ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
বিজেপি শুধু মিথ্যে কথা বলে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দিল্লির প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখে নিন মুখ্যমন্ত্রী কি বললেন:
জোট প্রসঙ্গে
আমরা কাল যা বলেছি, বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থান আলাদা।, রাজ্যের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কি ইচ্ছে ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। এই সব বিষয়ের ওপর নজর রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাজ্যে আমরা যার সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দিতা করি না কেন, জাতীয় স্তরে আমরা প্রাক-নির্বাচন জোট করবযাতে নির্বাচনের পর সরকার গঠনের দাবি জানাতে পারি।
বামেদের সঙ্গে আমাদের এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। কালকের সভায় অনেক বিরোধী নেতা ছিলেন। অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যারা এখনই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, আমরা তাদের সম্মান করি, এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের পরেও তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয়, কোনও সমস্যা নেই।
বাংলায় জোট প্রসঙ্গে
আমাদের রাজ্যে তো সিপিএম কংগ্রেস আমাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়েছে। কংগ্রেস মধ্যপ্রদেশে লড়বে, আমরা সেখানে লড়তে যাচ্ছি না। রাজস্থানে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি, সেখানে সে লড়বে, আমরা সেখানে প্রতিদ্বন্দিতা করব না। আমার রাজ্যের পরিস্থিতি আলাদা, উত্তর প্রদেশের আলাদা, অন্ধ্রপ্রদেশের আলাদা, দিল্লীর আলাদা।
আমি যে রাজ্যে শক্তিশালী, সেখানে আমি লড়ব। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দিল্লীতে সরকার, অনেক কষ্ট করে সরকার গড়েছে। প্রতিদিন ওকে সমস্যায় ফেলা হচ্ছে।
দেশের মানুষ বুদ্ধিমান। তারা জানে কে নির্বাচন জিততে পারে, কে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে পারে। তারা জানে কাকে ভোট দিতে হবে। মানুষ আমাদের সম্পদ, এটা তাদের ওপর ছেড়ে দিন।
আমরা চাই জাতীয় স্তরে মোদী-শাহের দল বিদায় নিক। এই পরিস্থিতি এমার্জেন্সির থেকেও খারাপ। আমাদের সকলকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আজ এক হওয়া উচিৎ। আমি সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু, মোদী সরকারকে আসতে দেব না। ওদের আগে বিদায় করতে হবে। তারা এই দেশের উপযুক্ত না। দেশের অখন্ডতা রক্ষা করতে হবে। ওরা দেশকে বেঁচে দিয়েছে।
বিজেপিও তো রাজ্য-কেন্দ্রিক স্ট্রাটেজি তৈরী করছে
আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছি, বিজেপি আর ক্ষমতায় আসবে না। ওদের এক্সপায়ারি ডেট পার হয়ে গেছে।
বাংলায় বিজেপির র্যালিতে বাধা প্রসঙ্গে
ওরা মিথ্যে বলছে। সোয়াইন ফ্লু নিয়েও র্যালি করেছে। চার-পাঁচজন মুখ্যমন্ত্রী গেছে, ১০/১২জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়ে গেছে, এত সভা করেছে, আর বলছে সভা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের এত ভয় কেন?
কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম প্রসঙ্গে
আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবনা। কংগ্রেসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, খসড়া তৈরী করতে। খসড়া তৈরী হোক, তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
বাংলার শিল্প-বিমুখ ভাবমূর্তি প্রসঙ্গে
আমরা শিল্প ও কৃষি দুই ক্ষেত্রকেই প্রাধান্য দিই। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দুটিরই প্রয়োজন আছে। দুটির মধ্যে ব্যালেন্স করে এগোতে হবে। শিল্প এবং কৃষি দুই বোনের মত, একে ওপরের পরিপূরক।
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে
আমরা এই ঘটনার নিন্দা করেছি এবং শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছি। সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
চিটফান্ড প্রসঙ্গে
১৯৮০ সাল থেকে দেশে চিটফান্ড সক্রিয়। সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দায়িত্ব ছিল এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা, কিন্তু করেনি। আমাদের সরকার ২০১১ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর আমরা বাটালিক থেকে চিট ফান্ডের মালিককে গ্রেপ্তার করি। আমরা জুডিসিয়াল কমিশন, সিট গঠন করেছি। জুডিসিয়াল কমিশনের মাধ্যমে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের ৩০০কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। এরপর সুপ্রীম কোর্ট কেসটা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। আমরা চাই সিবিআই ও ইডি যত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, সেখান থেকে টাকা ফেরত দিক।
ওরা আমাদের কেন হয়রান করছে? আমি যদি কোনও অনুষ্ঠানে যাই, আর কেউ আমার ছবি তোলে, আমি কি করতে পারি? সাহারা তো ভারতের ফুটবল, ক্রিকেট টিমকে স্পনসর করেছে। করেনি? তাহলে সাহারার ‘রেড ডায়েরি’ কোথায় গেল? ওদের ওপর তো ৫০,০০০ কোটি টাকার মামলা চলছে। আর এই কেসে তো অসমের উপমুখ্যমন্ত্রী ৩ কোটি টাকা নিয়েছে। ওকে তো কিছু করেনি, গ্রেফতার করেনি। বিজেপি-তে যারা যায় তাদের ছেড়ে দেয়।
সিবিআই-র অফিসার-রা তো আর খারাপ নয়, আমি তাদের সম্মান করি। আমি কেন্দ্রের আর রাজ্যের অফিসারদের মধ্যে কোনও ফারাক রাখি না। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, মোদী আর অমিত শাহ ওদের বাড়ীতে ডাকে। আর দোভাল-ও ডাকে। এর খবর আমাদের কাছে আছে। ডেকে বলে কিছু তো করুন, একে ধরো, ওকে ধরো – এটা ঠিক না। এটা বিজেপি-র প্রচারণা এবং ওই জন্যে ওরা তলিয়ে যাচ্ছে, মানুষ আর ওদের সাপর্ট করে না।
মোদীর বিরুদ্ধে কে
আমরা সবাই, সারা দেশ। একজনের বিরুদ্ধে ১০০ জন।
নাগরিকত্ব বিল প্রসঙ্গে
নাগরিকত্ব বিল আটকে গেল কেন? উত্তর পূর্ব ভারতে গিয়ে দেখুন, গতকাল ওরা উৎসব করেছে। যে ২৫টা আসন পাওয়ার আশা ছিল বিজেপির, সেটাও গেল।
আমরা সবাইকে সম্মান করি। সব ধর্মের মানুষ-কে সম্মান করি। দেশের নেতা সে, যে সবাইকে নিয়ে চলে। সে নয় যে মানুষের মধ্যে ফারাক গড়ে তোলে।
বিজেপি-র অহঙ্কার প্রসঙ্গে
ওরা দাম্ভিক হয়ে গেছে। শুধু মিথ্যে কথা বলে। সুব্রাহ্মণ্যম স্বামী-ও বলেছেন যে ওদের হাতে দুটো মিডিয়া চ্যানেল আছে। আমি বলছি না, বিজেপি-র একজন সাংসদ বলছে।
টিআরএস এবং বিজেডি প্রসঙ্গে
চন্দ্রশেখর রাও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী আর নবীন পট্টনায়েক ওদিশার। আমরা দুজনকেই সম্মান করি।
স্টিং অপারেশন প্রসঙ্গে
আমি এই নিয়ে কথা বলতে চাই না। বিজেপি এগুলো টাকার জন্যে করে। কাউকে খাবার আর থাকার জায়গা দিতে পারছে না ওদিকে স্টিং অপারেশন করছে।
রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে
রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।
রাফেল দুর্নীতি প্রসঙ্গে
এটা একটা বড় দুর্নীতি। নোটবন্দী একটা বড় দুর্নীতি। এই সরকারের পতন হলে সত্য উদ্ঘাঠিত হবে।
ভবিষ্যত কর্মসূচি প্রসঙ্গে
আমাদের দেশ বাঁচাতে হবে, নিজেদের নয়। দেশের মানুষ ঠিক করবেন ভবিষ্যতে কি হবে।