সাম্প্রতিক খবর

মে ৩১, ২০১৮

বিজেপির শেষের শুরু, উপনির্বাচনের ফল সম্পর্কে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপির শেষের শুরু, উপনির্বাচনের ফল সম্পর্কে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দেশজুড়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উত্তরকন্যায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তার বক্তব্যের কিছু অংশ:

আগেরবার আমরা ১২ হাজার ভোটার ব্যবধানে জিতেছিলাম, এবার ৬২ হাজারের ব্যবধান। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে এই ফলাফল হয় না।

সব কুৎসা অপপ্রচার, চক্রান্তের জবাব আজ মানুষ দিয়েছে। কয়েকদিন আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সকলে দেখেছে। এবারে কেউ বলতে পারবে না যে নির্বাচন কমিশন বা মিডিয়া বা সেন্ট্রাল ফোর্স ছিল না।

যেখানে যে দল শক্তিশালী তারাই জিতেছে- এটা একটা ফর্মুলা। এক হল মানুষের জয়, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মানুষ পছন্দ করেন না, সে যেই হোক। মানুষের মত ও পথ বোঝা যাচ্ছে, মানুষ কি চাইছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে এটা একটা সংকেত। কিন্তু বিজেপির জন্য এটা অশনি সংকেত।

ভাগাভাগি করে কেটে রেজাল্ট পাওয়া গেলেও এটা চিরকাল হয় না। আমি চাই না বাকিদের ঘর ভেঙে দিতে। সকলে আমরা একসাথে চলি, এটাই ভারতবর্ষ। নানা জাতি নানা মত, সব ধর্মের মানুষ এখানে বাস করে।

লালু প্রসাদ যাদবকে জেলে ঢুকিয়েও জয়ের অগ্রগতি রোখা যায়নি। প্রবাদে আছে,আহত বাঘ অনেক বেশি ভয়ংকর। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চাও জিতেছে, কেরালায় সিপিএম জিতেছে, পাঞ্জাবে কংগ্রেস জিতেছে। মেঘালয়তে কংগ্রেস এখন সর্ববৃহৎ দল।

বাংলায় আমি একা লড়াই করতে পারি কারণ মানুষের আশীর্বাদে আমি বাকি ৩টি দলের চেয়ে বেশি ভোট পাই। কারণ মানুষ জানে কাকে ভোট দেওয়া উচিত কাকে নয়, যতই কুৎসা চক্রান্ত হোক।

এটা সকলের জন্যই একটা শিক্ষা। আঞ্চলিক দল এবং একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল যারা অনেক জায়গায় ক্ষমতায় আছে, সকলের জন্যই শিক্ষা।

দরকার হলে জোট করতে হবে, এটাই ফর্মুলা। এই ফর্মুলা সফল হয়েছে।

মানুষ খুব বীতশ্রদ্ধ। সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। তার মধ্যে হঠাৎ করে ১ পয়সা দাম কমানো হল, এটা মানুষের প্রতি বঞ্চনা। হ্যা, কখনো দাম বাড়তেই পারে।কিন্তু ১৬ দিন অনবরত দাম বাড়িয়ে ১ পয়সা কমাচ্ছে। রাজনীতিতে গায়ের জোরে সব কিছু দখল করা যায় না।

ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যে যে অঙ্ক কাজ করবে, বাংলায় সেই অঙ্ক কাজ করবে না। ২৩ লক্ষ আর ১০ কোটি ভোটদাতার মধ্যে অনেক তফাত আছে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। ইউ পি সবচেয়ে বড় ভুমিকা নিয়ে রাজনীতির বদল আনবে।  ওখানে মায়াবতীজি, অজিত সিংহ, অখিলেশ যাদব ও কংগ্রেস যদি একসঙ্গে থাকে কমপক্ষে ৭০টা সিটের ফল বদলে যাবে।

লোকসভাতে বিজেপির সাংসদের সংখ্যা ২৭০-এ নেমে গেছে। কিন্তু এখনও কিছু দল ওদের সমর্থন করছে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত জনগণের আস্থার ওপরে আমাদের বেশী নির্ভরশীল হতে হবে। এখন কোনও কারণ ছাড়া ‘নো-কনফিডেন্স’ মোশন এনে কোনও লাভ নেই।  যে কোনও সময়ে ভোট হতে পারে। আমার সেটাই ধারণা।

আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে মানুষের ওপর নির্ভর করা উচিত, যেহেতূ নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকী নেই। আমি এই অবস্থায় একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা, কারণ আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে। এটা ভালো দেখাবেও না। সুতরাং আজকে যারা জিতেছে তাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। এবং আমার এটাই বলার থাকবে যে আঞ্চলিক দলগুলি এখন আমাদের দেশে ভালোই শক্তিশালী। সময়ে সময়ে রাজনীতির সমীকরণ বদলে যায়। অন্ধ্র প্রদেশে যেমন চন্দ্রবাবু নাইডু, তামিল নাড়ুতে এবার ডি এম কে, কেরালায় কংগ্রেস বা সিপিএম, মহারাষ্ট্রে এনসিপি, শিব সেনা ভালো করছে। রাজস্থানে কংগ্রেস ভালো জায়গায়, মধ্য প্রদেশে কংগ্রেস ভালো জায়গায় । কাজেই মনে রাখবেন শেষের শুরু হলো ইউ পি দিয়ে। এই ফল কিন্তু আমাদের চোখ, কান খুলে দিচ্ছে। গণতন্ত্রে গণতন্ত্রের থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং তার ওপরেই নির্ভর করা উচিত। ভারতবর্ষে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানের অনেক পরম্পরা ভাঙ্গার চেষ্টা হচ্ছে, অনেক ভেঙ্গেছেও, যেগুলি হওয়া কাম্য নয়। বাবাসাহেব আম্বেবকারের দেওয়া যে সংবিধান আমাদের রক্ষাকবচ, তাকে এগিয়ে রেখেই দেশের গনতন্ত্রের বৈতরিনী সবাইকে পার হতে হবে। আমরা যেন কেউ কখনও ক্ষমতায় এসে সেই সীমা লঙ্ঘন না করি। মিথ্যে কথা বা ফেক নিউজ কখনও হয়তো কাজে লাগতে পারে, কিন্তু সবসময় তা দিয়ে চলে না।