অগাস্ট ২৮, ২০১৮
ওদের টাকা আছে, আমাদের হৃদয় আছে : ছাত্র সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ ২৮শে আগস্ট। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রত্যেক বছরের মতোই মেয়ো রোডের পাদদেশে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে দল। প্রধান বক্তা ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিদির বক্তব্যের কিছু অংশ:
ছাত্রযুবরাই দেশ চালাবে, সমাজ গড়বে তাই এখন থেকে তাদের নিজেকে নিঃস্বার্থ হিসেবে তৈরী করতে হবে। নিজেকে মানুষের মতো মানুষ গড়ে তুলতে হবে, দর্পণে নিজের মুখ দেখে নিজেকে প্রশ্ন কর, তুমি নিজে উপযুক্ত কিনা। নিজে উপযুক্ত হলে সবাই তাকে উপযুক্ত ভাববে।
আমি এমন কর্মী চাই যে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাবে না, যে টাকার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, যে দাঙ্গার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, যে কুৎসার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, চরিত্রহনন করবে না। আমি চাই উন্নততর চরিত্রের ডেডিকেটেড কর্মী। আজকে ডেডিকেশনের খুব অভাব। আমি বর্তমান প্রজন্মকে অনুরোধ করব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার জন্য।
নেতাজি, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, মাতঙ্গিনী হাজরা কি টাকা দেখে রাজনীতি করতেন? না। টাকার বিকল্প আছে কিন্তু জীবনের বিকল্প নেই, ডেডিকেশনের বিকল্প নেই। টাকা আজ আছে কাল নেই, তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ব্যবহার করা উচিত। টাকা দিয়ে চরিত্র নষ্ট করতে নেই। তাই ক্ষমতা, টাকা পয়সার চেয়ে দায়িত্ব, দায়বদ্ধতার গুরুত্ব অনেক বেশি।
আজ দেশটাকে ভেঙে ফেলার জঘন্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে, কুৎসা, অপপ্রচার চলছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সভ্য, শিক্ষিত সমাজ, ছাত্র-যুব সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
২০১০-এ ইউপিএ আমলে নন পারফর্মিং এসেট ছিল ২ লক্ষ কোটি, বিজেপি সরকারের আমলে এনপিএ ১৪.৭ লক্ষ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি আসার পর সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্কের কেলেঙ্কারি হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলোর সর্বনাশ হয়ে গেছে। নোট বাতিলের সঠিক তথ্য এখনও কেউ জানে না। কত টাকা ফিরে এসেছে, কি করে ফিরে এসেছে কেউ জানে না।
গতকাল পেট্রোল ও ডিজেলের দাম সবচেয়ে বেড়ে গিয়েছিল। টাকার দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে ভারতবর্ষে। টাকার দাম কমেছে, মানুষের জীবনের দাম কমে গেছে, আর দাঙ্গার দাম বেড়েছে, মানুষ অসহায় হয়ে গেছে।
গত ৭ বছরে জঙ্গলমহলে কোনও সমস্যা হয়নি, মাওবাদীদের হাতে কেউ খুন হয়নি, দার্জিলিংও শান্ত ছিল, দিল্লির এসব সহ্য হয় না। ওরা দার্জিলিংকে আবার স্তব্ধ করে দিলো, তারপরেও আমরা সেখানে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি।
ভোটের রাজনীতি শুরু করেছে। হাজার হাজার সিটের মধ্যে জঙ্গলমহলে মাত্র কয়েকটা সিট পেয়েছে, তাই নিয়ে খুনের রাজনীতি করছে। আজ সকালে আমাদের দীর্ঘদিনের এক সংগ্রামী কর্মীকে জামবনিতে খুন করা হয়েছে। খুনোখুনির রাজনীতি আমি কোনদিনই সমর্থন করতাম না, আজও করি না।
সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার ৩৪ বছর ধরে যে সিপিএমের হার্মাদরা সারা বাংলা জুড়ে মানুষকে অবিশ্রান্ত অত্যাচার করে এসেছে, সন্ত্রাস করে এসেছে, কুত্সা করে এসেছে, খুন করে এসেছে, লুঠ করে এসেছে আজ তারাই বিজেপির ওস্তাদ আর জল্লাদ হয়ে গেছে।
বর্ডার থেকে অস্ত্র এনে, টাকা ছড়িয়ে, কোটি কোটি টাকা নিয়ে, এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে। কখনও এজেন্সিকে বলছে যে তৃণমূলকে নোটিস দাও, কখনও বিজেপির লোকদের কাঁধে তুলে নিয়ে চিৎকার কর।
বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের কাজ হচ্ছে কোন কিছু পাচার হলে তা রোখা; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা ওদের কাজ নয়, সেজন্য রাজ্যের পুলিশ আছে। সিআরপিএফ-কে আমি সম্মান করি; এর কাজ হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর আইন অনুযায়ী কাজ করা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কোন সমস্যা হলে তা রাজ্য পুলিশের দায়িত্ব, কারণ ওটা রাজ্যের বিষয়। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখলাম চারদিকে বিএসএফ-এর লোকেরা ভোটার লাইনে চলে যাচ্ছে।
চারদিকে ভিনদেশি কিছু সংগঠন আছে (সারা দেশে এদের ৩৬টি সংগঠন আছে) যারা বিদেশের চুরির টাকায়, নোট বাতিলের টাকায়, তছরুপ করা হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে হিন্দু সংগঠনের বা মুসলিম সংগঠনের নাম নিয়ে। ধর্ম, উৎসব সবার, যে ধর্ম মানুষকে অশ্রদ্ধা করতে শেখায় না আমি তাকেই ভালোবাসি।
আমরাও হিন্দু ধর্মকে বিশ্বাস করি, তুমি (বিজেপি) কে হরিদাস যে তুমি ঠিক করে দেবে আমি দুর্গার পুজো করব, না কালির পুজো করব না তোমাদের পায়ে ফুল দিয়ে পুজো করব? কে কি খাবে, কি পরবে, এমনকি বন্যায় কাকে কতটা সাহায্য করা হবে সেটাও নাকি ওরা ঠিক করে দেবে।
মুখে হরি হরি আর মানুষকে শুধু খুন করি. এনকাউন্টারের নাম করে যাকে ইচ্ছে খুন করছে, ন্যাশনাল চ্যানেলগুলোকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে বিজেপি। কেউ ওদের বিরুদ্ধে একটাও কথা বলে না। কোন সাংবাদিক যদি নিজে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে তাকে ভয় দেখিয়ে তার চাকরি নিয়ে নিচ্ছে।
পুরো দেশকে বিকিয়ে দিয়েছে। ওরা ইন্দিরা গান্ধীর আমলের এমার্জেন্সির কথা বলে, আর এখন দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, ধর্ম পালনের অধিকার নেই, ইচ্ছেমতো খাবার খাওয়ার অধিকার নেই। এখন এমার্জেন্সির ঠাকুরদাদা চলছে।
ওরা নতুন ইতিহাস তৈরী করছে। রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, গান্ধীজি, বিবেকানন্দর নাম ভুলিয়ে দেবে। মোঘলসরাই স্টেশনের নাম বদলে দিয়েছে, এরপর হয়তো লাল কেল্লার নামও বদলে দেবে। স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য কন্যাকুমারিকা দখল করে নিয়েছে আরএসএস। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমর্ত্য সেনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের চরিত্র বদলে দেওয়া হচ্ছে, দেশের দেবদেবীদের রং বদলে দিচ্ছে। যা ইচ্ছে তাই করছে।
আমরা সব দেবদেবীকে সম্মান করি। কিন্তু ওরা বাংলার দেবদেবীর কথা বলে না কারণ ওদের সবটুকুই ধার করা, নিজেদের কিছু নেই।
