সাম্প্রতিক খবর

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯

যেদিন প্রতিবাদের মূল্য থাকবে না সেদিন ভারতবর্ষ আর ভারতবর্ষ থাকবে নাঃ নেতাজী ইন্ডোর দিদি

যেদিন প্রতিবাদের মূল্য থাকবে না সেদিন ভারতবর্ষ আর ভারতবর্ষ থাকবে নাঃ নেতাজী ইন্ডোর দিদি

আজ নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ করে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন। এই সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল কংগ্রেসের সকল স্তরের নেতারা এই সমাবেশে অংশ নেন। আগামীদিনে তৃণমূল কংগ্রেস কিভাবে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে আন্দোলন চালিয়ে যাবে, সেই রূপরেখাও ঠিক করা হয় এই সমাবেশে।

দিদির বক্তব্যের কিছু বিষয়ঃ

লড়াই কখনো কখনো সংঘবদ্ধ ভাবে করতে হয়, সব ফলপ্রসূ হয় না কিন্তু চেষ্টা করা উচিত

২০১২ সালে রিটেলে এফডিআই ১০০% করার প্রতিবাদে মনমোহন সিংএর মন্ত্রীসভা থেকে আমাদের দলের ৬জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন, কারণ মন্ত্রিত্বের চেয়ে মানুষের চাহিদা বড়

বেঙ্গল কেমিক্যালকে বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, ৪২টা রাষ্ট্রীয় সংস্থা সহ ব্যাঙ্কগুলিকে এক করে দিচ্ছে বা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বহু ব্যাঙ্ক কর্মী এর ফলে কাজ হারাবে। কেউ জানে না মানুষের চাকরির কি ভবিষ্যৎ, টাকার কি ভবিষ্যৎ?

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচারের চিঠি দেওয়া ছাড়া পোস্ট অফিসের আর কোন কাজ নেই, কাজ সঙ্কুচিত করে দেওয়া হয়েছে

নোট বাতিলের পরও জীবন দিয়ে ব্যাঙ্কগুলো সার্ভিস দিয়েছে, সব টাকা কোথায় গেলো কেউ জানে না

ব্যাঙ্কগুলোকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার পর এই ওদের প্রতিশ্রুতি? পুরো ব্যাঙ্কিং সেক্টর এখন হযবরল

সেনাবাহিনি দেশের প্রতিরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। প্রতিরক্ষক তাই প্রতিভক্ষক হয়ে গেছে, কেউ জানে না কি হচ্ছে, মানুষ অন্ধকারে রয়েছে। সেই অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি এখন বেসরকারিকরণ করে দিতে চাইছে। শুধু তালে তালে বেতাল কথাবার্তা

কয়লা বাংলার সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গা, কোল ইন্ডিয়াকে ১০০% ডিস‌ইনভেস্টমেন্ট করা হলে বিদ্যুতের এর বেহাল দশা হবে

ভারতীয় রেলও আগামীদিন পুরোপুরি বেসরকারিকরণ করা হবে

বিমান পরিষেবা, এয়ার ইন্ডিয়ার মতো লাভজনক সংস্থাকে বিলগ্নীকরণ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে

কোন সংস্থা দুর্বল হয়ে গেলে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের দায়িত্ব তাদের পাশে থাকা। সেদিকে কেউ দেখছে না, কিন্তু আজকাল আর কেউ মানুষের প্রয়োজনে কথা বলছে না

যাদের কথা বলার কথা ছিল তাদের জন্য আমার কথার ব্যাখ্যা আছে। মিডিয়া, চ্যানেল, প্রিন্ট, টেলিভিশন যারা এই কথা বলতে পারতো তারা বলে না, তারা এখন বোবা কালার চেয়েও বধির হয়ে গেছে, শুধুমাত্র তোতা পাখির বুলি বলছে

শুধু মিথ্যে বলে, প্ররোচনা দিয়ে, উত্তেজনা ছড়াচ্ছে আর নিজেদের টিআরপি বাড়াচ্ছে, আর যারা মানুষকে ভালোবাসে তারা মানুষের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করে

স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া সেল, হিন্দুস্থান পেপার, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ, জীবন বীমা, হলদিয়া বন্দর, কলকাতা বন্দর, বি এস এন এল সব কিছু বেসরকারিকরণের চেষ্টা চলছে। সবকিছুর অবস্থা তথইবচ

মানুষের কথা বলার অধিকার হারিয়ে গেছে। তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জোট বেঁধে কথা বলতে হয়। স‍্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্ল‍্যাটফর্মে প্রতিবাদ করতে হবে। বুদ্ধি খরচ করে প্রতিবাদ করে যান কারণ প্রতিবাদের একটা মূল্য আছে। যেদিন প্রতিবাদের মূল্য থাকবে না সেদিন ভারতবর্ষ আর ভারতবর্ষ থাকবে না

