সাম্প্রতিক খবর

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯

'প্রধান অভিযুক্ত অভিজিৎ একজন আরএসএস কর্মী, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউই রক্ষা পাবে না' : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

'প্রধান অভিযুক্ত অভিজিৎ একজন আরএসএস কর্মী, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউই রক্ষা পাবে না' : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

এই ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক, ধিক্কারজনক। প্রতিবাদ জানানোর কোন ভাষা আমাদের কাছে নেই। যারা এই কাজ করেছে তারা নিশ্চিতভাবে আইনের কাছে উপযুক্ত শাস্তি পাবে।

প্রশাসন প্রশাসনের মতন ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ২ জন অভিজুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বাকি যারা রয়েছে তারা যদি ভাবে এসব করে পার পেয়ে যাবে, তারা যেন জেনে রাখে পুলিশ মন্ত্রীর নাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদি ভাবে তারা দিল্লির নেতাদের পাজামা ধরে ঝুলে বেঁচে যাবে, দিল্লীর বাবুদের পা ধরে দুর্নীতি করে যাবে আর ঠিক থাক থাকবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আমাদের পুলিশ মন্ত্রী ঘাড় ধরে কলার ধরে তাদের শ্রীঘরে পাঠাবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলে যাচ্ছি এদের আমরা ছাড়বো না। দলের তরফ থেকে প্রশাসনের কাছে যা অভিযোগ করার আমরা জানিয়েছি। প্রশাসন ইতিবাচক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে এবং আগামীদিনে যত শীঘ্র সম্ভব বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যে এফ আই আর করেছে সেই মিলন ভাই এর সাথেও আমি কথা বলেছি, উনি সত্যজিতের সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী এবং পুলিশ সেই এফ আই আর এর ভিত্তিতে তদন্ত করছে। এটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। আমার মনে হয় এই সম্পর্কে অল্প কথা বলাই ভাল, কারণ আমি কিছু বললে বলবে আমি তদন্তকে প্রভাবিত করছি। প্রশাসনের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

আসার সময় দেখলাম সকলে পোস্টার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অভিজিত পুণ্ডরি কে গ্রেফতার করতে হবে, এই অভিজিত পুণ্ডরি আর এস এসের লোক। তাঁর মা বলছেন তাঁর ছেলে বিজেপি করে আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে গোষ্ঠী দ্বন্দের। এদের লজ্জা করে না?

৩-৪ মাস আগে দিলীপ বাবু উত্তর ২৪ পরগনা-মেদিনীপুরে গিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন অনাথ করে দেব। আজ কি এটা সেই অনাথ করার প্রতিফলন নয় কি? আমার প্রশ্ন, আপনারা যে বলছেন পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই , যদি গণতন্ত্র না থাকতো দিলীপ বাবুরা কি সভা করতে পারতেন? উনি কখনো বলছেন মেরে দেব, পুঁতে দেব, গর্তে ঢুকিয়ে দেব। যারা ওনার নতুন সঙ্গী হয়েছেন তারা ধমকে চমকে বড় বড় কথা বলছে। আজ যদি পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র না থাকতো তাহলে এই কথাগুলো বলার সাহস পেত না।

গোষ্ঠী মানে ২ টো গোষ্ঠী, দ্বিতীয়টির নাম কি? ওদেরকে বলতে হবে, সাংবাদিক বৈঠক করে বলুক। প্রতিটি গোষ্ঠীর নেতা থাকে। কেউ একজন প্রতিযোগী থাকবে তো। আমার প্রথম প্রশ্ন, ২য় গোষ্ঠীর নেতার নাম কি?

এখানে কোন গোষ্ঠী নেই, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যে ফেরার, যে কাপড় মুড়ি দিয়ে গুলি করেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা যাকে দেখেছে তার মা বলেছে ‘আমার ছেলে বিজেপি করে’। যারা গ্রেফতার হয়েছে – সুজিত মণ্ডল, কার্ত্তিক মণ্ডল তারা কোন পার্টির লোক আমি জিজ্ঞেস করতে চাই। তারা কি তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে যুক্ত?