আবার বলছে আসাম থেকে তাড়িয়েছি, এরপর নাকি বাংলা থেকে তাড়াবে বলছে। আমি বলছি, বাংলার গায়ে ওরা হাত দিয়ে দেখুক, তারপর বুঝবে বাংলা কি। আসামের মানুষদের জন্য বাংলা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে কারণ কোন ভারতীয় নাগরিককে তাড়ানো হলে আমরা কেউ ছেড়ে কথা বলবো না।
ওরা সকলের জন্মের সার্টিফিকেট চাইছে, অথচ নিজেদের সার্টিফিকেট কে দেবে তা ভাবছে না। পারলে নিজের তিন জন্মের সার্টিফিকেট আগে দাও। ভাগ্যিস এখানে জন্মেছিলাম, নাহলে আমাকেও বলতো আমি এখানকার নাগরিক নই। ১৯৭১ সালের পর থেকে যারা ভারতে এসেছে তারা আইনত ভারতের নাগরিক।
হরিদাসরা সব ভাষণ দিয়ে বলছে বাংলায় এনআরসি চালু করতে হবে। কে চালু করবে এখানে? আমরা সব এখানে বাঘের বাচ্চারা বসে আছি, এখানে চালু করতে এলে নিজেরা শেষ হয়ে যাবে। আর কবে চালু করবে? ২০১৯-এ ওদের বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে। আমাদের স্লোগান ২০১৯, বিজেপি ফিনিশ।
কোনো লজ্জা নেই, কোন ভয় নেই। এত নির্লজ্জ পার্টি আমি আগে কখনো দেখিনি। অটলজিকে আমরা শ্রদ্ধা করি, তার চিতাভস্ম নিয়ে যা কীর্তি করছে। মানুষটাকে সম্মান করার বদলে অপমান করা হচ্ছে। তাদের দল না করলেও আমরা তাদের সম্মান করি।
এ কোন বিজেপি? কোটি কোটি টাকা নষ্ট করছে, আর বড় বড় ভাষণ দিচ্ছে। টাকা আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। জনগণের টাকা লুঠে এইসব করছে। কাজের কাজ কিছু নেই। দেশে বেকারের সংখ্যা কমেনি। বাংলায় ৪০% বেকারত্ব কমেছে, যা বাংলার মানুষের কৃতিত্ব।
২০২২ এ নাকি ওরা কৃষকদের আর দ্বিগুন করবে, বাংলায় তিনগুন বাড়িয়ে দিয়েছি। ওদের শিক্ষা নেওয়া উচিত বাংলা থেকে। বাংলা থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে, কয়েকটা প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভাষণ দিচ্ছে এতো এতো কোটি টাকা দিয়েছি। মনে হচ্ছে যেন নিজেদের ব্যাংক থেকে দিচ্ছে। এটা জনগণের টাকা। ইনকাম ট্যাক্স জনগণ দেয় যা তোমরা রাজ্য থেকে নিয়ে যাচ্ছ কেন্দ্রের ভাণ্ডারে।
একটা ফসল বীমা চালু করেছে, কেন্দ্র দেবে ৩০% টাকা আর রাজ্য দেবে ৭০% টাকা। আর ছবি বেরোবে প্রধানমন্ত্রীর। রাজ্যের টাকাই রাজ্যকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের ভিক্ষার প্রয়োজন নেই, ছবি দিয়ে অনেক মার্কেটিং হয়েছে।
ফেসবুকের নামে ফেক নিউজ করছে। হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা দিয়ে টিম রেখে দিয়েছে মিথ্যে কথা বলার জন্য। বাংলার নামে বাংলাদেশের ছবি দেখায়, হিন্দি ফিল্মের ছবি দেখায়। ফেসবুকের ওই সব কথায় একদম বিশ্বাস করবেন না। ছাত্রছাত্রীদের বলবো ভালো করে ফেসবুক টুইটার করবে। একটা বাজে কথা বললে ১০টা জবাব দেবে, আর এমন জবাব দেবে যাতে ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়।
ওদের টাকা আছে, আমাদের টাকা নেই। আমাদের ব্রেন আছে, আমাদের হৃদয় আছে, আমাদের আবেগ আছে, আমাদের বিবেক আছে। বাংলার মেধা আছে, বাংলার বুদ্ধি আছে। আমি সেই ছাত্র যৌবনকে চাই যারা টাকার কাছে মাথা নত করবে না নিজের ইচ্ছেয় কাজটা করবে। এইটা থেকে আগামিদিন ভবিষ্যৎ তোমরা গড়বে।
যেভাবে দেশ চলছে, এক জঘন্যতম জায়গায় এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। যে প্রতিবাদ করছে, তার নামে এফআইআর করা হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করছে তো তার বিরুদ্ধে সিবিআই লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এইসব প্রতিষ্ঠানকে আমরা সম্মান করতাম, এখনও মনে করি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। এখন বলছে পুলিশদের বিরক্ত কর।
