July 7, 2014
পর্যটনে জোয়ার আনতে উদ্যোগী রাজ্য

এক দিকে সরকারের পর্যটন মেলা। অন্য দিকে, রাজ্য পর্যটন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে অন্যান্য রাজ্য ও বিদেশি ট্যুর অপারেটরদের বৈঠক। ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনকে তুলে ধরতেই দ্বিমুখী ব্যবস্থা রাজ্যের।
এ বার উপচে পড়ছে ভিড়। দেশের পর্যটন মানচিত্রে নিজেকে তুলে ধরার ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগে এ বারের পর্যটন মেলায় উজ্জ্বল উপস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের। শুধু দার্জিলিং, শান্তিনিকেতন, দিঘা বা হালের তাজপুর–মন্দারমণিতেই যে সীমাবদ্ধ নয় এ রাজ্যের বেড়ানোর জায়গা, এখানেও যে আছে হাজারদুয়ারি, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম, সামসিং, মূর্তি–র মতো ট্যুরিস্ট স্পট, এবং সেখানে যে রাজ্য পর্যটন দফতরের বাংলোও রয়েছে, এর আগে সে সব কথা মানুষকে জানাতে উদ্যোগীই হয়নি সরকার। এ বার সেটাই হচ্ছে, জানালেন পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এ বারের পর্যটন মেলার দৃশ্য আগের থেকে অনেকটাই আলাদা। ঢুকতেই পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দফতরের বড় স্টল, নীল–সাদায় রাঙানো। চার দিকে এলইডি স্ক্রিনে রাজ্যের হাল–হকিকতের ভিডিও। ভিতরে সিঁদুর খেলার ছবি, বাউল গান, আদিবাসীদের মুখোশ ইত্যাদি। এ দিকে, শনিবার নিউ টাউনের ইকো পার্কের সবুজ দ্বীপের গ্লাস হাউসে নৌকায় করে পৌঁছে দেশ–বিদেশের পর্যটন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হল এ রাজ্যের আধিকারিকদের।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ট্যুর অপারেটরেরা স্বীকার করে নিলেন, নৌকায় কোনও দ্বীপে এসে বৈঠক করা অভিনব ব্যাপার। দেশের মধ্যে এই রকম অভিজ্ঞতা বিরল। বৈঠকে রাজ্য পর্যটন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হিডকোর চেয়ারম্যানও।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের ডাইরেক্টরেট অফ ট্যুরিজম বললেন, “শুধু দার্জিলিং বা সুন্দরবনই নয়, আরও নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র হয়েছে। পর্যটনের নতুন দিক খুলেছে। ভিন্ রাজ্যের ট্যুর অপারেটরদের কাছে সেই সব দিকগুলো আলাদা ভাবে তুলে ধরার জন্যই আমাদের এই বৈঠক।”
পর্যটন দফতরের আধিকারিকেরা জানালেন, কয়েক বছর আগেও যেখানে পর্যটনের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক কোটি টাকা বাজেট ধার্য করা হত, সেখানে এখন এই বছরে ২৬৬ কোটি টাকা বাজেট ধার্য হয়েছে। শুধু পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে সুন্দর করে সাজানোই নয়। পরিকাঠামোও উন্নত করা হচ্ছে।
যেমন, জলপাইগুড়ির তিস্তা ব্যারেজের কাছে গাজলডোবাতে তৈরি হচ্ছে ট্যুরিজম হাব। এতে এক দিকে যেমন থাকবে বিদেশি বা উচ্চবিত্তদের জন্য তারকা হোটেল, তেমনই থাকবে কম বাজেটের ইউথ হোস্টেল। গাজলডোবারএই ট্যুরিজম হাব থেকে পুরো ডুয়ার্স ও দার্জিলিং ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে পর্যটন দফতর। সুন্দরবনের ঝড়খালিতেও তৈরি হচ্ছে একই রকম পর্যটন হাব। এ ছাড়াও, রিভার রাফটিং, রক ক্লাইম্বিং, গল্ফ ট্যুরিজম–এর মতো নতুন কিছু পরিকল্পনার কথাও ভাবা হচ্ছে।
কলকাতাকে নতুন ভাবে চিনতে গেলে নিউ টাউনে আসতেই হবে। নিউ টাউনের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল ইকো পার্ক। ইকো পার্কের সাত একর এই দ্বীপের মধ্যে বানানো হচ্ছে ছোট ছোট কটেজ। এই পার্কের মধ্যে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বিশাল গ্লাস হাউস বানানো হয়েছে, তা দেশের কোথাও নেই। এখানে শুধু কনফারেন্সই নয়, কেউ চাইলে ভাড়া করে পারিবারিক অনুষ্ঠানও করতে পারবেন।
মেলায় পশ্চিমবঙ্গের দুপাশে উত্তরাখণ্ড এবং গুজরাতের স্টল। বহরে দুটোই পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় একটু বড়। গুজরাতের গড়বা নাচ, মাটির পুতুল, কাচের সাজ। উত্তরাখণ্ডে জমকালো রং, কেদারমাথ মন্দিরের আদলে নির্মাণ। তবে সেই দুই রাজ্যের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গও।
পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনায় রাজ্যের পর্যটন নতুন নতুন দিশা পাচ্ছে। এ বার পর্যটন মেলায় রাজ্যের স্টল অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়েছে।” তিনি আরও জানান, পর্যটনকে ঢেলে সাজতে চান তাঁরা। তাই রাজ্যের সংস্কৃতি, শিল্পকেও পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত করে সামগ্রিক ভাবে এক একটা পর্যটন কেন্দ্রের ভাবমূর্তি জনমানসে তৈরি করতে মেলার ব্রোশিওরগুলিকে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।
পরিষেবা ও বিপণনের দিকে জোর দিতে দফতরের অফিসে হেল্প–ডেস্ক খোলা, বিজ্ঞাপন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন সম্পর্কে মানুষকে জানাতে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, “ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস–অ্যাপের সাহায্যেও জনসংযোগ গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া, ই–মেল মারফত সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কাজেও জোর দেওয়া হচ্ছে।“