সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮
পুজোর মুখে পাতে পড়বে শহুরে ভেড়ির বোরোলি

উত্তরবঙ্গের মানুষরা গর্ব করে বলেন, কলকাতায় বসে মৎস্যপ্রিয় বাঙালি অন্য সব মাছ খেতে পারেন ঠিকই, কিন্তু মিষ্টি স্বাদের, উৎকৃষ্ট মানের ও মহার্ঘ বোরোলি মাছ পেতে ভাগীরথী পেরিয়ে উত্তর দিকে পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের দাবী, এ বার বোরোলির ওই ‘মিথ’ তারা ভেঙে দেবে। এ বছর শারদোৎসবের মুখেই নলবন ও লাগোয়া গোলতলার ভেড়িতে চাষ করা বোরোলি কলকাতা ও আশপাশের বাজারে সরবরাহ করা যাবে বলে নিগমের ধারণা।
বোরোলি নদীর মাছ। অসমের একাধিক নদী থেকে বোরোলির চারা সংগ্রহ করে ওই দু’টি ভেড়িতে ছাড়া হয়েছিল মাস চারেক আগে। মৎস্য উন্নয়ন নিগমের কথায়, বোরোলি নিয়ে তাদের পরীক্ষা সফল। এখন ওই দু’টি ভেড়ি মিলিয়ে সাড়ে চার লক্ষ বোরোলি আছে। মাছগুলির ওজন এখন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম। তাদের ওজন ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম হলে বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা নিয়েছে নিগম। বোরোলি যেখানকার নিজস্ব মাছ, সেই উত্তরবঙ্গ ও অসমে ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম ওজন বা তার চেয়েও ছোট বোরোলি বিক্রি করা হয়।
চা বাগান, পাহাড়, জঙ্গলের নিসর্গ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের আর একটি গর্ব এই বোরোলি মাছ। প্রায় দু’দশক আগে মোটামুটি পরিকল্পিত ভাবে উত্তরবঙ্গকে, বিশেষ করে ডুয়ার্সকে পর্যটনের জায়গা হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বোরোলি ছিল অন্যতম উপাদান।
তবে বোরোলি মাছ জন্মায় ও বেড়ে ওঠে তিস্তা, তোর্সা, মানসাইয়ের মতো খরস্রোতা নদীতে। সেখানে তাপমাত্রাও কম। এয়ার জেট দিয়ে ভেড়ির জলে স্রোত তৈরী করে, অক্সিজেনের প্রবাহ জুগিয়ে বোরোলিদের বাঁচিয়ে রেখে তাদের বড় করা সম্ভবপর হয়েছে।
নিগমের এক আধিকারিক বলেন, ‘নদীর জলের কম তাপমাত্রার কথাও আমরা মাথায় রেখেছি। তাই, ভেড়ির জলে সূর্যের আলো যাতে সরাসরি না পড়ে, সেই জন্য তার উপরে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। কৃত্রিম পরিবেশ তৈরী করে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে জয় করা গিয়েছে।’
নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, ‘বোরোলি ছাড়া আরও বেশ কিছু নতুন মাছ চাষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিগমকে। এখানে যে সব মাছ চাষের চল নেই, তেমন মাছের চাষ হচ্ছে। নলবন, গোলতলার মতো নিগমের নিজস্ব প্রকল্প এলাকাগুলিতে ওই সব মাছের চাষে সাফল্যও মিলেছে।’ মৎস্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন ধরনের মাছের চারাগুলি চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে হলে সে সবের হ্যাচারি তৈরী করা দরকার।’