অগাস্ট ২১, ২০১৮
বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ড - সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলার হস্তশিল্প

ক্ষমতায় এসে গ্রাম বাংলার শিল্পসামগ্রী দেশের গণ্ডি পার করে বিদেশেও ছড়িয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রী ‘বিশ্ববাংলা’ বিপণি চালু করেছিলেন৷ এবার সেই বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ড পাড়ি দিচ্ছে হায়াদ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, জয়পুর এবং কাশীতে। বর্তমানে বাংলা ও দিল্লী মিলিয়ে বিশ্ব বাংলার আটটি শো রুম আছে।
এই ব্র্যান্ড ইতিমধ্যেই রাজ্যের সাংস্কৃতিক সম্পদকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে সফল হয়েছে। বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ডের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ, গত আর্থিক বছরে আয় করেছে ২০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে এই ব্র্যান্ড বিপণন শুরু করে ৫০০০টি দ্রব্য নিয়ে, এই মুহূর্তে এই ব্র্যান্ডের দ্রব্যের সংখ্যা ১০০০০।
হস্তশিল্পের পুনরুজ্জীবন
রাজ্যের বস্ত্রশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা থেকে শুরু করে নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড শুরু করা – সবেতেই এগিয়ে এই ব্র্যান্ড। এই মুহূর্তে লক্ষ্য শো রুম ও দ্রব্যের সংখ্যা বাড়ানো। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও বস্ত্র দপ্তরের সচিব জানিয়েছেন বাংলার হারিয়ে যাওয়া কুটির শিল্প পুনরুদ্ধার করতে চায় এই বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ড।
দেশব্যাপী ব্যবসার কথা মাথায় রেখে বিশ্ব বাংলা নতুন দ্রব্যের কথা ভাবছে। নেটেল ফাইবার ও বাঁশের তন্তু দিয়ে বস্ত্র তৈরী করছে। ডোকরার কাজে প্রাচীন মেটাল কাস্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে আধুনিক গয়না ও ঘর সাজানোর সামগ্রী। অল্প সংখ্যায় রামায়ণ শাড়ি ও পিয়েট্রা দুরা জামদানি শাড়িও তৈরী করা হচ্ছে।
কর্মসংস্থান
বিশ্ব বাংলা বিপণিতে যে সব দ্রব্য বিক্রি করা হয়, সেগুলি সবই রাজ্যের শিল্পীরাই তৈরী করেন। সরকার শুধুমাত্র শিল্পীদের বরাত দিয়েই বিরত থাকে না, উন্নত যন্ত্র, ভালো কাঁচামালের জোগান এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে তাদের। বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ড তৈরী হওয়ার ফলে ফের জীবিকা অর্জন করছেন রাজ্যের হস্তশিল্পীরা।
একটা সময় ছিল যখন এই শিল্পীরা শুধু হস্তশিল্প মেলাতেই নিজেদের তৈরী সামগ্রী বিক্রির সুযোগ পেতেন। এখন খুলে গেছে নতুন বাজারের দ্বার। বর্তমানে সরকারি সাহায্যের ফলে সরাসরি বিক্রীর সুযোগ পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন তারা।
আনুমানিক ১২০০০ হস্তশিল্পীর গড় আয় বেড়েছে প্রায় ৫২০০ টাকা। তাদের মধ্যে প্রথম সারির ৩০ শতাংশ হস্তশিল্পীর আয় বেড়েছে প্রায় ১২০০০ টাকা।
পর্যটনের বিকাশ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ
শুধু হস্তশিল্পের পুনরুদ্ধার নয়, এই ব্র্যান্ড আরও অনেকভাবে রাজ্যের অর্থনীতির বিকাশে সাহায্য করছে। যেমন পর্যটন। যে সব অঞ্চলে এই শিল্পীরা থাকেন, সেখানকার আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বদলেছে অনেকটাই। বিকনা ও দরিয়াপুরের মত গ্রাম – যেখানে ডোকরা তৈরী হয় – এখন উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রও বটে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম – যেখানে ৬০টি ডোকরা শিল্পীর পরিবার আছে – সেখানে দেশী ও বিদেশী পর্যটক সারা বছর আসছেন। এর ফলে কাজের মানও বেড়েছে। পুরুলিয়া জেলার চরিদা গ্রামে ছৌ মুখোশ প্রস্তুতকারকরা বসবাস করেন; এই গ্রামও এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
গত চার বছর ধরে এই গ্রামীণ শিল্প হাবগুলিতে হস্তশিল্প মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। দেশ, বিদেশ থেকে প্রায় ৮০০০ জন পর্যটক এই গ্রামগুলিতে এ’পর্যন্ত এসেছেন।