সাম্প্রতিক খবর

অক্টোবর ২৮, ২০২৫

যদি একটিও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ১ লক্ষ মানুষ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করবে: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

যদি একটিও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ১ লক্ষ মানুষ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করবে: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তৃণমূল ভবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ:

আমরা সবাই দেখলাম, কীভাবে গতকাল বিজেপির সহযোগী সংস্থা ভারতীয় নির্বাচন কমিশন বাংলায় SIR ঘোষণা করেছে। আর এই উৎসবের মরসুমে, আজ ছটপুজোর দিনেই তারা ঘোষণা করল যে, আজ থেকেই SIR প্রক্রিয়া শুরু হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সাংবাদিক বৈঠক করে বললেন, কীভাবে SIR পরিচালিত হবে। আমাদের দলের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট, SIR-এর উদ্দেশ্য আসলে কোনো সংশোধন নয়, বরং বাছাই করে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া, মানুষের ভোটাধিকারের অধিকার কেড়ে নেওয়াই এর আসল উদ্দেশ্য

আজ আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে একসময় মানুষ ভোট দিত এবং ঠিক করত কে দেশ চালাবে, আর এখন সরকারই ঠিক করছে কারা ভোট দিতে পারবে। কেন্দ্রীয় সরকার এখন ঠিক করছে কে ভোটার তালিকায় থাকবে, আর কে থাকবে না।

ওদের উদ্দেশ্য ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করা নয়। যদি সত্যিই সেটা উদ্দেশ্য হত, তবে এটাই সেই ভোটার তালিকা, যার ভিত্তিতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন হয়েছে, যেখান থেকে বাংলা-সহ ৫৪৩ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন এবং সেই তালিকার ওপরই দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। যদি এই ভোটার তালিকা ভুলে ভরা হয়ে থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত লোকসভা বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন করা। আমরা কোথাও পালাচ্ছি না

যদি এই ভোটার তালিকা ভুলে ভরা হয়, তাহলে আমিও সেই তালিকার মাধ্যমেই নির্বাচিত হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী ও সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও — স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী- সবাই নির্বাচিত হয়েছেন। তাহলে তাঁরা সকলেই আগে ইস্তফা দিন, তারপর SIR করুন। কেউ তো আটকাচ্ছে না

২০০২ সালে যে SIR হয়েছিল, সেটাকেই এখন মানদণ্ড হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে দুই বছর লেগেছিল। আর এখন তারা চায় সেই কাজটা দু’মাসে শেষ করতে! এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন, শুধু বাংলায় নয়, একসঙ্গে ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে

আগামী বছর এপ্রিল মাসে ৫টি রাজ্যে নির্বাচন আছে — তার মধ্যে রয়েছে বাংলা, কেরল, তামিলনাড়ু, অসম ও পণ্ডিচেরী। কিন্তু আপনারা দেখেছেন গতকাল, সেখান থেকে অসমকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর সেটাই একমাত্র রাজ্য, যেখানে বিজেপি শাসন করছে। তাহলে যেখানে বিজেপি শাসন করছে এবং ২০২৬ সালে ভোট হবে, সেখানে SIR হবে না? কিন্তু বাংলায় হবে! ওরা বলেছে, অসমে যেহেতু CAA কার্যকর করা হয়েছে, তাই সেখানে SIR হবে না। তাহলে বলুন তো, এই “এক দেশ, এক সংবিধান, এক ভোট” গল্পের মানে কী?

নির্বাচন কমিশনের কোন নিয়মে লেখা আছে যে, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় সেটা এক রাজ্যে হবে, আরেক রাজ্যে হবে না? মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন কার নির্দেশে চলছে? কেন তারা বাংলার প্রতি এমন আসক্ত? অসমে SIR হবে না কেন? তার একটা সন্তোষজনক উত্তর পর্যন্ত তারা দিতে পারেনি। গতকাল বহু সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা কঠিন প্রশ্ন করেছেন— আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই। ধীরে ধীরে আমাদের সংবাদমাধ্যমও বদলাচ্ছে। সাংবাদিকরা যেসব প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার একটারও সঠিক উত্তর কমিশন দিতে পারেনি।

আপনারা বলেন, বাংলায় নাকি অনেক অবৈধ ভোটার আছে— বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা আছে। আমি এখন আপনাদের ভারতের একটি মানচিত্র দেখাতে চাই। [ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র প্রদর্শন করেন]