সুশীল বিশ্বাসের প্রয়াণের পরে ২০১৫ সালের উপনির্বাচনে সত্যজিৎ বিশ্বাস ৩৭০০০ ভোটে জিতেছে এবং তখনও চক্রান্ত হয়েছে। তারপর ১ বছরের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনে ৪৪০০০ ভোটে জেতে সত্যজিৎ বিশ্বাস এবং এবারও ও বলেছিল দলকে আরও শক্তিশালী করে ৫৬-৬০ হাজার ভোটে দলকে জেতাবে।

যারা রাজনৈতিকভাবে লড়তে পারে না তারা সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়, তারা এইভাবে খুন করে।

সত্যজিতের চলে যাওয়া তাঁর পরিবারের কাছে ও আমাদের দলের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। ও আমাদের দলের একজন দক্ষ সংগঠক, সৈনিক ও তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার সভাপতি। তার প্যারালাল কোন রিপ্লেসমেন্ট এই মুহূর্তে দলের কাছে নেই। তাঁর প্যারালাল কোনও রিপ্লেসমেন্ট আমাদের কাছে এই মুহুর্তে নেই। কিন্তু যারা ভাবছে এই ঘটনা ঘটিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকানো যাবে, তারা ভুল ভাবছে, এতে তৃণমূল কংগ্রেস আরো শক্তিশালী হবে। বাড়ী-বাড়ী থেকে আগামী দিনের সত্যজিত বিশ্বাস আমরা তৈরি করব।

প্রশ্ন- পরিবারের সাথে কি কথা হল?
উত্তর- দেখুন পরিবারের যদি কেউ মারা যায়, সেটা অপুরণীয় ক্ষতি, আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব না। আমরা অনুরোধ করেছি আমাদের শ্রদ্ধেয়া মুখ্যমন্ত্রী, দলনেত্রী, তিনি নিজে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং পরিবারের সাথে নিজে কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, পরিবারের পাশে সম্পুর্ণ ভাবে দল রয়েছে, জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব রয়েছে এবং আমি বলেছি যে এই বিষয়টা দলের তরফ থেখে আমি নিজে দেখছি। যারাই জড়িত রয়েছে, আমি আপনাদের মাধ্যমে তাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি, যদি ভাবেন দিল্লীর পাজামা পড়ে ঝুলবেন আর ছাড়া পাবেন, কলার ধরে , ঘাড় ধরে নিয়ে আসব। যদি কেউ ভেবে থাকে আমরা ক্রাইম করব আর দিল্লীতে গিয়ে বসে থাকব, তাহলে তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।আমরা প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েছি এবং দলের তরফ থেকে আমি এর পেছনে লেগে আছি।আমাকে নেত্রী নির্দেশ দিয়েছে, আমি এখানে এসেছি এবং দলে আমার সহকর্মী, সহযোদ্ধা, এবং জেলার সভাপতি- সুতরাং এটা আমার কর্তব্যের মধ্যেই পরে। আগামী দিন এর জবাব তারা পাবে।

প্রশ্ন- মতুয়া ভোটকে কি কোনভাবে টার্গেট করছে?
উত্তর- না সে তো আগেই বলেছি। আপনারা জানেন যে মতুয়া সঙ্ঘঠনের অন্যতম মুখ ছিল সত্যজিত এই জেলায়। এবং প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরনগরে সভা করছেন তাঁর তিন-চার দিনের মধ্যে এই ঘঠনা ঘটল, এটা তো পুর্বপরিকল্পিত। এখানে দশ-বার লাইন কাটা হয়েছে, আপনারা সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করুন তো এখানে ক-বার কারেন্ট যায়? ক-বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়? পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞেস করুন যে এবং রাস্তায় লাইন দিয়ে সাধারণ মানুষ যারা দাঁড়িয়ে আছে তাদের জিজ্ঞেস করুন। আট থেকে ন-বার লাইন গেছে এবং তাঁর দেহরক্ষী সেদিন ছুটিতে ছিল, সুতরাং এটা সম্পুর্ণভাবে পুর্বপরিকল্পিত, সেটা অস্বীকার করা যায় না।

