অগাস্ট ১৩, ২০১৮
সরকারি কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে তৃণমূল আমলে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রতিটি সরকারি দপ্তরে কম্পিউটার সংযুক্তিকরণের কাজ হয় সম্পন্ন নয়তো শেষের মুখে। সরকারের তরফে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে অ্যাপ ও অন্যান্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তি তৈরী করার জন্য।
সরকারি কাজও এখন অনলাইন পদ্ধতিতে হচ্ছে। এর ফলে দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের সমস্ত প্রযুক্তি ভিত্তিক কাজের তত্ত্বাবধান করে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স দপ্তর। তাই, এই দপ্তর নিঃসন্দেহে এক মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
ম্যাকেঞ্জি গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে কলকাতা বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে চলেছে। সিঙ্গাপুর ও হংকং এর সাথে নৈকট্যের ফলে কলকাতায় আইটি শিল্পের সম্ভামনা বিপুল।
নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার ও তৈরী করতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী দপ্তর। এর জন্য গঠন করা হয়েছে একটি কোর কমিটি। কিভাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে কিভাবে সরকারি কাজ আরও দক্ষতার সাথে করা যায় সেই বিষয়টি দেখবে এই কমিটি।
তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর বানতলায় একটি ‘সেন্টার অফ ইনোভেশন’ তৈরী করছে। এই কেন্দ্রের ব্লু প্রিন্ট ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। আগামী অর্থবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করবে কেন্দ্রটি। এখানে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, বৈজ্ঞানিক, শিল্পপতিরা পরামর্শদাতা হিসেবে থাকবেন। প্রযুক্তিবিদ্যায় স্নাতকদের এই কেন্দ্রে নিঃশুল্ক জায়গা দেবে রাজ্য সরকার। যে সব স্নাতকরা উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভাকে তুলে ধরতে চায়, তাদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থাও থাকছে।
নয়া প্রজন্মের হাতেই যে দেশের ভবিষ্যত তা অনস্বীকার্য। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দিক থেকে তাঁদের জ্ঞান অনেকাংশেই বেশি। এবার নয়া প্রজন্মের তথ্য প্রযুক্তি পড়ুয়াদের ওপরই ভরসা করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই পড়ুয়াদের দিয়েই তৈরি করানো হবে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ। এই ভাবনা থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর আয়োজন করেছে ‘বেঙ্গলাথন’ প্রতিযোগিতা। ওলা–উবারের মত টোটো অ্যাপ, আধার কার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযোগ করার অ্যাপ, সম্পত্তি কর প্রদান সহ বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার তথ্য প্রযুক্তি পড়ুয়ারা এই অ্যাপ তৈরির মধ্য দিয়ে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারবেন।
এছাড়াও, ফিনটেকের প্রতি রাজ্য সরকার জোর দিচ্ছে। ফিনটেক হল একটি নতুন ইন্ডাস্ট্রি যার অন্তর্গত কোম্পানিগুলি ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক পরিষেবা দিয়ে থাকে। এই কোম্পানিগুলি ডিজিটাল পেমেন্ট, অটোমেটিক ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং, শেয়ার মার্কেট অ্যানালিটিক্স, ইন্সিউরেন্স প্রেডিকশন ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করে থাকে। এই কাজে জোর দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর।
অর্থনীতি ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে ফিনটেকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নিজেকে ইতিমধ্যেই তুলে ধরছে বাংলা। কলকাতার অনতিদূরে নিউটাউনে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক হাব। ইতিমধ্যেই ২৩টি অর্থনৈতিক সংস্থা জায়গা নিয়েছে এই হাবে। তৈরী হচ্ছে ফিনটেক হাবও।
তার সাথে, আগামী দিনে যেসব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়তে চলেছে, সেগুলির প্রচার করে এই দপ্তর। সাইবার সিকিউরিটি, ব্লকচেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অ্যানিমেশন, আইওটি, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০, অ্যানালিটিক্স, ই-স্পোর্টস ইত্যাদি নিয়ে পরিকল্পনা চলছে। ঠিক হয়েছে, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে সারা বছর ধরে সম্মেলন আয়োজিত হবে। ইতিমধ্যেই সাইবার সিকিউরিটি, ব্লকচেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে সম্মেলন হয়ে গেছে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সাইবার সিকিউরিটির সেন্টার অফ এক্সসেলেন্স গড়েছে। এই কেন্দ্রে সাইবার ক্রাইম সম্বন্ধিত ঘটনার তথ্যাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হলে সেটিও এখান থেকে করা হবে। সাইবার ক্রাইম সম্বন্ধে গাইডলাইনও তৈরী করবে এই কেন্দ্র। সাইবার ক্রাইম সম্বন্ধে গবেষণার কাজও হবে এখানে।