মে ১০, ২০১৮
রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি মেনে নেব না, মোদিকে কড়া চিঠি মমতার

‘অর্থ কমিশনের শর্ত মেনে নিলে রাজ্যকে ২২ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। যারা ভালো কাজ করল, তাদের প্রতিই কেন বঞ্চনা করা হবে?’ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দের প্রসঙ্গ তুলে এই মর্মেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি মানব না। মেনে নেব না যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। এই মর্মে প্রতিবাদে সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিবাদী চিঠিই বিরোধী রাজ্যগুলিকে একজোট করতে ‘অনুঘটকে’র কাজ করল। বৈঠকে ছিলেন বিরোধী রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা। সাত ঘণ্টা ধরে বৈঠকে ঠিক হয়, দাবি করা হবে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ। শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতিও। তৈরী হচ্ছে সম্মিলিত প্রতিবাদী স্মারকলিপির খসড়া। অর্থ কমিশনের ‘টার্মস অব রেফারেন্স’-এ বদল করতে পারেন একমাত্র দেশের রাষ্ট্রপতি।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অবজ্ঞা করছে। লঙ্ঘন হচ্ছে সংবিধানের নির্দিষ্ট ২৮০(৪) ধারা। তাই যেসব রাজ্য সমাজকল্যাণে উল্লেখযোগ্য কাজ করল, তাদের প্রাপ্তির অঙ্ক কোনওভাবেই কাটা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে দিল্লি, পাঞ্জাব, পুদুচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল এবং কর্ণাটক। এই ইস্যুতে প্রাথমিকভাবে পারস্পরিকভাবে টেলিফোনে কথা, পরে গতকাল অন্ধ্রপ্রদেশের অমরাবতীতে উল্লিখিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক হয়। ঠিক হয়ে গিয়েছে পরবর্তী পদক্ষেপও। অন্য বিরোধী রাজ্যগুলিকেও একজোট করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো গতকালের বৈঠকে হাজির হওয়া তো বটেই, বিরোধীদের একজোট করতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র উদ্যোগ নিয়েছেন। যোগাযোগ করছেন তামিলনাড়ু, ওড়িশার সঙ্গে।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে রাজ্যগুলির আর্থিক পাওনার ক্ষেত্রে ২০১১ সালের জনসংখ্যাকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। অথচ এতদিন ১৯৭১ সালের জনসংখ্যাকেই ভিত্তি করে হিসেব ধার্য হয়ে এসেছে। তাহলে এবার কেন নয়? মোদিকে চিঠিতে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’পাতার চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ১০০ দিনের কাজ, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, ই-টেন্ডারিংয়ে স্বচ্ছতার মতো একগুচ্ছ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। বামেদের করে যাওয়া ঋণ মেটাতে গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা সুদ দিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে রাজ্যকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ মেটাতে হবে। তাই যারা কাজ করছে, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে তাদেরই কেন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে? প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন তোলা হয়েছে, পরিবার কল্যাণের ক্ষেত্রে গোটা দেশের গড় জন্মহার যেখানে ২.৩, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে ভালো কাজ করেছে। এই রাজ্যে জন্মহার ১.৬। তাহলে নিজের তহবিল থেকে বিনিয়োগ করে পরিকাঠামো, প্রকল্প এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে যে রাজ্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ভালো করল, তাকেই বঞ্চনার শিকার হতে হবে কেন? ২০১১ সালকে ভিত্তি হিসেবে ধরলে ২০২০ থেকে ২০২৫, এই পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গের ২২ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে।
কেবল পশ্চিমবঙ্গই নয়। কেরল, ওড়িশা, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিও ৩৪৩ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। অন্যদিকে, লাভবান হবে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাত, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি।
প্রসঙ্গত, এর আগে নবম এবং ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের শর্ত (টার্মস অব রেফারেন্স) বদল হয়েছিল। একইভাবে এবার পঞ্চদশ অর্থ কমিশনেও তা করতে হবে, এই দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবারের তোড়জোড় হচ্ছে।