সাম্প্রতিক খবর

মার্চ ২৫, ২০১৯

ধর্ম একটা হৃদ সাগর: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ধর্ম একটা হৃদ সাগর: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দক্ষিণেশ্বরের মহামিলন মঠে অখিল ভারত জয়গুরু সম্প্রদায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।

তার ভাষণে, তিনি দৃঢ়ভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির পক্ষে সসওয়াল করেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেন তিনি।

ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ:

বাংলার সংস্কৃতি এতটাই সুন্দর, এতটাই শান্ত, এমনই সহ্যশীল, এমনই সভ্যতার দিশা যা না দেখলে বোঝা যায় না।

বেলুর মঠের ভিতরে একটি দরগা আছে। আমি মহারাজদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম মন্দিরের ভিতরে দরগা? মহারাজরা বলেছিলেন এটা চিরকাল ধরে আছে। ওরা ওদের মতো প্রার্থনা করে। আমরা আমাদের মতো পুজো করি।

ধর্ম মানে ধর্মান্ধতা নয়। ধর্ম মানে চোখে একটা অন্ধত্বের ঠুলি নয়। ধর্মতো অনেক বড়। ধর্ম একটা হৃদ সাগর। যে যার ধর্ম যার মতো করে দেখে। যার যার ধর্ম আপনার।

আমাদের মধ্যে নানা রুচি, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের পরিচয় বাংলায় পাওয়া যায়। এই পৃথিবীটা কত বড়, আকাশের কি কোনও সীমারেখা আছে? গঙ্গার কি কোনও সীমারেখা আছে? তাই ধর্মেরও কোনও সীমারেখা নেই। ধর্মের যত উদার হবে তত সব মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছাতে পারবে।

কেউ কেউ ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়ায়। বিশ্বের মানুষকে অমৃতের পুত্র বলেছিল ভারতবর্ষ। আর যারা ধর্মের নামে বিদ্বেষ শেখায় আমি তাদেরকে ধর্মীয় বলে মনে করি না। আমি সব ধর্মকে নিয়ে থাকতে ভালোবাসি।

ধর্ম মনের শান্তি, আত্মপ্রত্যয়, ভালোবাসা, মানবিকতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি আনে। পিতা-মাতার শেখানো বিদ্যাতেই আমরা ধর্ম কি অনুভব করতে পারি। বিদ্বেষ এমন একটা জায়গায় নিয়ে চলে গেছে কিছু বললেই বলবে, তুমি পাকিস্তানি, আমি সাচ্চা হিন্দুস্তানী।

আমরা সবাইকে ভালবাসব, একসাথে চলব, খেলবো, দৌড়াব, গড়ব, তৈরী করব, মানুষকে ভালোবাসব, কেউ বিপদে পড়লে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াব। এর থেকে বড় আর কিছু নেই। ধর্ম মানে মানবিকতা এটাই সত্য। সত্যম শিবম সুন্দরম।

আসুন, আমরা মানুষের ধর্ম সারা পৃথিবীতে পথ দেখাই। বাংলাই তো পারে।

আমরা দক্ষিণশ্বরের স্কাইওয়াক অনেক সুন্দর হয়েছে দেখেছেন। বেলুড় মঠ সাজিয়ে দিয়েছি। আদ্যাপীঠে যা যা চেয়েছিল বিএড কলেজ থেকে শুরু করে যতটা পেরেছি চেষ্টা করেছি। তারকেশ্বর, বক্রেশ্বর, পাথরচাপড়ি, ফুরফুরা শরীফ, মা তারার মন্দির, কঙ্কালীতলা, দেবী চৌধুরানী মন্দির – যতটা পেরেছি আমরা আমাদের সরকার দিয়ে অনেক কাজ করেছি। ইস্কন মন্দিরের তরফ থেকে অনুরোধ এসেছিল নবদ্বীপে হেরিটেজ তৈরী করবে। এটাও আমরা করে দিয়েছি। আরও অনেক কাজ করব সুযোগ এলে।

সারাজীবন অনেক অত্যাচার সহ্য করেও অনেক মার খেয়েও আজ এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি। কোনওদিন বিশ্বাস হারাবেন না।

কে কি বলল কে কি অপপ্রচার করল তাতে আমার যায় আসেনা। ছোটবেলায় খুব দুঃখ পেতাম, এখন উর্ধে উঠে গেছি। এখন কিছু বললে মনে হয় ঈশ্বর ওকে ক্ষমা করো। আল্লাহ ওকে ক্ষমা করো। মাগো ওকে ক্ষমা করো। ওরা নিজেরাই জানে না ওরা কি করছে।

বাংলাকে আপনারা ভালো রাখবেন। দেশকেও আপনারা ভালো রাখবেন। পৃথিবীকেও আপনারা ভালো রাখবেন।