সাম্প্রতিক খবর

সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮

সাত বছরে পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নঃ এক নজরে

সাত বছরে পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নঃ এক নজরে

বিগত ৩৪ বছরের বাম আমলে কার্যত পাহাড় ছিল অবহেলিত। না ছিল কোনও উন্নয়নের প্রকল্প, না ছিল উন্নয়ন করার কোনও সদিচ্ছা বা পরিকল্পনা। ২০১১ সালে ক্ষমতা বদল হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস শাসনভার গ্রহণ করার পর থেকে পাহাড় হাসছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় পাহাড়ের উন্নয়নকে পাখির চোখ করে একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালে জিটিএ অ্যাক্টের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ৩৫টি দপ্তর জিটিএ অ্যাক্টের অধীনে নিজেদের অফিস তৈরীর কথা ঘোষণা করেছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পার্বত্য বিষয়ক বিভাগ গত ছয় বছরে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের জন্য ৩৯২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।সরকারের দীর্ঘকালীন প্রচেষ্টার ফলে দার্জিলিং জেলা ও ডুয়ার্স অঞ্চলের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক। উন্নয়নমুখী নানা প্রকল্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হয়ে উঠেছে। ফলে সমগ্র অঞ্চলে বর্তমানে শান্তির পরিবেশ বজায় রয়েছে।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক গত ছয় বছরে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য নেওয়া সরকারের কিছু পদক্ষেপঃ-

নতুন জেলা

একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে কালিম্পং-কে একটি পৃথক জেলা ও মিরিক-কে পৃথক মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বোর্ড গঠন

স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলির উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ১৬টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষন-সহ অন্যান্য উন্নয়নমুখী প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৩২০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

পরিকাঠামো উন্নয়ন

পার্বত্য এলাকায় সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ধসে ক্ষতিগ্রস্ত তিনধরিয়া এবং পাগলাঝোরার মধ্যবর্তী ৫৫নম্বর জাতীয় সড়ক, সেবক ও সিকিমের মধ্যবর্তী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের সংস্কার চলছে।
এএইচ ২ এবং এএইচ ৪৮ এর নির্মাণের কাজ চলছে। এই দুটি সড়ক চালু হলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সিকিম, নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হবে।
দার্জিলিঙের বিজনবাড়িতে বেইলি সেতুর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

পর্যটন

পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার চেষ্টা করে চলেছে।
কালিম্পং-এ মর্গ্যান টুরিস্ট সংলগ্ন এলাকায় ৮টি কটেজ গড়ে তোলা হয়েছে।
লেপচা সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে কালিম্পং-১ এবং সুখিয়াপোখরি ব্লকে ২টি সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
কালিম্পং-এ ১০০টি আসনসম্পন্ন একটি ইয়ুথ হোস্টেল তৈরী করা হচ্ছে। নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে ইতিমধ্যেই ২৯.৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
২কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে ৪টি একজিকিউটিভ শ্রেণীর বাস এবং স্থানীয় জায়গাগুলি ঘুরে দেখার জন্য ৪টি ছোট গাড়ি কেনা হয়েছে।
দার্জিলিঙের টাইগার হিলে একটি পরিবেশবান্ধব টুরিস্ট লজ গড়ে তোলা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রথম টাইগার সাফারি হিসাবে শিলিগুড়ি রয়্যাল টাইগার সাফারি গড়ে উঠেছে।
দার্জিলিং-এর লামাহাটায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন বিভাগ, পর্যটন ও বোন দপ্তরের সহায়তায় একটি পর্যটন হাব স্থাপন করেছে এবং সেটি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ২৭শে জানুয়ারি ২০১৩-এ উদ্বোধন করেছেন।
কালিম্পং-এ মর্গ্যান হাউস, হিলটপ এবং তাসিডাঙা টুরিস্ট লজের মেরামতি ও সংস্কার কাজ এবং জলদাপাড়া ও মূর্তিতে তাঁবু তৈরীর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

শিক্ষা

সুকনা ও মোঙ্গরজঙেম, ডেলস্কুল, দার্জিলিং-এ আরকেএএসপি গড়ে তোলা হয়েছে।
২০১৭-১৮’র শিক্ষাবর্ষে মডেল স্কুলগুলিতে পঠন-পাঠন চালু হবে।
পেডং এবং গরুবাথানে দুটি ডিগ্রী কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে।
কালিম্পং-এ একটি নতুন আইটিআই এবং একটি পলিটেকনিক কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। গরুবাথানে আরও একটি আইটিআই তৈরীর কাজ চলছে।
কার্শিয়াং-এর ডাওহিলকে একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। এই অঞ্চলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমালয়ান সেন্টার গড়ে তোলার কাজ চলছে।

স্বাস্থ্য

কালিম্পং-এ একটি হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (HDU) গড়ে তোলা হয়েছে।
দার্জিলিং জেলায় ৮টি এসএনএসইউ গড়ে তোলা হয়েছে।
শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিং-এ ২টি সিসিইউ গড়ে তোলা হয়েছে।
দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, কার্শিয়াং এবং নকশালবাড়িতে ৪টি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান তৈরী করা হয়েছে।
কার্শিয়াং-এ একটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি ১০০ বেডের ইএসআই হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে শিলিগুড়িতে। এছাড়াও ৪টি উপকেন্দ্র কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে

অন্যান্য কর্মসূচি

স্থানীয় ছেলেমেয়েদের খেলাধূলায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য হিমল-তরাই-ডুয়ার্স ক্রীড়া উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দার্জিলিং-এর রায়ভিলার সংস্কার কাজের জন্য রামকৃষ্ণ সেবা আশ্রমকে ১৮২.০৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দার্জিলিং-এ থাকাকালীন ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতি এবং অন্যান্য মূল্যবান রেকর্ডসমূহ সেখানে রাখা হয়েছে। এটি দার্জিলিং-এর ভ্রমণ ম্যাপের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দার্জিলিং-এর কার্শিয়াং-এ টয়লেট ব্লকসহ গাড়িধুরা পুলিশ ফাঁড়ির দোতলা ভবনের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।