একদিকে পাকিস্তান, একদিকে মায়ানমার, উপরে ভুটান ও নেপাল, আর পূর্বদিকে বাংলাদেশ। এখন আসুন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে ভালো করে দেখি, যেখানে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। মাঝখানে হলুদ রঙে যেটা আছে সেটাই বাংলাদেশ। তার একদিকে বাংলা, একদিকে মেঘালয়, একদিকে অসম, আরেকদিকে ত্রিপুরা ও মিজোরাম। অর্থাৎ বাংলাদেশ ৫টি রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করেছে। কিন্তু SIR হচ্ছে শুধু বাংলায়, বাকি ৪ রাজ্যে নয়

১৫ দিন আগে ত্রিপুরায় ২১ জন বাংলাদেশিকে ধরা হয়েছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) কি সেটা খবর করেননি? অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে অসমে রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে— সেটাও তো আপনারাই খবর করেছেন। আবার বলছি— বাংলাদেশ ৫টি রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করেছে, কিন্তু SIR হচ্ছে শুধু বাংলায়

এবার দেখুন মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত কোথায়। মায়ানমার সীমান্তবর্তী রাজ্য ৪টি — মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, ও অরুণাচল প্রদেশ। মায়ানমার থেকে যারা আসে তাদের বলা হয় রোহিঙ্গা। আর বিজেপি নেতারা বলেন, বাংলায় নাকি ১ কোটি রোহিঙ্গা আছে! আমি মানচিত্র দেখাচ্ছি — বাংলা কিন্তু মায়ানমারের সঙ্গে কোনও সীমান্ত ভাগ করে না। তাহলে রোহিঙ্গারা যদি ভারতে আসে, তারা আসবে ওই ৪টি রাজ্যের মাধ্যমেই। তাহলে আমার প্রশ্ন — নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যটা কী?

যদি সত্যিই উদ্দেশ্য অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করা হয়, তাহলে সেটা সীমান্তে থামাতে হবে, সেখান থেকেই প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত। যদি কোনও রোহিঙ্গা বাংলায় আসে, তাহলে সে আসবে ওই চার রাজ্যের মধ্যে দিয়ে। তাহলে এই রাজ্যগুলোকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে কেন? আমার প্রশ্ন সেখানেই। উদ্দেশ্য একটাই— বাংলাকে অপমান করা, বাঙালিকে বাংলাদেশি বলা, বাংলা ভাষাকে অপমান করা এবং ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়া, ২০২৪-এ ১৮ থেকে ১২ আসনে নেমে যাওয়ার পর সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়া— এটাই বিজেপির লক্ষ্য। আমরা তা হতে দেব না

আমি আগেও বলেছি, আবার বলছি — যদি একটিও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ১ লক্ষ মানুষ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করবে। যদি সাহস থাকে, তাহলে অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ আমাদের আটকে দেখাক

গতকাল আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়। হাইকোর্ট এক গালে থাপ্পড় মেরেছে, সুপ্রিম কোর্ট মেরেছে অন্য গালে। নব জোয়ারের সময় আমি বলতাম, জনগণের ক্ষমতার সামনে কিছুই টিকতে পারে না, যে-ই হোক না কেন

আমরা দিল্লি গিয়েছিলাম বাংলার প্রাপ্য অর্থ দাবি করতে, কিন্তু আমাদের কৃষি ভবন থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করে দেওয়া হয়েছিল। কে করেছিল? অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ। এমনকি সংরক্ষিত জাতি ও উপজাতি প্রতিনিধি, মহিলাদেরও চুল ধরে টানা হয়েছিল, বিরবাহা হাঁসদাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। দোলা সেন, মহুয়া মৈত্র-সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন

আমরা তখনই বলেছিলাম, হয় আমরা এই লড়াই দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে সেই জমিদারদের দেখাব বাংলার শক্তি কী, না হলে আমরা নিজেদের উদ্যোগেই টাকার ব্যবস্থা করব। আমাদের সরকার সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৫৯ লক্ষ জব কার্ডধারীকে টাকা পাঠিয়েছে, যাদের অর্থ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে বকেয়া ছিল। প্রায় চার বছর ধরে টাকা আটকে রাখা হয়েছিল। শুধু ১০০ দিনের কাজেই বাংলার প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা বকেয়া। রাস্তা, গ্রামীণ সড়ক যোজনা, আবাস, জল জীবন মিশন, সর্বশিক্ষা মিশনের টাকাও আটকে রাখা হয়েছে। এইভাবেই তারা বাংলা ও বাঙালিকে শাস্তি দিতে চায়

যদি সত্যিই SIR করতে হয়, তাহলে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের পরই কেন করেননি? ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে তো এক বছরের ব্যবধান ছিল

