February 15, 2014
কর্মসংস্থান দু`লক্ষ মানুষের, প্রতিশ্রুতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

এক দিকে কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দুর্গাপুরে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেল) বিনিয়োগ সৃষ্টি করবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। অন্য দিকে জেলায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের শাখা, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিদ্যালয়ের সাব-সেন্টার চালু হয়ে গেলে শিক্ষাক্ষেত্রেও বাড়বে সুবিধা। শুক্রবার পানাগড়ে মাটি উৎসবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে এমন আশার আলোই পেলেন বর্ধমান জেলার মানুষ।
এ দিন উৎসবের মঞ্চ থেকে রিমোটে রাজ্যের শ`খানেক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধাও তুলে দেন উপভোক্তাদের হাতে। এ দিন `দক্ষতা বিকাশ উদ্যোগ` প্রকল্পের সূচনা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, `পশ্চিমবঙ্গ তাঁত শিল্প সার্কিট বিকাশ প্রকল্প`-এর মাধ্যমে ৯৭ হাজার তাঁতশিল্পী ও অনুসারী কর্মীদের তিন বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
পোশাক প্রস্তুত শিল্পে ৬৮০০ জন, কারিগরি ও পরিষেবা শিল্পে ৫ হাজার জন এবং মণিমুক্ত প্রশিক্ষণ শিল্পে ৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নানা সংস্থার সঙ্গে `মউ` সই হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, `ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে রাজ্য এখন প্রথম স্থানে। কেউ তাঁত বোনে, কেউ মাদুর বানায়, কেউ কারুশিল্পী, কেউ গয়না গড়ে, কেউ চারুশিল্পী। সবার উন্নতি চাই। দক্ষতা বিকাশ উদ্যোগের ফলে প্রায় দু`লক্ষ মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াবেন।`
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যে রাজ্যে ২৩ লক্ষ কৃষককে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। ১ লক্ষ ১০ হাজার পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সব ব্লকে আরও ৫২ হাজার পাট্টা দেওয়া হবে। মাথার উপরে ছাদের ব্যবস্থা করে দিতে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, `একশো দিনের কাজে গত আর্থিক বছরে এক নম্বরে ছিল রাজ্য। এ বার বাঁকুড়া জেলা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান পেয়েছে। ৫ বছরে ৫০ হাজার পুকুর কাটার কথা ছিল। আড়াই বছরেই ১ লক্ষ ২ হাজার কাটা হয়ে গিয়েছে।`
প্রতি জেলার সেরা চাষিদের কৃষক সম্মান, উদ্যানরত্ন ও মৎস্য সম্মান পুরস্কার দেওয়া হয়। বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক ক্যালেন্ডারের উদ্বোধন হয় এ দিন। রাজ্যের দু`শোরও বেশি রাস্তা, ৬৩টি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া জেলার ১৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩২টি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রীতিমতো ভিড় হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানে বড় আকর্ষণ ছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ। মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে মঞ্চে গানও করেন তিনি। বিশেষ মঞ্চে ছিলেন একশো জন বাউল। গত বারের মতোই উৎসবে বিভিন্ন সরকারি দফতর স্টল দিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের স্টলে বিনামূল্যে নানা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে প্রথম দিনেই নাম লেখানোর ভিড়। কৃষি দফতর ফেরোমোন দিয়ে কীটপতঙ্গ দূর করার মডেল হাতেকলমে দেখানোর ব্যবস্থা করেছে। ভ্রাম্যমাণ মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র আনা হয়েছে। `জল ভরো জল ধরো` প্রকল্পের পুকুর খোঁড়া হয়েছে গত বারের মতোই। এ বার উৎসবের থিম `ধানের গোলা`।
মূল মঞ্চ থেকে শুরু করে অধিকাংশ স্টল ধানের গোলার আদলেই। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্পে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৯ লক্ষ ছাত্রীকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরেও বিভিন্ন স্টলে ভিড় জমান মানুষ। সন্ধ্যায় ছিল নট্ট কোম্পানির যাত্রা। উৎসব চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতি সন্ধ্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। কলকাতা থেকে এসেছেন পাটশিল্পী বিশ্বজিৎ দাস। শুধু পাট নয়, মাছের কাঁটা দিয়েও শিল্প ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পী স্বপন গিরি যন্ত্র দিয়ে মাদুর বানিয়ে বিক্রি করছেন। মালদহ থেকে বাহাদুর রুইদাস এসেছেন কাঠের বাদ্যযন্ত্র, বেতের সামগ্রী নিয়ে। গতবার ঢেঁকি ছাটা ও তুলাইপঞ্জি চালের চাহিদা ছিল। এ বার চাল রয়েছে দেদার। বিভিন্ন স্টল ঘোরার ফাঁকে বর্ধমানের রানা বসুঠাকুর, দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্তেরা বললেন, `মেলার জৌলুস গত বারের থেকেও বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।`
রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়েরা ছাড়াও এ দিন মঞ্চে ছিলেন বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধান উপাধ্যায়েরা।