সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮
পাহাড় আমার হৃদয়ের খুব কাছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দার্জিলিং হিল ইউনিভার্সিটি’-র শিলান্যাস করেন। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এই শিলান্যাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়া হবে মংপুতে।
আজকের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
আজ ডঃ রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। এই দিনটি আমরা শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করি। আজ সব শিক্ষাগুরুদের প্রণাম, সম্মান, শ্রদ্ধা ও সালাম জানাই। তারাই দেশের আসল সম্পদ, সমাজের আসল সম্পদ, শিক্ষাগুরু। তারাই সমাজের স্তম্ভ।
আজ ৬০ জন শিক্ষক ‘শিক্ষা রত্ন’ পাবেন এবং ১৩টি স্কুল ‘সেরা স্কুলের’ পুরস্কার পাবে। আজ স্বপ্না বর্মনকে (এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছে স্বপ্না) সম্মান দেওয়া হবে। বাম আমলের করে যাওয়া ঋণ শোধ করতে হয় আমাদের; বছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে যায়। আমাদের সরকার গরীব সরকার। তাও আমি চেষ্টা করেছি, স্বপ্না বর্মনের মায়ের হাতে ১০ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে, তার ভাইকে চাকরি দেবে সরকার। স্বপ্না চাইলে তাকেও চাকরি দেওয়া হবে।
ক্রীড়াবিদদের জন্য আমরা নতুন ক্রীড়া নীতি তৈরী করছি। আগামী দিনে তারা যাতে অলিম্পিক সহ অন্যান্য খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে সেই জন্য আমাদের তরফ থেকে সব রকম সাহায্য করা হবে।
আজ দার্জিলিঙের গৌরবের দিন। আজ ‘দার্জিলিং হিল ইউনিভার্সিটি’-র শিলান্যাস হল। এই ক্যাম্পাসের নাম রাখা হবে তেনজিং নোরগে ক্যাম্পাস। আর একটি ক্যাম্পাস তৈরী হবে যার নাম রাখা হবে কাঞ্চনজঙ্ঘার নামে। ভানুভক্তজীর নামেও একটি ক্যাম্পাস তৈরী হবে।
এখানে যে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আছে তাকে এই ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। কার্শিয়াঙের ডাউ হিলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ছে, এডুকেশন হাব তৈরী হচ্ছে। কালিম্পঙেও এডুকেশন হাব হচ্ছে।
দার্জিলিং হিল ইউনিভার্সিটির জন্য ২৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে। জমি চিহ্নিত করাও হয়ে গেছে। এখানে যে যে বিষয় পড়ানো হবে – কলা বিভাগ, সমাজ বিজ্ঞান, মিডিয়া সাইন্স, তথ্যপ্রযুক্তি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ। পর্যটন, ট্রাভেল ম্যানেজমেন্ট, টি ম্যানেজমেন্ট, উদ্যানপালন, হিমালয়ান স্টাডিজ ইত্যাদি। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটও দেওয়া হবে।
আমাদের সরকার গত ৭ বছরে ২৩টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করেছে, আরো ৯টি তৈরীর কাজ চলছে। গান্ধীজির জন্মবার্ষিকীতে মেদিনীপুরের তমলুকে আমরা মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করা হবে। হুগলিতে একটি গ্রিন ইউনিভার্সিটি তৈরী করা হবে। বোলপুরে বিশ্ব বাংলা ইউনিভার্সিটি তৈরী হবে। আলিপুরদুয়ার, ঝাড়গ্রামেও বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে।
এর ফলে আমরা শিক্ষা প্রদান করতে পারব, এখানকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা অর্জন করতে বাইরে যাওয়ার দরকার পড়বে না। দার্জিলিঙে তো বাইরে থেকে মানুষ লেখাপড়ার জন্য আসেন, কালিম্পঙেও আসেন, কার্শিয়ঙে আসেন, এটা আপনাদের গৌরবের জায়গা। এখানকার শিক্ষার মান খুব ভালো। এখানে পড়াশোনা করা বহু মানুষ আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। আমি ভূটান গেছিলাম, সেখানকার প্রধানমন্ত্রী আমায় বলেছিলেন, আমি গ্রাহামস হোমে পড়াশোনা করেছি।
এখানকার পুলিশ রাইসিং স্টার বলে একটি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম আয়োজন করেছেন। দার্জিলিং সংস্কৃতির দিক দিয়ে খুব উন্নত। এখানে এত সুন্দর গান, নাচ হয়।