আমাদের গণতন্ত্র আমাদের মূলধন। বাংলায় গণতন্ত্র থাকলেও অনেক রাজ্যে নেই

যাদবপুরের ঘটনায় দেখলেন তো কি ওদের attitude. গায়ের জোরে যা ইচ্ছে করে যাচ্ছে। গায়ের জোরে চিরকাল মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখা যায় না

আসানসোল, দুর্গাপুরের মানুষ ঢেলে ভোট দিয়ে বিজেপিকে জিতিয়েছেন আর চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ, ই সি সি এল, বি এস এন এল আসানসোলেই আছে

দেশের প্রতিরক্ষা – অর্ডিন্যান্স
ব্যাঙ্কিং সেক্টর – দেশের অর্থনীতি
কমিউনিকেশন – রেল, এয়ার ইন্ডিয়া, বি এস এন এল
দেশের এনার্জি সেক্টর – কয়লা

এই জায়গাগুলোকে ওরা টার্গেট করেছে বেসরকারিকরণের জন্য

আমাদের রাজ্যে যেসব সংস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল বা যেগুলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল সেগুলোকে আমরা মার্জ করে মানুষকে চাকরি দিয়েছি, কিন্তু কারও চাকরি নষ্ট করিনি

রাজনীতির রঙ মানুষের রঙ নয়, মানুষ রঙ হল ভালোবাসার রঙ, গণতন্ত্রের রঙ। মানুষকে ভালোবেসে কাজ করতে হবে

Law cannot discriminate like this

আপনাদের লড়াই যেভাবে চলছে চলবে। ২৫ দিনের অনশন, ধরনা হয়েছে, মিছিলও হয়েছে
অন্য রাজ্যেও অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি, ব্যাঙ্ক আছে কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না। কেউ যখন

কথা বলছে না তখন বাংলাই মানুষের জন্য কথা বলবে, প্রতিবাদ করবে। মানুষের protection এর জন্য বাংলাই পথ দেখাবে

আমাদের লড়াই সুফলে যদি অন্য রাজ্যের মানুষ উপকৃত হয় তাহলে আমরা খুশি হব, কারণ আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই

একটি কোর গ্রুপ তৈরী করছি কেন্দ্রীয় ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ও আগামীদিনের কাজের পথ তৈরি করার জন্য। তাতে থাকবেন সুব্রত বক্সী, দোলা সেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ দা, মলয় ঘটক, পূর্ণেন্দু বসু। এদের কাজ অনুষ্ঠান আয়োজন করা ও মিটিং মিছিলের সঙ্গে যুক্ত থাকা। রাজ্যসভা ও লোকসভার দলীয় নেতাদের এই কমিটিতে রেখেছি যাতে তারা এই কথাগুলি সংসদে তুলতে পারেন

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণের বিরুদ্ধে ২৬ সেপ্টেম্বর কাশীপুর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির সামনে বেলা ১ টায় প্রতিবাদ সভা হবে

২৭ সেপ্টেম্বর কোল ইন্ডিয়ার সামনে প্রতিবাদ সভা বেলা ১টার সময় – সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আয়োজন করবেন

১৮ই অক্টোবর বেলা দেড়টায় শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা হয়ে ফেয়ারলি প্লেস পর্যন্ত মিছিল হবে।
এরপর আপনাদের যেতে হবে দিল্লী। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বলব আপনারা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন। দিল্লীতে ৪৮ ঘণ্টার ধরনা; হবে সেখানে সাংসদরা যাবে। বিহার, চেন্নাই ও মুম্বইতে ধরনা করুন

ভোটার লিস্টে নাম তুলুন ভোট দেওয়ার জন্য। এনআরসি কোথাও হবে না।

কেউ রাজনৈতিক প্রয়োজনে বলতে পারে এনআরসি হবে কারণ সে হিন্দু মুসলমান করছে। তারপর ১৩ লক্ষ হিন্দুও বাদ। এনআরসি করলে রাজ্য সরকারের সাহায্য চাই, আমরা

কোনোদিন এনআরসি করতে দেব না। চিন্তা করার কিছু নেই। বিজেপির কথায় যেসব টিভি চ্যানেল মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে, সেই চ্যানেল দেখবেন না। কাগজপত্র হারিয়ে গেলে এফআইআর করে রাখুন। যে কোনও একটা নথি থাকলেই ভোটার লিস্টে নাম তোলা যায়। আপনারা এখানে বাস করেন, আপনারা দেশের নাগরিক। এনআরসি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিজের জীবন নষ্ট করবেন না

যে ৬ জন মারা গেছে, তাদের অঞ্চলেও আমাদের দল থেকে প্রতিবাদ সভা হবে। ভোটার লিস্টে নাম তুলতে অসুবিধে হলে আমাদের দলের কর্মীরা তুলে দেবে

বিলগ্নীকরণ, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কিছু বলছে না কেউ। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে। কাউকে ভয় দেখালে তার পাশে দাঁড়ান। সাহসীরাই জয়ী হয়। যে সাহস দেখাবে আমি তার জন্য দুঃসাহস দেখাতে পারি। সকলকে অগ্রীম শারদ শুভেচ্ছা