মে ২৭, ২০১৮
উন্নয়নকে ভিত্তি করে বাংলার 'নবজাগরণ'

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দ্বারা পরিচালিত বাংলার সরকারের তৃণমূল স্তরে উন্নয়নে জোর দেওয়ার ফলেই বাংলার ‘নবজাগরণ’ – লিখেছেন অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ভিন্ন ধারণা রয়েছে। সেটা গরীব ও দুঃস্থদের জন্যে হতে পারে ভালো রাস্তা, শিক্ষার সহজ ব্যবস্থা, নিখরচায় চিকিৎসা ব্যবস্থা বা দিনে দু’বার পেট ভরে খেতে পাওয়া। তারা যদি এইটুকু পেয়ে যান, তাহলেই তারা সন্তুষ্ট। প্রকৃতপক্ষে তাদের খুশি রাখা সহজ।
সমাজে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত স্তরে যারা আছেন, তাদের ক্ষেত্রে আবার উন্নয়নের নিরিখ সম্পূর্ণ আলাদা। সাফল্যের মই ধরে ওপরে ওঠার তাগিদে, তাদের দরকার সবরকম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, যেমন, নামকরা কর্পোরেট সংস্থা, আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাঁচ-তারা হাসপাতাল, ব্যস্ত বিমানবন্দর, ঝাঁ-চকচকে শপিং মল, ক্লাব, গল্ফ কোর্স। অর্থাৎ, আধুনিক বিশ্বের দরবারে যা কিছু গ্রহনসাধ্য, সবই তাদের চাই। এই দ্রুত বিশ্বায়নের দৌলতে এবং লাগামহীন চাহিদার খিদে তাদের সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অবহেলিত ও দুঃস্থ মানুষদের থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। এর ফলে তৈরী হয়েছে একটি দ্বিখণ্ডিত ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ যা কিনা ঐতিহ্যবাহী ভারতের সাথে খাপ খায় না। দিনে দিনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায়, এই বিভাজন আরও বেড়ে গিয়েছে এবং ফলস্বরূপ ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে উন্নয়নের সংজ্ঞাই বদলে গিয়েছে।
সুতরাং, উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেকোনও ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে চিরকালই একটি সমস্যা হল কাদের প্রাধান্য দেব। কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায় এই সমস্যার অতি সরল সমাধান করেছেন। যেদিন থেকে মানুষ তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছে, সেদিন থেকেই তিনি সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করেছেন, এবং সেই জন্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয়। মনে রাখতে হবে, এই উন্নয়নের উপলক্ষ শুধুমাত্র কিছু পাইয়ে দেওয়া নয়, বরঞ্চ একটি সামাজিক সম্মান প্রদান করা যা আগে ছিল না।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে দরিদ্র ঘর থেকে আসা যে ছাত্ররা আজকের দিনে স্কুলে পড়াশুনো চালিয়ে যাওয়ার জন্যে নানারকম সাহায্য পায় (যেমন আসা-যাওয়ার জন্য সাইকেল, পড়ার জুতো, ছাতা, বর্ষাতি ইত্যাদি)। এমনকি তাদের স্কুলেরও যথাযত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। একই ভাবে দরিদ্র গর্ভবতী মা তার প্রথম সন্তান প্রসবের জন্য সরকার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পায় এবং নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পায়।
আজকাল গ্রামের দিকে মাটির ঘর প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না। সরকারের তরফ থেকে প্রত্যেককে বাড়ি ও শৌচাগার তৈরি করতে প্রত্যক্ষ সাহায্য করা হয়। চাষিরা পান কমদামে ফসলের বীজ এবং ফলচাষিরা নানা চাষের জন্যে পান আর্থিক সাহায্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থরা পান সাহায্য, খাবার ও আশ্রয়। প্রতি পাঁচটি পরিবার কিছু গড়া হয়েছে টিউবওয়েল। কন্যাশ্রী ও ১০০ দিনের কাজে বাংলা তো শুধুমাত্র দেশ নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছে। যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই উন্নয়ন দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটা সারা রাজ্যজুড়ে হচ্ছে দলমত নির্বিশেষে।
এখন সরকার পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূল স্তরে। আগেকার আমলে যখন আমলাদের কাজ করতে হত তখনকার ক্ষমতাসীন নেতাদের মুখাপেক্ষী হয়ে, এখন তারা অনেক বেশী দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেন। এখন অবশ্য তাদের ওপর মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নজর থাকে এবং তিনি নিজে প্রতিটি কাজের খতিয়ান নেন।
এর আগে বাংলার কোনও মুখ্যমন্ত্রী এতটা দায়িত্ব নিয়ে উন্নয়নের পথে সারথি হওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি। আর তার ফলও মিলছে হাতে-নাতে। ইতিমধ্যেই সারা দেশের মধ্যে বাংলা শিল্প গড়ার সুবিধার মাপকাঠিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।