সাম্প্রতিক খবর

অগাস্ট ২৮, ২০১৮

বাইরে থেকে লোক এনে বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

বাইরে থেকে লোক এনে বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ ২৮শে আগস্ট। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রত্যেক বছরের মতোই মেয়ো রোডের পাদদেশে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে দল। প্রধান বক্তা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই সমাবেশের মঞ্চ থেকে আজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো দূরের কথা, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কাছেই তারা ১০-০ গোলে হারবে।

অভিষেকের বক্তব্যের কিছু অংশ:

আজকের এই সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের নেত্রীর কাছ থেকে দিকনির্দেশ নিতে আজ আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। তিনি আগামী দিনে আমাদের পথ দেখাবেন।

গত ১১ তারিখ ভারতীয় জনতা পার্টি এই মাটিতে সভা করেছে। সভা করেছে না সার্কাস করেছে, বাংলার মানুষ বুঝতে পারেনি।

আজকে যারা এসেছে, তারা প্রমাণ করছে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের বুকভরা, মুষ্টিবদ্ধ আবেগ, অহংকার প্রমাণ করে দিচ্ছে যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার করে, কুৎসা করে, অভিযোগের আঙুল তোলে, তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও ব্লক প্রেসিডেন্ট তো অনেক দুরের কথা, কোনও নেতা তো দুরের কথা, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সঙ্গে মাঠে লড়াই করার ক্ষমতা তাদের নেই।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল যুব কংগ্রেস বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে সংগঠন তৈরী করেছে, আমি দিলীপ বাবুদের বলতে চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো অনেক দুরের কথা, আপনারা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কাছে ১০-০ গোল খেয়ে যাবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা বাংলার মানুষ আপনাদের দেয় নি।

অর্বাচীন, অসমীচীন কথায় তারা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছে, তারা কথায় কথায় বলছে গর্তে ঢুকিয়ে দেব, হাত ভেঙে দেব, পা ভেঙে দেব, স্ট্রেচারে শুইয়ে দেব, শ্মশানে পাঠিয়ে দেব, হাসপাতালে ঢুকিয়ে দেব।

আমি দিলীপবাবুদের প্রশ্ন করতে চাই, আপনি কোন হাসপাতালে পাঠাবেন? যে মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরী করেছেন? আপনি কোন শ্মশানে পাঠাবেন? যে শ্মশানের ঘাটগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংস্কার করেছেন? আপনি কোন বাড়িতে ঢোকাবেন? যে বাড়িগুলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক প্রসূত গীতাঞ্জলী প্রকল্পে বাংলার মানুষ হাতে হাতে পেয়েছে? আপনি কোন মাটিতে পুঁতবেন? যে মাটি সোনার ফসল ফলায়?

তাদের এমন দুরবস্থা, বাংলায় কোনও নেতা, কর্মী নেই। ভাড়া করে নেতা নিয়ে আসতে হচ্ছে। তারা বাংলা জানে না, বাংলার সংস্কৃতি জানে না, বাংলার কৃষ্টি জানেনা, বাংলার ঐতিহ্য জানে না, বাংলার সভ্যতা জানে না। নেতা, কর্মী নিয়ে আসছে ভাড়া করে, মঞ্চ বাঁধার লোক নিয়ে আসছে ভাড়া করে আর বলছে বাংলা দখল করব। দলটার লক্ষ্য, কর্মসুচী, উদ্দেশ্য নেই।

বলছে ২২টা সিটে লড়ব, আমি বলি লোকসভার ২২টা বুথে জিতে দেখাও। আমরা বদলা নয়, বদল চাইয়ের স্লোগান দিই। আমরা সিপিএম-র মত ৩৪ বছর ধরে ভেঙ্গে দাও-গুঁড়িয়ে দাও-র রাজনীতি করি না। আমরা সাজিয়ে দাও, গুছিয়ে দাও, বানিয়ে দাও-এর রাজনীতি করি।