বিজেপি বলছে SIR করলে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ধ্বংস হয়ে যাবে; তৃণমূল হারবে। আজকের তারিখটা লিখে নিন, আমি আজ ৫০টিরও বেশি ক্যামেরার সামনে এটা বলছি — যদি বিজেপির সাহস থাকে, তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুক। SIR করুক, কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করছি: যদি এক জন বৈধ ভোটারও বাদ পড়ে, দিল্লি বাংলার শক্তি দেখতে পাবে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ট্রেলার ছিল; সামনে পুরো সিনেমা দেখবেন। বাংলা, গুজরাত আর মধ্যপ্রদেশ কিন্তু এক নয়

আমি ওদের বহু চ্যালেঞ্জ করেছি। আগে বকেয়া তহবিল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম; চ্যানেল, মুখপাত্র, সময় নির্বাচন করে নাও, আমি আসব। কেউ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ‘বাংলাকে আমরা অনেক টাকা দিয়েছি’। আমি প্রমাণ দেখাতে বলেছিলাম; ওরা প্রমাণ নিয়ে আসেনি। আমি আজ আবার চ্যালেঞ্জ করছি

যখন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেয় বা রাস্তা বানায়, বা রাজ্যের খরচ থেকে ১২ লক্ষ মানুষকে বাড়ির জন্য টাকা দেয়, যাতে সাধারণ মানুষ ১০ পয়সা বেশি দিতে না হয়, এসব কি ভোটব্যাঙ্ক দেখে করা হয়? তারা কি তা প্রমাণ করতে পারবে?

আজ, আমি বলছি, ২০২৬-এ আমাদের আসন কমবে না; আমরা আর একটা হলেও আসন বাড়াব। বিজেপির আসন কমে ৫০-এ নেমে যাবে। যদি সাহস থাকে, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুক। আর SIR সত্ত্বেও যদি আমাদের আসন বাড়ে, ওরা যেভাবে পারেন চেষ্টা করুন। আগে ১০০ দিনের কাজের তহবিল আটকে দিয়েছে; সফল হল কি? আমরা যেভাবেই হোক টাকা আনব। আইনিভাবে লড়ব, আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন হলে অবমাননা মামলা করব এবং রাজনৈতিক লড়াইও চালিয়ে যাব

আর যদি SIR-এর পরে তারা হেরে যায়, তাহলে বিজেপি নেতাদের উচিত, সংবাদমাধ্যমের সামনে সই করে ঘোষণা করা ‘যদি ২০২৬-এ তৃণমূলের একটি হলেও আসন বাড়ে, আমরা এক সপ্তাহে ২ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া মুক্ত করব।’ এটা বিজেপির প্রতি আমার খোলা চ্যালেঞ্জ

তোমরা নিজেদের হিন্দুদের রক্ষক বলে দাবি করো। আজ খড়দায় প্রদীপ কর নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কতজন বিজেপি নেতা খোঁজ নিয়েছে? অথচ ওরাই বলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেন! প্রথমে যাঁরা তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসেরই কর্মী

রিজেন্ট কলোনি, নেতাজি নগরেও দুই জন মারা গেছেন। আমি প্রদীপ করের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি, গতকাল ঘোষণার পর তিনি দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করেন। তাঁর সুইসাইড নোটে লেখা—SIR আর NRC-ই তাঁর মৃত্যুর কারণ। আপনাদের আর কত রক্ত চাই? এত গর্ব, এত অহংকার যে, মানুষের জীবনের মূল্য নেই! কৃষি বিলের কারণে প্রায় ৭০০ জন মারা গিয়েছিল, খোঁজ নিয়েছেন? NRC-র আতঙ্কে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, আজ SIR নিয়েও করছে। এই খেলা শুরু করেছেন আপনারা, শেষ করব আমরা

মোদী সরকার এসেছে ১১ বছর হয়ে গেল। বাংলার কতজন প্রতিনিধি (২০১৯-এ ১৮ জন, ২০২৪-এ ১২ জন) একবারও লিখেছে যে, বাংলার গরিব মানুষ ১০০ দিনের কাজের উপর নির্ভরশীল? ২ কোটি ৫৮ লক্ষ মানুষের জীবনজীবিকা এতে জড়িত—কেউ কি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছে? সংশ্লিষ্ট দফতরে, মন্ত্রীর কাছে গেছে? বাংলার মানুষ যাদের ভোটে জিতিয়েছে, তাদের কি এতটুকু লজ্জা নেই?

ওরা এখন প্রশাসনকেও অচল করার চেষ্টা করছে। আমাদের বর্তমান সরকারের কার্যকাল আছে ২০২৬ পর্যন্ত, কিন্তু এখন SIR করে আগামী ৭ মাস কেটে নিতে চাইছে। লোকসভাতেও ৬ মাস কেটে নিয়েছিল। মোট ১৩ মাস গেল। তাহলে রাজ্য সরকার কাজ করবে কখন?

