সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
কৃষিতে উন্নতি – পথ দেখাচ্ছে বাংলা

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মা, মাটি, মানুষের সরকার নানা নীতি ও প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রকে পুনরুজ্জীবিত করেছে গত ছ’বছরে। পরপর পাঁচ বছর রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি কর্মণ পুরস্কার পেয়েছে।
কৃষি ও কৃষি-সম্পর্কিত ক্ষেত্রে গত ছয় বছরে ব্যায় বেড়েছে প্রায় ৬ গুন। ২০১০-১১ সালে ৩০২৯ কোটি টাকা’র থেকে বেড়ে ২০১৬-১৭ সালে হয়েছে ১৮,৩২৬ কোটি টাকা। এক সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্য সরকার কৃষিজমিতে কর মুকুবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে শুধু কৃষকদের সমস্যা কমবে তাই নয়, ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন এবং আয় বাড়াতেও সাহায্য করবে।
কৃষি ক্ষেত্রে আয়ও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। কৃষক পরিবার পিছু ২০১০-১১ সালে বার্ষিক আয় ছিল ৯১,০০০ টাকা যা ২০১৫-১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ২,৯০,০০০ টাকা। ২০১৭ সালের সরকারের বাজেটে নোটবাতিলের কুপ্রভাবকে মাথায় রেখে ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য।
কৃষিক্ষেত্রে বাংলা পেয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য। তারই কিছু নিদর্শন:
১. মানবজাতিকে খাদ্য সরবরাহ ও বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণে মাটির গুরুত্ব এবং কৃষকদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতে এই প্রথম ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ‘মাটি উৎসব’ পালিত হয়ে আসছে। বর্ধমানে ‘মাটি তীর্থ-কৃষি কথা’ নামে একটি স্থায়ী প্রদর্শন চত্ত্বর তৈরি করা হয়েছে। এই অভিনব অনুষ্ঠানটি রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রশংসা পেয়েছে।
২. পশ্চিমবঙ্গ দেশের সেই কতিপয় রাজ্যগুলির অন্যতম যারা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে সাধ্যের মধ্যে থাকা ভাড়ায় আধুনিক বৃহৎ কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কাস্টম হায়ারিং সেন্টার তৈরি করেছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে প্রায় ৬০০টি কাস্টম হায়ারিং সেন্টার তৈরির জন্যে গ্রামীণ উদ্যোগপতিদের ৪০কোটি টাকার ওপর ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যাতে দারিদ্র কৃষকদের শস্যের ক্ষতি না হয়, তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সফলভাবে ও সময়মত ‘বাংলা ফসল বিমা যোজনা’ রূপায়িত। নিজের দেয় অর্থরাশির সঙ্গে কৃষকদের ১০০ শতাংশ প্রিমিয়াম-ও সরকার দিয়ে দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এর আওতায় এসেছেন ৩১ লক্ষ কৃষক।
৪. ২০১৫-১৬ সালে একটি অভিনব সয়েল হেলথ কার্ড (এসএইচসি) প্রকল্প চালু হয়েছে। এর উদ্দেশ্যে মাটি বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্যের সুব্যবস্থা ও বিভিন্ন শস্যের জন্যে সার ও অণু-সারের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের পরামর্শ সহ এসএইচসি বণ্টন। এখনো পর্যন্ত কৃষকদের প্রায় ৩১ লাখ এসএইচ সি প্রদান করা হয়েছে।
ভারতের কৃষি ক্ষেত্রের একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে কৃষিজাত পণ্যের বিপণন। এক্ষেত্রে রাজ্য এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে কৃষিজ পণ্যকে বাজারযাত করার পরিকাঠামো তৈরি করার। এর মাধ্যমে চাষিরা উপযুক্ত মুল্য পায়।
১. পরিকাঠামোগত ও সাহায্যকারী প্রকল্প যেমন আমার ফসল আমার গোলা (ছয় বছরে ২৯.০৫ কোটি টাকার মাধ্যমে উপকৃত মানুষের সংখ্যা ৩৯৩২৯) এবং আমার ফসল আমার গাড়ি (গত ছয় বছরে ২৬.৮৮ কোটি টাকার বিনিময়ে উপকৃত হয়েছে ২৬৭৮১ জন) প্রকল্পে সরকারের এই প্রকল্পগুলি নিজের লক্ষ্য পূরণ করে চলেছে।
২. ১৮৬টি কৃষক বাজার (ব্লক স্তরের প্রাথমিক বাজার যেখানে কৃষিজাত উৎপাদনের আদান প্রদান, সঞ্চয়, প্যাকেজিং-এর সুবিধা আছে) খোলা হয়েছে।
সেইজন্যেই বলা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার এখন উর্দ্ধমুখী।