতে দেব না।

আমি ক্লাব, কমিটিগুলোর কাছে আবেদন রাখব- ১৯ থেকে ২২ বিসর্জনের জন্য রাখা হয়েছে। ২৩ তারিখ রেড রোডে পুজার কার্নিভাল হবে বেলা ৪টে থেকে। আগেরবার ৫৫ টা ক্লাব ছিল এবার ৭৫টি উপস্থিত থাকবে।

আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি কলকাতা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগকে। আগেরবার তারা ১৮ থেকে ২০% ছাড় দিয়েছিলেন আমাদের অনুরোধে এবার সেটা আমরা ২০ থেকে ২৩% করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। এর পরে আমি বলব কলকাতা পুরসভা ও পৌর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর, পঞ্চায়েত ও অগ্নি নির্বাপণ দপ্তর কে যে কোনও লাইসেন্স ফী নেওয়া যাবে না। ওটা মকুব করে দেওয়া হল।

কলকাতায় বড় ছোট মিলিয়ে তিন হাজার সার্বজনীন পুজা হয় আর গ্রাম বাংলায় প্রায় ২৫ হাজার। কলকাতায় ১৪৪ টি ওয়ার্ডে সব পুজাকে ১০,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশ এই টাকাটা হাতে তুলে দেবে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম করার জন্যে। গ্রাম বাংলার সব কটা পুজাকেও বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে ১০,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে।

আমি টিভি-র সাহায্য চ্যানেল ঘুড়িয়ে সব পুজাই দেখি। সব জায়গায় যেতে না পারলেও এভাবেই দেখি, যতটা পারি, ততটাই দেখি। কারণ বাঙালিদের জাতীয় উৎসব হচ্ছে দুর্গা পুজা, সেটা বাদ দিয়ে আমাদের জীবন চলেনা। শুধু মনে রাখবেন আমি আপনাদের প্রত্যেকটা পুজা প্যান্ডালের সাথে যুক্ত আছি। আমি বড় ছোট সব ক্লাবকেই অনুরোধ করব আপনারা আজে যেরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন, সেরকম সাহায্য করবেন।

আমাদের কিন্তু স্বেচ্ছাসেবক চাই। বড় পুজাগুলোয় পুলিশের সাথে কথা বলে কারা স্বেচ্ছাসেবক থাকবে তা জানিয়ে দেবেন। ছোট ক্লাবগুলিতেও স্বেচ্ছাসেবক লাগবে সুতরাং বড় ছোট মিলিয়ে পাশাপাশি এই কাজটা করলে ভাল হয়। কিন্তু সব থানাকে মাথায় রাখতে হবে, কাউকে অবহেলা করা উচিৎ না।

আমাকে অরূপ আবেদন করেছিল যে দিদি এবার একটা দুর্গা পুজার গান লিখে দাও। জাগো দুর্গা’ গানটির থিমের ওপরেই এই গানটি রচনা করেছি।

পুজায় প্রচুর ঢাকি আসেন, আমাদের লোক প্রসার শিল্পীরা নানা জায়গায় অনুষ্ঠান করেন, তাদের একটু দেখবেন ভালো করে। আপনাদের উৎসবে সর্ব ধর্মের সব মানুষকে সামিল করবেন মনে রাখবেন উৎসব সবার জন্যে, যার যার ধর্মে সেটা তাদের নিজের এটা মাথায় রেখে আমরা যেন ভালো ভাবে পুজোটা পালন করতে পারি।

কেউ টাকা দিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে কিনতে এলে উদ্যোক্তারা তা যেন না হতে দেন। কোনও গোলমালও কেউ যাতে না বাধাতে পারে, তার জন্যও পুজো কমিটিগুলিকে সতর্ক থাকতে হবে।

 

(ফাইল চিত্র)