ওরা যখন-তখন জল ছাড়ছে, মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠাচ্ছে। ২০২১ সাল থেকেই এটা শুরু তখন মুখ্যসচিব ছিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০ দিনের মধ্যেই তাঁকে শো-কজ করেছিল। ভোট পরবর্তী হিংসার নামে বাংলার মান মর্যাদা সারা দেশের সামনে কলঙ্কিত করেছে

সন্দেশখালিতে তারা মিথ্যে ঘটনা সাজিয়েছে, মহিলাদের টাকা দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়েছে। আপনারা সবাই সেই ভিডিও দেখেছেন। বাংলার কাছে তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিজেপির মুখপাত্র নিজেই স্বীকার করেছে। মহিলারা বলছেন তাঁরা কিছু জানেন না, শুধু সই করতে বলা হয়েছিল বলেই সই করেছেন। কোটি কোটি টাকা আটকে রেখেছে GST, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে নীতি আয়োগ বৈঠকে কথা বলতে দেয়নি, মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিয়েছে। এটা কি বাংলার অপমান নয়?

যে বিজেপি নেতা বলেছে ‘বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই’, তিনি আজও পদে আছেন। বিজেপির যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছে ‘যারা বাংলায় কথা বলবে, তাদের গ্রেফতার করা হোক’—সেই রাজ্যেই SIR হচ্ছে না। এটাই তাদের পুরস্কার। তাই আমরা বলি—বিজেপি বাংলা বিরোধী

নব জোয়ার কর্মসূচিতে অনেকে বলেছিল, দিল্লি গিয়ে কোনও ফল হবে না। আমি বলেছিলাম ফল পরের কথা, কিন্তু চেষ্টা থামানো যাবে না। আমাদের উপর আক্রমণ হয়েছে, আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করেছি, অর্থের উৎস খুঁজেছি। গতকালের জয় সেই ২.৫৮ কোটি ১০০ দিনের কাজে কর্মরত শ্রমিকদের জয়

উত্তরবঙ্গের যেসব আসনে ওরা জিতেছে, বন্যার পর একবারও কি খোঁজ নিয়েছে? ভোটের সময় তো প্রতিদিন যেত সকালে যেত, পাঁচতারা হোটেলে থাকত, ভালোমন্দ খেত, বাংলাকে অপমান করে সন্ধ্যায় ফিরে যেত। এখন কোথায় তারা? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাত দিনে দু’বার গেছেন, এক সপ্তাহ সেখানে থেকেছেন, ১৫ দিনের মধ্যে বিকল্প সেতুর ব্যবস্থা করেছেন

বাংলার বর্তমান ও প্রাক্তন বিজেপি সাংসদদের জিজ্ঞেস করুন তাদের বাবার নাম কি ২০০২ সালের আগের ভোটার তালিকায় আছে? প্রদীপ করের মৃত্যুর জন্য অমিত শাহ ও জ্ঞানেশ কুমার দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়া উচিত। তারা বড় বড় ভাষণ দেয়, কিন্তু ভোটে লড়ার ভয়ে পালায়, আমরা নই। বাংলায় দুটি উপনির্বাচন বাকি আছে, বিহারের সঙ্গে কেন করল না? কারণ ওরা জানে, হারবে। ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি উপনির্বাচনে আমরা সব জিতেছি। ৩০৩ থেকে কমে ২৪০, আর পরেরবার নামবে ১০০-তে

২০২১-এ হেরে তারা এখন সিদ্ধান্ত নির্ধারণকারী সংস্থা, কেন্দ্রীয় এজেন্সি ব্যবহার করছে পিছনের দরজা দিয়ে বাংলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এখন SIR-এর মাধ্যমে পিছনের দরজা দিয়ে NRC ঢোকাতে চাইছে

আমি জানি না, জ্ঞানেশ কুমার কবে বাংলায় আসবেন। আমি তাঁকে স্বাগত জানাব, কিন্তু মনে রাখুন বাংলা মানে মধ্যপ্রদেশ বা গুজরাত নয়। ইতিহাস পড়ুন—বাংলার নবজাগরণ, স্বাধীনতা আন্দোলন, বিপ্লবীদের অবদান। এই মাটি না থাকলে আপনারা আজ নিজেদের নাম লিখতে বা বলতে পারতেন না। এই মাটি জমিদারের হুমকির সামনে মাথা নোয়াবে না

নির্বাচন কমিশন যেভাবে বিজেপির এজেন্সি হয়ে কাজ করছে, আমি সাংসদ হিসেবে তাদের সতর্ক করছি—সরকার বদলাতে সময় লাগে না। বিজেপি ও অমিত শাহ থাকবে না, কিন্তু সংবিধান থাকবে