সাম্প্রতিক খবর

সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯

অনুমোদন করেও রাজ্যের সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনা কেন্দ্রের

অনুমোদন করেও রাজ্যের সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনা কেন্দ্রের

সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পটির আর্থ-কারিগরি অনুমোদন ২০১৫ সালেই দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রকল্পটির জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ করেনি তারা। বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে সেচমন্ত্রী একথা জানিয়েছেন। সুন্দরবনে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধ সংস্কার, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী, কান্দি মাস্টার প্ল্যানের মত সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পেও কেন্দ্র অর্থ দেওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে। রাজ্যে গঙ্গা-ভাগীরথীর ভাঙন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কিছুই করছে না। কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ না করে রাজ্য সরকারের উপর আর্থিক দায় চাপছে।

সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পটিতে এফ এম পি (ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট) খাতে আর্থিক অনুদানের প্রস্তাব বারবার কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হলেও তাতে সাড়া মিলছে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এই প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ অর্থ দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক এখনও অনুমোদন দেয়নি। এই অবস্থায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও সংলগ্ন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকার আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৭৩ কোটি ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি নদী সংস্কার করেছে। চলতি বর্ষা মরশুমের পর ১১৬ কোটি টাকা খরচ করে আরও দুটি নদী সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।

কেলেঘাই-কপালেশ্বরী ও কান্দি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় রাজ্যকে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। আগে ঠিক ছিল এই প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্র ৭৫ শতাংশ ও রাজ্য ২৫ শতাংশ খরচ করবে। এখন এটা ৫০:৫০ করে দেওয়া হয়েছে। কান্দি মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পে ৪৩৮ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। সেখানে তারা দিয়েছে ৫৭ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। রাজ্য সরকার খরচ করেছে ২০৯ কোটি টাকা। রাজ্যকে অতিরিক্ত ১৬৬ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।

আয়লা নদীবাঁধ সংস্কার ও কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্প মিলে রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত ২৮৪ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আয়লা প্রকল্পে গত আর্থিক বছরে কেন্দ্রের কাছে ১২০ কোটি টাকা চাওয়া হলেও তারা দিয়েছে মাত্র ২৩ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। গত মে মাসে ১৩০ কোটি টাকা অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। জুলাই মাসে ১১৭ কোটি ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কেলেঘাই প্রকল্পে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে কোনও অর্থ কেন্দ্র বরাদ্দ করেনি। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে ৫৫.৪৭ কোটি টাকা চাওয়া হলেও পাওয়া যায় মাত্র ৮.০৮ কোটি টাকা। কান্দি মাস্টার প্রকল্পে ১৬-১৭ আর্থিক বছরে কেন্দ্রের কাছে ১৫০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেখানে বরাদ্দ হয় মাত্র ১২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। পরের বছর ১৫০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা চাওয়া হলেও পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৫৬ কোটি টাকা।

সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে গঙ্গা-ভাগীরথীর ভাঙন প্রতিরোধের জন্য মুখ্যসচিবের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয় ১০০.২২ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাঙন প্রতিরোধের কাজ এখনই করতে হবে। এতে খরচ ধরা হয় ৭৯৩ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। ঠিক হয়, নদীয়া-মুর্শিদাবাদ জেলায় চিহ্নিত অংশে ১৫৬ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করবে। বাকি অংশ, যেটা জাতীয় জলপথের আওতায়, সেখানে কাজ করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা। রাজ্য সরকার নিজের অংশে কাজ করলেও কেন্দ্র কিছু করেনি।

সৌজন্যেঃ বর্তমান