২০১৯ সালে দার্জিলিঙে এশীয় দেশগুলিকে নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব। আমি চাইব এই প্রতিযোগিতায় দার্জিলিং প্রথম হোক, আমার আপনাদের ওপর বিশ্বাস আছে।
আমরা অন্য জেলায় সাইকেল বিতরণ করি নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের। এখনও পর্যন্ত ১ কোটি সাইকেল দেওয়া হয়েছে। এখানে পাহাড়ি অঞ্চলে সাইকেল চালানো অসুবিধাজনক। তাই, আমরা ঠিক করেছি এখানকার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ২৮,০০০ পড়ুয়াদের স্কুল ব্যাগ ও রেনকোট দেব। আজ থেকেই এই প্রকল্প শুরু হল। কাউকে বঞ্চিত হতে দেওয়া ঠিক না।
দার্জিলিঙে এখন অনেক নতুন রাস্তা হয়েছে। পাহাড়ের সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক, পাহাড়কে আমি ভালোবাসি। গতকাল আমরা এখানকার উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ কমিটি তৈরী করেছি। স্বল্প মেয়াদি, দীর্ঘ মেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা করে কি করে দার্জিলিঙের উন্নয়ন করা যায় তা এই কমিটি দেখবে। ছ’মাসের মধ্যে এই কমিটি আমায় রিপোর্ট দেবে।
দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং, মিরিকের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কি করে এখানে কর্মসংস্থান তৈরী করা যায়, হোম ট্যুরিজম বাড়ানো যায়, পর্যটন বাড়ানো যায়, শিল্প বাড়ানো যায়, সফটওয়্যার বাড়ানো যায়, তথ্যপ্রযুক্তি বাড়ানো যায় – এই সব খতিয়ে দেখা হবে। এই কমিটি সফল হবে, আমার পূর্ণ আস্থা আছে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে আমার অনুরোধ হাউস লোন প্রোগ্রামকে আগামী এক বছর কনভার্জেন্স করুন, এতে হোম ট্যুরিজম উতসাহিত হবে। হোম ট্যুরিজম আমরা লামাহাটায় প্রথম শুরু করেছিলাম। ওখানে যাদের ১টা বা ২টো ঘর আছে সেগুলোকে সাজিয়ে ট্যুরিস্টদের ভাড়া দেওয়া হয়। তাতে বাড়ির মালিকের আয়ের একটা উপায় হয়ে যায়।
আমাদের যে ১৫টি বোর্ড আছে তারা বছরে ১০০০টা মত বাড়ি তৈরি করতে সাহাজ্য করে। আমি বলব আপনারা ৫০০টি করুন এবং বাকি টাকা দিয়ে হোম ট্যুরিজম প্রোগ্রাম শুরু করুন। এতে প্রতিটি পরিবারের একটা আয়ের উৎস হয়ে যাবে। এটাই আমাদের সরকারের ভবিষ্যতের নীতি হওয়া উচিৎ, যে অর্ধেক খরচ করা হবে বাসস্থান বানাতে আর বাকী অর্ধেক ওই বাড়িগুলোকে সাজিয়ে হোম ট্যুরিজম চালু করতে।স রকার একটা মডেল বানিয়ে দেবে। পর্যটন দপ্তরই এ ব্যাপারে সমস্ত প্ল্যান বানিয়ে দেবে।
আজকে আমরা প্রথম বার ৪৩১ জনকে অরণ্যের অধিকার (ফরেস্ট রাইট) দেব। জমির রূপান্তর এর পরে হয়ে যাবে। এটা এবার শুরু হল, ভবিষ্যতে এতে আপনাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যাদের কাছে আজকে কিছুই নেই, তারা জমির পাট্টা এভাবে পেয়ে যাবেন এবং তাদের উপকার হবে।
আরেকটা কথা আমি গতকাল আলোচনা করেছি, যে দার্জিলিং-এ প্রকাশ্যে যত ঘড়ি আছে তার ঠিক মতন রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং লালকুঠিরও সৌন্দর্যায়ন করতে হবে।
আমি দার্জিলিং মিউনিসিপালটির চেয়ারম্যানকে বলেছি যে নেহেরু রোডকে পেভার ব্লক দিয়ে সাজিয়ে দিন, তাতে ওটা একটি সুন্দর হাঁটার রাস্তা হয়ে যাবে। যারা হাঁটতে ভালোবাসেন তাদেরও ভালো লাগবে। এরকম ছোট ছোট কাজ করলেই অনেক পরিবর্তন আসবে। ছোট ছোট কাজ করুন, কিন্তু মনপ্রাণ দিয়ে করুন, সফল হবেন।
আমি দার্জিলিং-এর ভালো চাই, পার্বত্য অঞ্চলের ভালো চাই, এবং সব সময় চাই যে আপনারা ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন এবং আমরা দেখতে চাই যে দার্জিলিং, মিরিক, কালিম্পং, কাঞ্চনজঙ্ঘা হাসছে।
আপনাদের কাছে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। আপনাদের কারও কাছে হাত পাততে হবে না। প্রকৃতি আপনাদের সম্পদ, তাকেই ঠিক ভাবে কাজে লাগানোই আপনাদের কাজ। ‘আমরা এগিয়ে যাব, গর্বের সাথে এগিয়ে চলব’ – এই সঙ্কল্প হোক। আপনারা এগিয়ে চলুন।
সবাই ভালো থাকবেন, আমার শিক্ষাগুরুরা, আমার ছাত্র-ছাত্রী বন্ধুদের আজকের দিনে অনেক অনেক অভিনন্দন। জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম্।