জুন ৪, ২০১৯
ইভিএম এর বদলে ব্যালটে ভোট করানোর দাবিতে আন্দোলনে নামতে চলেছে তৃণমূল

আজ নবান্নে তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়কদের সাথে একটি বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে পর্যালোচনা হয় এই বৈঠকে।
বৈঠকের পর তিনি জানান যে আগামী ২১শে জুলাইকে সামনে রেখে রাজ্যজুড়ে জনসংযোগ যাত্রা করবে দল।
তিনি আরও জানান যে ইভিএম এর বদলে ব্যালটে ভোট করানোর দাবিতে আগামী দিনে আন্দোলনে নামতে চলেছে তৃণমূল।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ:
আমাদের এই সময় নির্বাচন করতে হয়েছে সমস্ত সংস্থার বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক সাহসের সঙ্গে কাজ করেছে।
টাকার শক্তি, পেশী শক্তি, সরকারি শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি, দুর্নীতির শক্তি, মিডিয়ার শক্তি – সমস্ত কিছুর অপব্যবহার হয়েছে এই নির্বাচনে।
এত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেও আমাদের ভোট ৪% বেড়েছে। কেউ এক ভোটে জেতাও জেতা। এই জেতা স্বতঃস্ফূর্ত না, গায়ের জোরে জেতা।
১৯৮৪তে আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জিতেছিলাম। জোড় করে পার্টি অফিস দখল করতে হয়নি, ভাঙতে হয়নি, অত্যাচার করতে হয়নি। ২০০৯য়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল, এসব প্রশ্ন তখন আসেনি। এত শক্তি অপব্যবহার করেও তো (এই রাজ্যে) সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়নি। তাতেও এত দাপাদাপির কারণ এই জয় স্বতঃস্ফূর্ত নয়, মানুষের সমর্থনে নয়।
ওরা কৃত্রিম মেকানিজমে জিতেছে। কাল যদি এই মেকানিজম না থাকে, তাই, তাড়াতাড়ি পার্টি অফিস দখল কর, দাতা কর্ণের মত টাকা দাও, আদর্শ বিলিয়ে দাও, বাংলার সংস্কৃতিকে গুজরাটের সংস্কৃতি করে দাও।
বিজেপি সম্পূর্ণ ফেক নিউজ তৈরী করে সারা দেশের কাছে দেখাচ্ছে শুধু বাংলায় গুন্ডামি হয়, বাংলায় নাকি মা বোনেরা রাস্তায় বেরোতে পারে না। এটা আমাদের লজ্জা। বাংলার মিডিয়ারা এটার যথাযোগ্য জবাব দেয়নি। আপনারা সত্য বলুন বাংলার জন্য।
২১শে জুলাইকে কেন্দ্র করে আমরা ৫/৬টা জেলা থেকে, সমতল থেকে পাহাড়, সব জায়গায় আমরা জনসংযোগ যাত্রা করব। এটা বিধায়করা করবে। সঙ্গে ছাত্র, যুব, মহিলা, জয় হিন্দ বাহিনী, বঙ্গজননী বাহিনীর সকলে। এছাড়া ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে করা হবে।
পাঁচজনের কমিটি করা হয়েছে – সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। রাজ্যস্তরের নেতারা ঠিক করবেন কোন জেলায় কবে এই অনুষ্ঠান হবে। বিধায়করা জেলা সভাপতির সঙ্গে বসে রুটটা প্ল্যান করে নেবেন।
নো আইডি কার্ড, নো ভোট আন্দোলন থেকেই ২১শে জুলাই হয়েছিল। এই আন্দোলন এমন এক জায়গায় পৌঁছেছিল সিপিএম গুলি চালিয়ে আমাদের ১৩ জনকে মেরে ফেলেছিল। ১০০ জনের ওপর গুলিতে আহত হয়েছিল।
এই ২১শে জুলাইকে সামনে রেখে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও, ব্যালট ফেরাও’ ‘মেশিন চাই না, ব্যালট চাই’ ‘আমাদের ব্যালট ফিরিয়ে দাও’ এই আন্দোলন আমরা সারা দেশজুড়ে করব। শুরু হবে বাংলা থেকে। সকল দলকে বলব একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে।
আমেরিকার মত দেশ ইভিএম বাতিল করেছে। আমি তো সন্দেহ করি। ৯৮% মেশিনে যে প্রোগ্রামিং করা নেই, তুমি কি করে জানবে? নির্বাচন কমিশনের দেখা উচিৎ ছিল, তারা দেখেনি। সুপ্রীম কোর্ট এই কেস রিজেক্ট করে দিয়েছে। বিচার পাওয়ার জায়গায় আমরা বিচার পাইনি।
অনেক মেশিন ভোটের দিন খারাপ হয়ে গেছিল, নতুন মেশিন আনা হয়েছিল, যেগুলো আনা হয়েছিল, সেগুলোয় এই ২% মক পোল হয়নি। এতে যে লোড করা ছিল না, তার কি প্রমাণ আছে? কয়েক লক্ষ মেশি যে নিরুদ্দেশ ছিল, কোথায় গেল? আমরা ইভিএমের এই ভোট মানুষের রায় বলে মানি না। এর বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার ভিন্ডিক্টিভ হয়ে আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে করতে পারে, আমার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে কথা বলার। আমি মনে করি ইভিএম চাই না, ব্যালট ফিরিয়ে দাও।