মে ১৯, ২০১৮
অর্থ কমিশনকে পঙ্গু করে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত হানার অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি জমা দিলেন ৬ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা

পঞ্চদশ অর্থ কমিশন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এবার মমতার সুর ধরেই অর্থ কমিশনকে পঙ্গু করে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত হানার অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি জমা দিলেন অ–বিজেপি রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা। বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলেন পাঞ্জাব ও অন্ধ্রপ্রদেশ–সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ‘শর্তাবলি ও সুপারিশ’–এ পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কমিশন ১৯৭১–এর পরিবর্তে ২০১১ সালের জনগণনাকে তাদের ‘ভিত্তিবর্ষ’ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এদিন রাষ্ট্রপতির হাতে স্মারকলিপি দেওয়ার পর বাইরে এসে অমিত মিত্র জানান, ‘এর আগে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায় অর্থমন্ত্রীদের একটি সম্মেলন হয়েছিল। তারপর ক’দিন আগে অন্ধ্রের অমরাবতীতে যে সম্মেলন হয়েছে, তাতে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অর্থমন্ত্রীরা মিলিত হয়েছিলেন। প্রত্যেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের নিন্দা করে অর্থ কমিশনকে পঙ্গু করার উদ্যোগের প্রতিবাদ করেছিলেন। রাজ্যগুলির মূলত তিনটি বিষয়ে আপত্তি। প্রথমত, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ভিত্তিবর্ষ পরিবর্তন করে সংবিধানের ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্র ও রাজ্যের এতদিনের স্থিতিশীল সম্পর্কে আঘাত হানা হচ্ছে। এবং তৃতীয়ত, জিএসটি–র ক্ষেত্রে সংসদে পাশ হওয়া ক্ষতিপূরণের তত্ত্ব মানা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনকে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে।’ রাষ্ট্রপতি শুনেছেন, সবটা বোঝার চেষ্টা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘রাজ্য সরকারের হিসেবে পঞ্চদশ কমিশন ২০১১ সালের জনগণনা মেনে অর্থ বরাদ্দ করলে ২০২০–২০২৫— এই পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক ক্ষতি হবে ২২,০০০ কোটি থেকে ৩৫,০০০ কোটি টাকা।’ তাঁর আর্জি ছিল, অবিলম্বে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ‘শর্তাবলি ও সুপারিশ’ পরিবর্তন করে ’৭১-এর জনগণনাকে ‘ভিত্তিবর্ষ’ হিসেবে গ্রহণ করা হোক। মমতার যুক্তি ছিল, নতুন অর্থ কমিশন গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুপারিশ অনুমোদনের ক্ষেত্রে তারা ২০১১–র আদমশুমারকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা বাংলার পক্ষে চরম ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই এই কাজ করেছে অর্থ কমিশন, যা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। মমতার দাবি ছিল, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন রাজ্যের আর্থ–সামাজিক প্রকল্প এবং পরিবার কল্যাণ কর্মসূচির উপযুক্ত ও সফল প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হত। এক্ষেত্রে ১৯৭১–এর জনগণনাকে ‘ভিত্তিবর্ষ’ হিসেবে ধরা হয়ে এসেছে। সেক্ষেত্রে বরাবরই ওপরের সারিতে থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। এমতাবস্থায় ২০১১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে অর্থ কমিশন যদি অর্থ বরাদ্দ করে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সুশাসনে তার কুপ্রভাব পড়বে।
মোদিকে মমতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ২০১১ সালে রাজ্য সরকারের ঘাড়ে দু’লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছিল বামফ্রন্ট। ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুদ বাবদ মোট দু’লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা মিটিয়েছে রাজ্য সরকার। এরপরেও চলতি অর্থবর্ষে ৪৮ হাজার কোটি টাকা মেটাতে হবে রাজ্যকে। এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যকে পেছনে ফেলে বহু ক্ষেত্রেই প্রথম স্থান অধিকার করেছে। যেমন, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কর্মদিবস সৃষ্টি এবং মোট অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয়। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে ব্যাঙ্ক ঋণ, শিল্পোপযোগী পরিবেশ, সংখ্যালঘুদের ভাতা প্রদান, স্বনির্ভর সংখ্যালঘুদের ঋণ প্রদান, গ্রামীণ আবাসন, গ্রামীণ যোগাযোগ, দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা ও ই–দরপত্রে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে।
এদিন বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল সাফল্য প্রসঙ্গে অমিত মিত্র বলেছেন, ‘বাংলার মানুষ আরও একবার প্রমাণ করলেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেই রয়েছেন। এবার নির্বাচনের প্রধান ইস্যু ছিল উন্নয়ন। গ্রামের মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।’