Latest News

September 27, 2017

আগামী দিনে বাংলা হবে নবজাতকের বাসযোগ্য

আগামী দিনে বাংলা হবে নবজাতকের বাসযোগ্য

ধর্ম সাধনা কিংবা দেব আরাধনা মানুষের সহজাত বৃত্তিগুলিকে শাসন ও সংযত করার জন্যই। পৃথিবীর সব ধর্মের মূল সত্যটি ইহাই। আজ পর্যন্ত যে সমস্ত ধর্মগুরু কিংবা পয়গম্বর প্রমুখ মানব কল্যাণীরা এসেছেন তাঁদের শিক্ষার অন্তর থেকে বিদ্বেষ বিষ নাশ করা। মানুষে মানুষে প্রীতি বিস্তার করা, সহনশীলতা প্রভৃতি মহৎ গুণরাজির অনুশীলন। অর্থাৎ, প্রবৃত্তির দাস মানুষকে দেবত্বে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু মানুষ ধর্মের মূল শিক্ষাকে ভুলে গিয়ে ধর্মের বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপ আচার-অনুষ্ঠান এবং বসনভূষণকে প্রাধান্য দিয়ে উন্মত্ততায় মেতে ওঠে। ইহা ধর্মান্ধতা এবং ধর্মের নামে বজ্জাতি ও নষ্টামি।

আদিম মানবের ভীতির অনুভব থেকেই একটা ধর্ম তথা দেবতাদের উদ্ভব হয়েছিল। নিসর্গ বিশ্বের নানা শক্তি ও ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে না পেরে অজ্ঞ সরলপ্রাণ মানুষরা নানা অলৌকিক শক্তি তথা দেবতার কল্পনা করে তাদের আশ্রয় নিয়েছিল। কালক্রমে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে বুদ্ধিজীবী মানুষ ধর্মতত্ত্ব ও দার্শনিক মতবাদের প্রতিষ্ঠা করে মানবসভ্যতার বিভিন্ন যুগে ধর্মগুরু এবং ধর্ম প্রবক্তারা বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেন। এভাবেই মানুষের চিন্তা ও বুদ্ধির প্রাগ্রসরতার অনুগামী হয়ে পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মীয় তত্ত্ব দর্শন উদ্ভূত হয়। হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রীষ্টান -ইসলাম ধর্ম বিশ্বের অধিকাংশ নরগোষ্ঠীর দ্বারা গৃহীত হয়েছে। সকল প্রধান ধর্মেরই মূলতত্ত্ব হল-ইশ্বর এক কিংবা অহিংসা, জীবের কল্যাণ ও সহিষ্ণুতা। তাই বলা হয়ে থাকে যা জীবনকে ধারণ করে থাকে তাই ধর্ম। আধুনিক মুক্তবুদ্ধির মানুষের ধর্ম তাই মানবতাবাদ।

সাম্প্রদায়িকতা ভারতের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি অতি পুরাতন ব্যাধি। মাঝে মাঝে নানা লোভ ও কায়েমি স্বার্থের অনুকূল বাতাবরণে ও সক্রিয় প্রয়াসে তাকে জাগ্রত, পুষ্ট ও বর্ধিত করা হয়েছে। আবার ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে মূলধন করে অভিসন্ধিপরায়ণ রাজনৈতিক দলসমূহ নূন্যতম মানবতাবোধ ও বিবেক বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে লিপ্ত। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার সংকীর্ণ উদ্দেশ্যে আসরে নেমে পড়েছে। বলা বাহুল্য তারা কেউ ধর্মপ্রাণ নয়, জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিকও নয়। তারা রাজনৈতিক প্রাণী (Political Animal)।স্বামীজি বলেছেন, যারা সাম্প্রদায়িক তারা ঈশ্বরকে ভালবাসে না, মানুষকেও ভালবাসে না। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণের জন্যই কয়েকটি দল হিন্দু ও মুসলমান ধর্মীয় সংগঠনগুলির প্রভাবকে কাজে লাগাচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় ওই সব দলের বিবেকহীন নেতৃবর্গ বিজ্ঞানের আলোকিত যুগেও ভারতকে মধ্যযুগীয় তমসাচ্ছন্ন জীবনে ফিরিয়ে নিতে প্রয়াসী।