সিপিএম আমলে সারদা তৈরী, সিপিএম বাঁচার জন্য বিজেপির পা ধরেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের চিটফান্ডের টাকায় রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই। প্রমাণ না থাকলেও তৃণমূলকে ডিস্টার্ব করতে হবে, কংগ্রেসকে ডিস্টার্ব করতে হবে, কুমারস্বামীকে ডিস্টার্ব করতে হবে, চন্দ্রবাবু নাইডুকে ডিস্টার্ব করতে হবে, মায়াবতীকে ডিস্টার্ব করতে হবে, অখিলেশকে ডিস্টার্ব করতে হবে, স্টালিনকে ডিস্টার্ব করতে হবে, লালুজীকে ডিস্টার্ব করতে হবে। নয়তো বিজেপি কি করে ক্ষমতায় থাকবে? ক্ষমতায় থাকার জন্য এই এজেন্সিগুলোকে লাগিয়েছে। আগামিদিন বিজেপি থাকবে না, কিন্তু, যারা বিজেপির কথা শুনে এগুলো করছেন, তাদের প্রত্যেকের নাম লেখা থাকবে।
ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেব আগামীদিন। তৈরী আমরাও আছি। আমাদের লোকসভার দলীয় নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনারা ছ’মাসের মতো গ্রেপ্তার করে রেখে দিয়েছিলেন। আমাদের ওপর অনেক জুলুম করেছেন। কেউ একলক্ষ টাকা পার্টিতে চাঁদা নিয়েছে বলে তার জন্য নারদা করেছেন, আর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আপনারা নোটবাতিলের নাম করে কামিয়েছেন, কে জবাব দেবে? বিদেশী টাকা আপনার নামে আছে, কোনও স্ক্রিনিং হবে না কেন? আপনি কেন বিদেশী টাকা নেবেন পার্টিতে? আমি জবাব চাই।
বিদেশী টাকা দিয়ে একেকটা ভোট কিনবে তিনদিনের জন্য, ৩৬৫দিন কাউকে দেখবে না। তোমাদের রাজনীতি জঘন্য রাজনীতি।
স্বাধীনতার পর অনেক সরকার এসেছে, সবাইকে ভালো বলব না, কিন্তু, আজ পর্যন্ত কেউ এইরকম করেনি ও ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দিয়ে যায়নি।
আজ ছাত্র যুবদের দায়িত্ব অনেক বেশী। কাল তোমাদের কেউ কেউ জীবিকা শুরু করবে, কিন্তু, নিজের মাতৃভুমিকে কখনও ভুলো না।
বাংলায় আমরা থাকবো, বাংলাকে বাঁচাবো, বাংলা গড়ব, বাংলার চোখ দিয়ে সারা বিশ্বকে পথ দেখাব, এটাই আমাদের আজকের দিনের শপথ হোক। বাংলাকে ভালবাসতে হবে। নিজের পরিচয় কখনও হারিয়ে ফেলবে না। বিজেপি আমাদের যতই চ্যালেঞ্জ করুক, আমরা বলি, বাংলা ভয় পায় না। বাংলাকে চমকালে বাংলা গর্জায়, বাংলাকে গর্জালে বাংলা বর্ষায়, বাংলা পথ দেখায়, শান্তি দেখায়, মানবিকতার জন্ম দেয়, সভ্যতার জন্ম দেয়, সংস্কৃতির জন্ম দেয়।
বিজেপি দাঙ্গা নিয়ে খেলছে, অস্ত্র নিয়ে খেলছে, ধর্মের নামে অধর্ম করছ, সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি করছে, শিক্ষার নামে কুশিক্ষা করছে, সভ্যতার নামে অসভ্যতা করছে, প্রতিদিন মানুষ খুন করছে। গণপিটুনির নাম করে তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, দলিত, সংখ্যালঘু, মা বোনেদের ওপর অত্যাচার করছ। এই অত্যাচারে যদি কোনও মহিলা ধর্ষিত হয়, তার সাক্ষীকেও তোমরা খুন করে দিচ্ছ।
আমাদের এখানে শিশু মারা গেলে, চিৎকার চেঁচামেচি করো, আর তোমাদের ওখানে একদিন ৬০ জন শিশু মারা গেলে, কোনও কথা কেউ বলেনা।
আমাদের রাজ্যে সাত বছরে ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, আরও ৫টা হচ্ছে। হুগলীতে গ্রিন ইউনিভার্সিটি হচ্ছে, ঝাড়গ্রামে হচ্ছে, আলিপুরদুয়ারে হচ্ছে, দার্জিলিঙে হচ্ছে। এছাড়া ৪৬টি নতুন কলেজ, কয়েক হাজার স্কুল, ২৩টি মেডিক্যাল কলেজ, ৪৬টি মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, ৫০ লক্ষ কন্যাশ্রী।
এখন সব মেয়েরাই কন্যাশ্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কে-৩ চালু করা হয়েছে। রুপশ্রী প্রকল্পে ১৮ বছর হলে কেউ বিয়ে দিতে না পারলে, সরকার ২৫০০০ টাকা দেবে।
জন্মালেই সবুজ চারা গাছ – ১৮ বছর পর যার দাম হবে ২ লক্ষ টাকা, তারপর ১ কোটি সবুজ সাথী সাইকেল দেওয়া হয়ে গেছে। কেউ মারা গেলে, সৎকার করতে টাকার সমস্যা হলে, তার পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে থেকে ২ হাজার টাকা করে সরকারি সাহায্য করা হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এরাজ্যে সরকারি প্রকল্প আছে, আর কোথাও নেই।
রাজ্যের প্রায় ৯ কোটি মানুষ ২ টাকা কিলো করে চাল পায়, চা বাগানে প্রায় ৩৫ কিলো পায়। আয়লা অধ্যুষিত অঞ্চল, সিঙ্গুর, জঙ্গলমহল, আদিবাসী এলাকায় প্রায় ৩৫ কিলো করে পায়। বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য, বিনা পয়সায় চিকিৎসা, ২ লক্ষ লোকশিল্পী ভাতা। কৃষি কর্মণ পুরস্কার, কৃষক ভাতা, শ্রমিক, ডেকরেটর অটোচালক নির্মাণকর্মী সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প করে দিয়েছি।
স্বামী বিবেকানন্দের নামে প্রকল্প করা হয়েছে সেখান থেকে তোমরা সাহায্য পেতে পারো। আইএএস, আইপিএস পরার জন্যে ইন্সটিটিউট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
রাস্তা, ঘর, পানীয় জল, সব করে দেওয়া হয়েছে। শুধু মনে রাখতে হবে, মানুষকে পাশে নিয়ে উন্নয়ন হলে, তোমারও উন্নয়ন হবে। সবাই ভালো থাকো, সকলে সুন্দর থাকো।
ছাত্র-যুব জেনে রাখো, এ রাজ্যে যা সুযোগ আছে, যা কর্মসংস্থান হচ্ছে, তোমাদের বাইরে যাওয়ার আর দরকার নেই। অনেক উন্নয়ন হয়েছে, আরও উন্নয়ন হবে, তাই বলছি ভালো করে মন দিয়ে পড়াশোনা কর, মানুষের মত মানুষ তৈরী হও, বাবা-মাকে ভালো রেখো। আমিও তোমাদের যতটা পারি সাহায্য করব কিন্তু বাবা-মাকেও দেখাশুনা করতে হবে। আমি চাই তোমরা পরিবার ছেড়ে যান না যাও।
আমি মেয়েদের বলবো, এ রাজ্যে ৫০% সংরক্ষণ আছে পঞ্চায়েত বা পুরসভাতে এবং আমরাই একমাত্র দল যাদের লোকসভায় ৩৫% সদস্য মহিলা, যা অন্য কোনও দলের নেই। তাই মা-বোনদের সঠিক সম্মান দিয়ে রক্ষা করতে হবে। তাই ভাইদের এই দায়িত্ব নিতে হবে এবং দেখতে হবে যাতে এই সমাজে কেউ যেন কোনও খারাপ কাজ না করতে পারে।
পরেরবার যারা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দায়িত্বে আসবেন তাদের বলব একটা কমিউনিটি তৈরি করে নিতে যাতে সবাই সবার সাথে যোগাযোগে থাকেন সবার সাথে ভালোভাবে কাজ যাতে করা যায়।
আমি কলেজ ইউনিয়ন গুলোকে অনুরোধ করব যে পুলিশের তরফ থেকে যে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম করা হয় – যেমন ফুটবল খেলা, রক্তদান শিবির, সাংস্কৃতিক বা সামজিক অনুষ্ঠান – তাতে তোমরাও সামিল হও।
যারা আজকে হুঙ্কার দিচ্ছেন কুৎসিত ভাষায়, তারা যেন একটা লিউকোপ্লাস্ট কিনে রাখেন, ২০১৯-এর নির্বাচনের পর মুখে লাগিয়ে বসে থাকতে হবে।
মনে রেখো, এগোতে তোমাদের হবেই। চলার নাম জীবন, থেমে যাওয়ার নাম মৃত্যু। মৃত্যু নয় জীবন চাই, ধ্বংস নয় সৃষ্টি চাই, ভালোবাসা চাই। ভালো থেকো, তোমাদের স্বপ্ন সার্থক হোক। জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম, জয় বাংলা।