অগাস্ট ১৪, ২০১৮
কন্যাশ্রী দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর নতুন উপহার: কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়

আজ কন্যাশ্রী দিবস উদযাপন করলো বাংলা সরকার। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্বপ্নের প্রকল্পের সূচনা হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য মেয়েদের শিক্ষিত ও স্বনির্ভর করে তোলা এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করা।কন্যাশ্রী দিবস উপলক্ষে আজ নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী অবিবাহিত কন্যাদের পড়াশোনার জন্য বছরে ১০০০ টাকা বৃত্তি প্রদান করে রাজ্য সরকার। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় ১৮ বছর হওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য এককালীন ২৫০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়া এখন বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও পৌঁছে গেছে এই প্রকল্প। যারা বিজ্ঞান পড়বে তাদের মাসে ২৫০০ টাকা ও যারা কলা বিভাগে পড়বে তাদের মাসে ২০০০ টাকা করে দেওয়া হয় এই প্রকল্পে।দেশ বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিস্কপ্রসূত এই প্রকল্প। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ এই প্রকল্পটিকে United Nations Public Service Award First Prize সম্মানে ভূষিত করে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
আজকের দিনটি আমরা উৎসর্গ করছি আমাদের কন্যা সন্তান অর্থাৎ আমার কন্যাশ্রী বন্ধুদের। আমি বিশ্বাস করি, একদিন সারা পৃথিবী জুড়ে এই কন্যাশ্রী দিবস পালন হবে। কারণ, ‘কন্যাশ্রী’ আগামী বিশ্বের সবচেয়ে বড় মডেল।
কন্যাশ্রী মেয়েরা শুধু আমাদের রাজ্যের গর্ব, এরা দেশের গর্ব এবং সারা পৃথিবীর গর্ব। এই কন্যাশ্রী মেয়েরাই জগৎ জয় করতে পারে, সভ্যতা – সংস্কৃতি জয় করতে পারে।
আমার প্রায় ৫০ লক্ষ কন্যাশ্রী আছে। কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হওয়ার পর মেয়েদের স্কুল ছুটের হার প্রায় ১১.৫ শতাংশ কমেছে, যা মেয়েদের উন্নয়ন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকে ভোটের সময় এসে বলে, মেয়েদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ হওয়া উচিত। আমাদের বাংলায় ইতিমধ্যেই লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সাংসদ ৩৫.২৯ শতাংশ, যা বিশ্বের সবথেকে বেশী আর সারা ভারতে এই সংখ্যাটা হয়ত ১২.২ শতাংশ হবে। সরকার নিয়ম করার আগেই, সংসদ নিয়ম করার আগেই, আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, আইন না করেও হয়।
যে ৩ লক্ষ মেয়েরা কন্যাশ্রীর অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তাদেরকেও এবার থেকে কন্যাশ্রীর অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হল। এখন থেকে সকল মেয়েরাই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবে। এজন্য আরও ২০০ কোটি খরচ হবে রাজ্য সরকারের। কিন্তু আমাদের সমাজের ভবিষ্যতের জন্য এই ২০০ কোটি টাকা খরচ করতে আমি দ্বিধা করি না। কারণ, এই ২০০ কোটির বদলে ওরা ২ লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে আসবে, সম্মান রক্ষা করে।
আগামী দিনে আমার ইচ্ছে আছে, নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরকে বাস্তবায়িত করতে হবে, একটা কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে চাই। কন্যাশ্রীর নামে উত্তরকন্যায় আমাদের গেস্ট হাউস আছে, কন্যাশ্রীর নামে লঞ্চ আছে, কন্যাশ্রীর নামে অনেক প্রোজেক্ট আছে। আমি কন্যাশ্রীর নামে একটা বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিতে চাই, যাতে কন্যাশ্রীর মেয়েরা গর্ব করে পড়াশুনা করতে পারে। তারা পড়াশুনা করে বলবে, দেখো আমরা সমস্ত সুবিধা পাচ্ছি। কোনদিন চিন্তা করতে হবে না পড়াশুনা করতে আমি কোথায় যাবো, মাধ্যমিক পাশ করে আমাকে আবার খটখট করে দরজা নাড়তে হবে না তো। ভর্তি নিশ্চিত করে দিতে হবে।
অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীরা কে-১ পায়, কলেজে ক-২ পায়, যারা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করবে, সেই কন্যাশ্রীর মেয়েদের ২০০০ টাকা করে আর্টসের স্কলারশিপ এবং যারা সায়েন্সে পড়বে তাদের ২৫০০ টাকা করে স্কলারশিপ করে দেওয়া হয়েছে।
আমি চাই শিক্ষা দপ্তর থেকে কন্যাশ্রীর মেয়েদের জন্য স্পেশাল ট্রেনিং ক্যাম্প করুক, দক্ষতা বিকাশ দপ্তর কন্যাশ্রীর মেয়েদের চাকরী নিশ্চিত করার জন্যে, ভালো করে প্রশিক্ষণ দিক, তাদের পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করবার সুযোগ দিক।
আমি চাই এই ৫৩ লক্ষ মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হোক যাতে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের যেন ভিক্ষে করতে না হয়,কারও দরজায় দাঁড়াতে না হয়। এটাই ওদের স্বপ্নের ভোর হবে, এই স্বপ্নটাকে বাস্তবায়িত করতে হবে। এরাই তৈরী করবে রাজ্য, এরাই গড়ে তুলবে দেশ, এরাই গড়বে বিশ্ব, আমি সেটাই চাই।
আপনারা জানেন আমাদের বাংলায় পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষিত আছে। বাংলায় মাতৃত্বকালীন ছুটি ৭৩১ দিন দেওয়া হয়, যাতে মহিলারা বাচ্চা মানুষ করতে পারে। এমনকি ছেলে মেয়েদের যখন পরীক্ষা হয় তখনও কিন্তু মায়েরা ছুটি পায়। বাবাদের জন্যও পিতৃত্বকালীন ছুটি এক মাস দেওয়া হয়েছে।
এই বাংলায় গরীব মেয়েরা, যাদের পরিবার বিয়ে দিতে পারেনা, তাদের জন্যেও একটা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সেটার নাম হচ্ছে রূপশ্রী।কন্যাশ্রীর মেয়েরা ১৮ বছর বয়স অবধি পড়াশুনা করলে ২৫ হাজার টাকা এককালীন পায়। তেমনি গরীব মেয়েরা হয়তো তারা কন্যাশ্রী নয়, তাদের জন্য সরকার ২৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছে, তাদের বিয়েতে। এই প্রকল্পের নাম হচ্ছে রূপশ্রী।
নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা যাতে সাইকেলে করে স্কুল যেতে পারে, তাই আমরা সাইকেলও দিচ্ছি সবাইকে। ‘সবুজ সাথী’-র সাইকেল আমরা দিচ্ছি। তোমরা ভালো করে পড়াশুনা করো, খেলাধুলা করো, সংস্কৃতি চর্চা করো, নাটক করো, গান করো, ক্যারাটে করো, রূখে দাড়াও, অন্যায়ের প্রতিবাদে করো।
ভাঙো, অত্যাচার ভাঙো, অন্যায় ভাঙো, দাঙ্গা ভাঙো, কুৎসা ভাঙো, ভেদাভেদ ভাঙো, অপপ্রচার ভাঙো, সংকীর্ণতা ভাঙো। এসো আমরা গড়ি। এসো আমরা তৈরী করি। বাংলা কখনো হার মানে না। বাংলা এগিয়ে যেতে শিখেছে। বাংলা মাথা নত করে চলে না। আমরা চলি সমুখ পানে, কে আমাদের বাঁধবে। রইল যারা পিছুর টানে, কাঁদবে তারা কাঁদবে।
ভয়কে বরাভয় করে এগিয়ে যেতে হবে। এই সমাজ তোমাদেরই সংস্কার করতে হবে। এই সমাজে শান্তি তোমাদেরই রক্ষা করতে হবে। এই সমাজে ভেদাভেদ, বিভেদ, দাঙ্গা তোমাদের রোধ করতে হবে। কাজ করতে করতে আমরা বড়রা একদিন চলে যাবো। তোমরা ছোটরা থাকবে। তোমাদের সুন্দর করে আগামীদিনে এগিয়ে যেতে হবে।
যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। সংসার করলেই কাজ করতে পারবে না, এটা হয় না। মেয়েরা যদি মনে করে তাহলে তারা অনেক ভালো কাজ করতে পারে। আমি তোমাদের মধ্যে সেই স্বপ্ন দেখতে পাই। তোমরা করবে, লড়বে আর গড়বে। কেউ যদি তোমাদের দেখে ঠাট্টা করে, বলবে লড়তে পারলে লড়, করতে পারলে করো, গড়তে পারলে গড়, না পারলে মানে মানে সরে পড়ো। আমাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে এসো না। আমরা পথ দেখাই, রাস্তা চেনাই তাইতো আমরা শিক্ষিত হচ্ছি। তাইতো আমরা এগিয়ে চলছি।
কাল দেশের স্বাধীনতা দিবস। আমরা স্বাধীনতা দিবসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই কন্যাশ্রী দিবস পালন করছি। দেশমাতৃকার গান আমরা গাই। এই মাটি আমাদের জন্মভূমি। এই মাটি আমাদের কর্মভূমি, পৃতিভূমি, ধর্মভূমি, সভ্যতার ভূমি, সংস্কৃতির ভূমি, কন্যাশ্রীর ভূমি।
আপনাদের সবাইকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। কন্যাশ্রীরা বিশ্বজয় করবে এটাই আমার স্বপ্ন। পারব, পারব, পারব, জিতব, জিতব, জিতব – এটাই হোক তোমাদের কথা। জয়ী হও, জয়ী হও, জয়ী হও। জয় হিন্দ। বন্দে মাতরম।