আমরা তরুণরাই দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রদীপ্ত প্রতিমূর্তি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরই নিরবিচ্ছন্ন লড়াই করতে হবে। অবিরাম নিঃস্বার্থ কর্ম কর্মীর জীবনকে এক নুতন মানুষে রূপান্তরিত করে দেয়। মানুষের জীবন নতুন আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত করতে হবে। আদর্শের চরণে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে। রাজনীতি বৃত্তি বা পেশা নয়, রাজনীতি জনসেবার একটি মহান ব্রত। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের দেশে ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, বিনয়, বাদল, দিনেশের মতো আত্মত্যাগী স্বাধীনতা সংগ্রামী জন্মেছেন , তবু কেন আজও এত হিংসা, খুনোখুনি হয়। এরা জানে না ভারতের অতীত। আবহমান কাল থেকে ভারতবর্ষ বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতের মিলনভূমি। এদেশেই জন্মেছেন সমন্বয় –বাদি ধর্মের প্রবক্তা নানক, কবীর, চৈতন্য ও পরমহংসদেব। তাঁরা প্রত্যেকেই অহিংসা, প্রেম ও মৈত্রীর আদর্শ আমাদের দিয়ে গেছেন। নানা ধর্ম ও সংস্কৃতির মিলনেই রচিত হয়েছে সুমহান ভারতীয় সংস্কৃতি। সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল পরমত সহিষ্ণুতা। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছেন, ‘যত মত তত পথ’। প্রভু হজরত মহম্মদের বাণীও এই সম্পর্কে স্মরণীয়ঃ ‘যে ব্যক্তি সর্বশক্তিমান আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং মানুষকে ভালবাসে সেই প্রকৃত মুসলমান’। হিন্দু ও মুসলমান মৌলবাদীরা উভয় ধর্মের মূল তত্ত্ব আবৃত করে অজ্ঞ জনসাধারণকে ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের মানুষের শুভবুদ্ধির কাছে আবেদন এবং শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোকপাতে জনমানস থেকে কুসংস্কার ও অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে হবে।

আদর্শ শুধু বুলি নয়, শুধু সমাজজীবনের জন্য নয়, ব্যক্তিজীবনের নয়। কর্মীর জীবন আদর্শবাদে রূপান্তরিত না হলে আদর্শবাদ প্রচার অর্থহীন। নিজের জীবন ও কর্ম , আদর্শবাদ এবং ব্যক্তিগত জীবনের আচার ব্যবহারের মধ্যে সংগতিবিধান সম্ভব হলেই সত্যিকার রাজনৈতিক কর্মী হওয়া সম্ভব।

বিগত বছরগুলিতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের কথা চিন্তা করে যে সমস্ত প্রকল্পগুলি করেছেন যেমন, ‘খাদ্যসাথী’, সুলভ মূল্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণায় আজ পশ্চিমবঙ্গের ৮ কোটি ৬৬ লক্ষ মানুষ অর্থাৎ, ৯০.০৬% মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় এসেছেন। ‘গীতাঞ্জলি’, প্রত্যেকের সুনিশ্চিত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। ‘নিজ গৃহ, নিজ ভূমি’, রাজ্যের ভূমিহীন দরিদ্র মানুষের স্থায়ী আশ্রয়, ‘শিক্ষাশ্রী’, পিছিয়ে থাকা পরিবারের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সাইকেল বিতরণের একটি প্রকল্প ‘সবুজ সাথী’, নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এই প্রকল্পে ৭০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সবুজশ্রী, সবলা, যুবশ্রী, মুক্তির আলো, গতিধারা, স্বাস্থ্য সাথী, মুক্তিধারা, সমব্যাথি আরও কত কি? আর দিদির কন্যাশ্রী প্রকল্প আজ বিশ্ববন্দিত। এই প্রকল্প কন্যা শিশুর জীবনকে আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তাদের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। আমার অনুরোধ যুবকদের প্রতি, বিশেষ করে জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বের কাছে, আপনারা ব্লকে ব্লকে যান। বুথে বুথে যান। বাংলার প্রতিটি ঘরে প্রতিটি মানুষের কাছে এই প্রকল্পগুলি তুলে ধরুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন শুধু বাংলার সর্বস্তরের মানুষের জীবনধারণের মান উন্নত করার জন্য। আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মযোগী। তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন মানুষের কল্যাণে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মানুষ, তিনি যে ধর্মেরই হোক না কেন তাঁর বড় আপন। তাই তিনি উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ সাগর থেকে পাহাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে দিবারাত্র পরিশ্রম করে চলেছেন। কবি সুকান্তের চিন্তাধারায়, ‘ এ বাংলাকে নবজাতকের বাসযোগ্য’ করে যাওয়ার জন্য তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আজ যখন দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব চলছে, বিচ্ছিন্নতাবাদ আমাদের এই রাজ্যে নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তখনই তো আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত, ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’। আমাদের জননেত্রী মা-মাটি-মানুষের কাণ্ডারি। তাই তো তিনি বড়দিনে চার্চে যান ঈদের নামাজে যান আবার নিজের বাড়িতে কালীপূজো করেন। ধর্মের ধ্বজাধারীদের প্রতি তার বার্তা – রামকৃষ্ণের বানী। ‘যত মত তত পথ’।

আসুন, আজ ভারতবর্ষের সীমানা বরাবর শত্রুর যে চোখ রাঙানি, তাঁকে উপেক্ষা করে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঐতিহ্য রক্ষা করার অঙ্গীকার করে শপথ নিই, এই বাংলাকে বিশ্ববাংলায় পরিণত করতে আমরা বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রামে জীবন দেব।