প্রশ্ন- তাহলে কি কেউ চেনা…
উত্তর- চেনা না, যারা তাকে ফলো করছে আর যেহেতূ সে একটা জনপ্রতিনিধি, স্বভাবিকভাবে তাকে ঘিরে একটা উৎসাহ থাকে, উদ্দিপনা থাকে। এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু যারাই এর পেছনে মদত দিক, আমা আগেও বলেছি এফ-আই-আর করা হয়েছে, তদন্ত হবে এবং আগামীদিনে যারাই যুক্ত, তাদের-কে ধরে শ্রীঘরে ঢোকাব।

প্রশ্ন- এতো প্রমিনেন্ট নেতা আপনাদের…
উত্তর- আমি বলছি তো, একটা জিনিষ আপনারা বারবার লক্ষ্য করবেন যে এটা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকা, এবং এরকম প্রত্যেকটা এলাকায় বিজেপি এরকম অশান্তি করছে। বলরামপুরে করেছে, ঝাড়খন্ড সীমান্ত এলাকায়। এবং সেখানে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করার পর সেটা এখন শান্ত এলাকা। মহম্মদবাজার, কুচবিহারের দিনহাটায় করেছে, যেগুলি সীমান্তবর্তী এলাকা।
এই যে বন্দুকগুলো এগুলো কারা আমদানি করেছে?বর্ডার রক্ষার দায়িত্ব কাদের? যারা বড় বড় কথা বলে পাচার হচ্ছে, তাহলে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে নৈতিকভাবে ইস্তফা দেওয়া উচিত। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়া উচিত। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কার, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের?
দিলীপবাবু যে এত বড় বড় কথা বলছেন, তাহলে তো প্রশ্নের তীরটা তো আপনি আপনাদের ওপর ছাড়ছেন। আমাকে তো সেটা বলতে হয়। বলে না কান টানলে মাথা আসে, সবে তদন্ত শুরু হয়েছে, দেখুন ডালমে কুছ কালা হ্যায়।অনেক বড় রহস্য আগামীদিনে উদ্ঘাঠিত হবে।

প্রশ্ন- কিভাবে তাহলে তৃণমুল কামব্যাক করবে নদীয়াতে?
উত্তর- আপনি নিজেই উত্তর দিচ্ছেন যে দুটো সিট ওরা টার্গেট করেছে এবং এধরনের মৃত্যু। আপনার প্রশ্নের মধ্যেই আপনার জবাবটা আমি দিয়ে দিলাম।

প্রশ্ন- চিঠি দিয়েছেন লালবাজারে…
উত্তর- আমরা কণ্যাশ্রী শুরু করেছি ২০১৩ সালে। ওরা শুরু করেছে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ ২০১৫ সালে। আমরা কৃষকবন্ধু ঘোষণা করেছি ৩১-শে ডিসেম্বার ২০১৮ সালে, তারপর ওরা প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান ঘোষণা করল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ণা করেছে এবার দিলীপ ঘোষ করবে, তাহলে বিজেপি দলটা রেখে লাভ নেই তো, ওদের তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরে আস্থা। আজকে ‘what Bengal thinks today, India thinks tomorrow’ , ‘what Trinamool is thinking today, BJP is thinking tomorrow’. দলটা উঠিয়ে দিন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরে আস্থা রয়েছে, তাঁকে আগামীদিনে দিল্লীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার কাজ করুন।ধন্যবাদ।