সাত বছর আগে যেখানে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল তমসাছন্ন, সেখান থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আজকে বাংলা শিক্ষার আলো দেখছে। ২৪ টা সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের রাজ্যে গড়ে উঠেছে। ৫০ টার বেশী সরকারী কলেজ হয়েছে। প্রচুর বিদ্যালয়ের উন্নতিসাধন হয়েছে।

আমরা বলেছিলাম সিঙ্গুরের জমি ফিরিয়ে দেবো, আমাদের নেত্রী তা করেছে। আর ওরা বলেছিল ‘আচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হ্যায়’ , বলেছিল ২ কোটি লোকের চাকরি হবে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও সেই চাকরি দেখা যাবে না।

হাজার চেষ্টা করে, ধমকে বা চমকে অনেক রাজনৈতিক দলকে থামানো গেছে, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে থামানো যাবে না। এই দলটা বিশুদ্ধ লোহার মত, তাকে যত মারবে, আঘাত করবে তত সে ভালো হবে।

আপনারা যা অভিযোগ করেছেন, তা প্রমাণ করুন। অভিষেক বন্দোপাধ্যায় মৃত্যবরণ করতে রাজি আছে কিন্তু বাঁদরামি আমরা সহ্য করতে পারব না। আমরা লড়াই করতে জানি, আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দিতে জানি, এই লড়াই জারি থাকবে।

কবি সুকান্তর কথায় আমি বলে যাই- আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই, স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই। এই লড়াই জারি থাকবে।

আমার মনে পরে যায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর কথা। তিনি বলেছিলেন তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। আর দিলীপ বাবুরা বলে, তুমি আমাকে গদি দাও, আমি তোমাকে রক্তস্নাত করব।

তৃণমূল কংগ্রেস চুপ করে থাকার দল নয়, তৃণমূল কংগ্রেস লড়াইটা মাঠে ময়দানে বুঝে নেবে। যারা বলে তৃণমূল কংগ্রেসকে এই করব, তাই করব, মমতা বন্দোপাধ্যায় যদি অনুমতি দেন, শুধু ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল যুব কংগ্রেস, মাঠে ময়দানে ফুটো কলসির কত দম আছে, গণতান্ত্রিক ভাবে আমরা বুঝে নেব। সুতরাং চমকে ধমকে কোনও লাভ নেই। তৃণমূল কংগ্রেসকে কোনদিন রোখা যাবে না।

স্বামী বিবাকানন্দ যদি চুপ করে থাকতেন, তাহলে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করার মত মানুষ আমরা পেতাম না। আজকে ঐ দল তাঁর চিন্তাভাবনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঠিক করে দিতে চাইছে, কে কী খাবে বা পরবে।

সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব, তিনি যদি চুপ করে থাকতেন তা হলে আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরী করে বৃটিশদের ভিত নড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকত না।

রাজা রামমোহন রায় যদি চুপ করে থাকতেন তা হলে সতিদাহ প্রথা বন্ধ হত না।
আর মমতা বন্দোপাধ্যায় যদি চুপ করে থাকতেন তাহলে আজও সিপিএম-এর বন্দুকের তলায় আমাদের মাথা নিচু করে থাকতে হত। তাই মমতা বন্দোপাধ্যায় আর তৃণমূল কংগ্রেস চুপ করে থাকেনি।

আসুন আজ আমরা অঙ্গিকার করি, এই লড়াই আমাদের জারি থাকবে, এই শপথ আমাদের নিতে হবে যে আগামীদিন এই সংগ্রাম, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, তৃণমূল যুব কংগ্রেস, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াইটা চালিয়ে যাবে।

ছাত্র-যুবর সংগ্রাম চলবেই, আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ, প্রনাম ও সেলাম জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি, জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম, তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ, মমতা বন্দোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, শিক্ষা ও প্রগতি জিন্দাবাদ, সংঘবদ্ধ জীবন জিন্দাবাদ, তৃণমূল যুব কংগ্রেস জিন্দাবাদ, বন্দে মাতরম।