সাম্প্রতিক খবর

অগাস্ট ৩০, ২০১৯

এবার মাছের চাষ ধানজমিতে

এবার মাছের চাষ ধানজমিতে

কথায় বলে, ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। কৃষি দপ্তর ও মৎস্য দপ্তর যৌথ ভাবে সমন্বয় কৃষি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। যেখানে জমিতে ধানের সঙ্গেই বাড়বে কই, সিঙ্গি, মাগুর থেকে শুরু করে রুই-কাতলা। এই প্রকল্পে রাসায়নিকের ব্যবহার নিষেধ। সবটাই জৈব। রাজ্য সরকারের ‘আত্মা’ কর্মসূচির আওতায় এই বছর মালদার ১৫টি ব্লকের মধ্যে ১০টিতে পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এমনই এক কর্মসূচীতে ইংরেজবাজার ব্লকের মাদিয়া গ্রামে দুই একর ধানী জমিতে মাছের চারা ছাড়লেন সভাধিপতি ও জেলাশাসক। এই প্রকল্প চাষিদেরও আর্থিক স্বচ্ছলতা দেবে।

কৃষি আধিকারিক তথা আত্মা কর্মসূচীর জেলা প্রজেক্ট ডিরেক্টর বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে অন্তত এক হাজার মাছের চারা ছাড়া যায়। এর জন্য কৃষককে কেবল তিন-চার সারি ধান কম লাগাতে হবে। সেই জায়গায় জমির চারপাশ দিয়ে নালা কাটতে হবে। আর যদি পাশে নয়ানজুলি থাকে, তাহলে সেটারও দরকার নেই। এক বিঘা জমিতে সাধারণত ২০ থেকে ২২ মণ ধান হয়। যার বাজার মূল্য ১৫ হাজার টাকা। সেখানে ওই এক বিঘা জমিতে ধানের সঙ্গে মাত্র ছয়-সাত মাসের জন্য মাছও চাষ করলে বিঘা প্রতি হাজার পাঁচেক টাকা মাছের পেছনে খরচ করে অন্তত পাঁচ কুইন্টাল মাছ পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য কম করেও ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কৃষক জমির ধান থেকে চাষের খরচ তুলবেন আর মাছ থেকে মোটা লাভ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই চাষ হবে বেশ কয়েক জনের জমি মিলে। যা পক্ষান্তরে গ্রামের মানুষের মধ্যেও যৌথ অংশীদারিত্ব গড়ে দেবে। কমবে চাষের খরচ।’

অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার বলেন, ‘ধান ও মাছ এক সঙ্গে চাষ করার জন্য জমিতে কোনও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হবে না। ধানের জমিতে সাধারণত যে পোকা এবং আগাছার সমস্যা থাকে, মাছ তা খেয়ে নেবে। জমিতে জল কমে এলে, মাছেরা আশ্রয় নেবে পাশে কাটা নালা বা নয়ানজুলিতে। সব মিলিয়ে ৬-৭ মাসের ব্যাপার। আবার মাছ ও ধান তুলে নেওয়ার পরেও নালাতে যে জল থাকবে, তা দিয়ে নতুন কোনও সব্জির চাষ হয়ে যাবে।’

মৎস্য দপ্তরের ফিসারিজ এক্সটেনশন আধিকারিকের বক্তব্য, ‘আমাদের রাজ্যে চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন কম। ফলে মুনাফার আশায় বাড়ছে ভেড়ির সংখ্যা। হাওড়া, হুগলী, দুই ২৪ পরগনার বহু জায়গা ভেড়িতে ভরে গিয়েছে। এমনকি, অনেক চাষি চাষের জমির চরিত্র বদলে পুকুর কেটে মাছ চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু তাতে রাসায়নিক সার ও নানা আবর্জনার ব্যবহার এত বেশি যে, সেই জল এবং মাছ দুটোই বিষাক্ত। সেই দিক থেকে ধান ও মাছের সহাবস্থান নতুন সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে। চাষের জমিও বাঁচবে আবার কৃষকও লাভবান হবে।’