অক্টোবর ৯, ২০২৫
SIR–এর আড়ালে প্রকৃত ভোটারদের নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ নবান্নে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ :
পুজোর পরপরই অসম থেকে আবারও এনআরসি-র নোটিস আসতে শুরু করেছে। আমাদের রাজ্যের নদিয়া জেলায় ইতিমধ্যেই দুইজন নাগরিক এমন নোটিস পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে — উৎসবের সময়টাকেই কেন SIR করার জন্য বেছে নেওয়া হল? যখন পশ্চিমবঙ্গ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে, যখন কালীপুজো, ছটপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় এগিয়ে এসেছে, বহু এলাকা বন্যায় জলে ডুবে রয়েছে — তখনই কর্মকর্তাদের ডেকে ভয় দেখানো হচ্ছে! খবর পেয়েছি, চারজন অফিসার বিএলআরওদের ফোন করে নিজেদের নির্দেশ মতো নথি তৈরি করতে বলেছে, হুমকিও দিয়েছে।
বিহারে ওরা এটা করতে পেরেছে কারণ সেখানে বিজেপি/এনডিএ সরকার আছে, এবং সংস্থাগুলো তাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা — এখানে হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টানদের পাশাপাশি অসংখ্য এসসি, এসটি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। ইতিমধ্যেই রাজবংশী, সংখ্যালঘু ও পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছেও এনআরসি নোটিস পৌঁছেছে।
SIR প্রক্রিয়াটাই একটা প্রতারণা। এতে সাধারণ মানুষের কোনও অংশগ্রহণ নেই — কেবলমাত্র কিছু অফিসারকে ডেকে মিটিং করা হয় ও ভয় দেখানো হয়, অথচ রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণভাবে এই আলোচনার বাইরে রাখা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে — সময় হলে আমি সব প্রকাশ করব। তবে আশা করি তিনি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না, কারণ তিনি অনেক অফিসারকেই ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
SIR–এর আড়ালে প্রকৃত ভোটারদের নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। প্রশ্ন হল — অসম সরকার কীভাবে বাংলার ভোটারদের নোটিস পাঠাতে পারে? তারও আগে, কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে ১.৫ কোটি ভোটার বাদ যাবে — প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই! তাহলে কি সিদ্ধান্ত দলীয় অফিসে নেওয়া হচ্ছে, আর নির্বাচন কমিশন কেবলমাত্র সিলমোহর দিচ্ছে? আমরা নির্বাচন কমিশনের থেকে নিরপেক্ষতা আশা করি। কারণ সরকার ও বিরোধী — উভয়েই মিলে গণতন্ত্রের ভিত গড়ে তোলে। আর গণতন্ত্রের আসল স্তম্ভ হল সংবিধান ও জনগণ — কোনও ব্যক্তি বা সরকার নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে পারে না।
উৎসবের এই সময়ে অনেকে পুজোতে ব্যস্ত, কেউ বা ছুটিতে ঘুরতে গেছেন, আবার অনেকে বন্যায় বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় যদি SIR শুরু করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়, বিশেষত যদি কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায় — রাজবংশী, নেপালি বা অন্য কেউ — টার্গেট হয়, তা আমরা কখনও মেনে নেব না।
আমি শুনেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি দলীয় সভায় ভোটার বাদ যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁকে এই অধিকার কে দিল? গণতন্ত্রে কাউকে বাদ দিয়ে দেশ চলতে পারে না। এটা SIR নয় — এটা আসলে ব্যাকডোর এনআরসি। আমরা বিজেপি সরকার ও তাদের অধীনস্থ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করছি। তারা শিক্ষায়, উৎসবে, সর্বত্র রাজনীতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে এবং গৈরিকীকরণ করছে। দিল্লিতে বসে একজন ‘মীর জাফর’ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। কিন্তু মানুষকে বোকা বানানো যাবে না — সত্য একদিন সামনে আসবেই। যদি প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়, তাহলে বাংলার মানুষ এমন জবাব দেবে, যা ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
যদি আপনার মন্ত্রী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই বলেন যে ১.৫ কোটি ভোটার বাদ যাবে, তাহলে হয় তাঁকে পদ থেকে সরান, নয়তো স্বীকার করুন যে এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত।
ভোটের রাজনীতি, তথ্য জালিয়াতি, ভোট লুট — এইসব ছাড়া ওরা জনগণের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। যখন মানুষ বিপদে থাকে, তখন এরা সাহায্য দেয় না; কিন্তু ভোট এলে টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হয়। দেশের সম্পদ বিদেশে পাঠায়, আর সোনা পরে দেশে ফিরে আসে — অথচ দেশের গরিব মানুষ অনাহারে দিন কাটায়।
এরা শুধু ধ্বংস করতে জানে। তাদের এই বিধ্বংসী মানসিকতার কারণেই তারা কখনও জিততে পারবে না। মাত্র ১৫ দিনে কোনও সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব।