সাম্প্রতিক খবর

জুন ১৫, ২০১৯

চিকিৎসকরা আমাদের গর্ব, মানুষ তাদের ভগবান মনে করেন: নবান্নে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

চিকিৎসকরা আমাদের গর্ব, মানুষ তাদের ভগবান মনে করেন: নবান্নে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

এনআরএস হাসপাতালে একজন রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে একটি বিক্ষিপ্ত দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে বেশ কয়েক দিন ধরে চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘট। এর ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে সারা রাজ্যের ও ভিন রাজ্য থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা। এই ধর্মঘটের জেরে প্রাণ হারিয়েছে বহু রোগী, কিছু শিশুও। কর্মবিরতি শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী, কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করতে পাঠান। তাঁরা বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও জুনিয়র ডাক্তাররা এখনও পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার করেননি। প্রথম থেকেই আহত ডাক্তারের চিকিৎসার যাতে কোনও ত্রুটি না হয়, নজর রাখা হয়েছিল স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে। আহত ডাক্তার এখন স্থিতিশীল, সরকারের তরফ থেকে আহত ডাক্তারের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করা হয়েছে। বেসরকারি নার্সিং হোমের সমস্ত খরচ বহন করে রাজ্য সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী নিজেও অসহায় রোগীদের দুর্দশা ও হাহাকার দেখে পরশু এসএসকেএমে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ জানান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে স্বাস্থ্য পরিষেবা শুরু করার। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয় তথা নবান্নে আলোচনার জন্য আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী লিখিত আবেদনও জানান সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মচারীদের কাজে যোগ দেওয়ার। আজ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডঃ শান্তনু সেনও জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করে ও তাদের এই আলোচনায় যোগ দিয়ে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পরিষেবা চালু করার অনুরোধ জানান। এতেও জুনিয়র ডাক্তাররা রাজী হননি।

আজ নবান্ন থেকে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

গত ১০ তারিখ রাতে এনআরএস এ একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে একটা continuous প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছি, ঘটনার পরদিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে পাঠানো হয়েছিল। আমি ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলাম ডাক্তারদের সাথে, কিন্তু ওরা বলেনি। এই অসম্মানের কথা আমি কিন্তু তখনও কাউকে বলিনি

অনুজ শর্মাকে পাঠিয়েছিলাম, ৩ ঘণ্টা উনি ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছেন। পরের দিন Health department এর additional secretary গিয়েছিলেন তার টিম নিয়ে, তার কাছে যা যা demand করা হয়েছে সব পূরণ করেছি। এরপর পাঠানো হল (DME) directorate of medical education কে, তাকেও ওখান থেকে তাড়ানো হল

পরদিন আমরা আবেদন করলাম, যাতে ওনারাকাজে যোগদান করেন, কারণ হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না কোন কাজ হল না

মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদে মানুষ মারা গেছে। যারা একতরফা ভাবছেন তাদের বুঝতে হবে চিকিৎসকরা আমাদের গর্ব, তাদের মানুষ ভগবান বলে মনে করেন। কারণ তারা মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেয়। যাদের পরিবারের মানুষ মারা গেছেন বা অসুস্থ তারা আজ suffer করছেন

গতকাল আমি নিজে পিজি হাসপাতালে গিয়েছিলাম, একজন রোগী ছটফট করছে সেই কথা শুনে দেখতে গেছিলাম এমারজেন্সি বিভাগ চালু আছে কিনা। আমি কিন্তু কোন কথা বলিনি। বিক্ষোভরতদের মাঝখান দিয়ে আমি যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, উল্টোপাল্টা মন্তব্য করা হয়েছে, চিৎকার করা হয়েছে, অশ্রব্য আচরণ করা হয়েছে, এই জিনিস অন্য জায়গায় হলে অন্য রকম পদক্ষেপ নেওয়া হত। আর সাংবাদিকরা অনেক বড় বড় কথা লেখেন কিন্তু সত্যিটা মানুষকে জানতে দেননি।

আমি গতকাল সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। গতকাল আমি ৫ ঘণ্টা বসে রইলাম কথা বলব বলে, কারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়াই আমার আসল লক্ষ্য। তারা জানালেন ওরা গতকাল নয় আজ আসতে পারবে। তাই আমি আমার পগ্রাম বাতিল করে আজ ওদের সময় দিলাম। ২ দিন সময় দেওয়ার পরেও ওরা এল না কথা বলতে

যা যা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সরকার সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। ডাক্তারদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডাক্তারদের আরও চাহিদা থাকলে সেগুলোও পূরণ করা হবে

সরকার কিন্তু নেগেটিভ নয়, এখনও সরকার কারো সাথে কোন নেগেটিভ আচরণ করেনি

অন্যান্য রাজ্যের আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছিঃ

২০০৮ সালে উড়িষ্যায় বিজেডি সরকার ডাক্তারদের ধর্মঘটের হুমকি পেয়ে ESMA জারি করেছিল ও সাত নেতাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছিল।

২০০৯ সালে গুজরাটে মোদী শাসিত সরকারে ESMA জারি করে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘট শুধু ভাঙেনইনি, ১৫০ জন ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।

২০১৫ সালে দিল্লীর আপ সরকার কর্মস্থলে নিরাপত্তাসহ কিছু দাবীতে ডাক্তারদের ধর্মঘট ভাঙা হয়েছিল ESMA জারি করে। ২০১৬ সালে দিল্লীর আপ সরকার ESMA জারি করে।

২০১৭ সালে রাজস্থানে বিজেপি সরকার একদিন গণছুটি নেওয়ার ফলে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ESMA জারি করে। ২০১৭ সালে বিজেপি সরকার দু ঘন্টা ওপিডি ধর্মঘট করায় ছয় মাসের জন্য ESMA জারি করে।

২০১৮ সালে জম্মু কাশ্মীর বিজেপি ও পিডিপির সরকার ডাক্তাররা ছুটি চাওয়ায় ESMA জারির হুমকি দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে মণিপুর ESMA জারির ভয় দেখানো হয়েছিল।

আমরা গণতন্ত্র ও মানবিকতায় বিশ্বাস করি বলে এখনও কোনরকম ESMAতেও যাইনি, কাউকে গ্রেফতারও করিনি, কারো রেজিস্ট্রেশন বাতিল করিনি। আমরা ৫-৬ দিন ধরে মানবিকভাবে সব কিছু সহ্য করেছি

আমি জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ করব রাজনৈতিক কারণে বা কারো উসাকনিতে কান দেবেন না।আমি ডাক্তারদের দোষ দিচ্ছি না, কেউ কেউ তাদের প্ররোচনা দিচ্ছে। কাল ওনারা ঠিক করেছিলেন আসবেন আজ এলেন না, কাদের প্ররোচনায়?

স্বাস্থ্য পরিষেবা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এখানে বাইরের অনেক সংস্থা ঢুকে গেছে, অনেকে আন্দোলনে এসেছেন কিন্তু পুরো ব্যাপারটা না জেনে। সরকারকে সংবিধান মেনে কাজ করতে হয়

বাংলার নামে সারা দেশে কয়েকটা টিভি চ্যানেল খারাপ কথা বলছে। সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে সাংবাদিকরা মানুষকে জানাচ্ছেন না। অন্যান্য রাজ্যেও এই সমস্যা আছে

আমি আজ আবার আপনাদের মাধ্যমে ডাক্তারদের অনুরোধ করব দয়া করে আপনারা কাজে যোগদান করুন সাধারণ মানুষের জন্য। স্বাস্থ্য পরিষেবা এভাবে বিঘ্নিত হতে পারে না ।

বাংলা শান্ত রাজ্য। বাংলার প্রশাসন মানবিক ও ধৈর্যশীল। এখানে উপদেষ্টা না পাঠিয়ে উত্তরপ্রদেশে পাঠাতে বলুন।