এপ্রিল ৩০, ২০১৭

শৌচাগার নির্মাণে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ
জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধী ১৯৪০ সালের ১৮ই আগস্ট ‘হরিজন’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, “যদি গ্রাম পুননির্মাণের ক্ষেত্রে গ্রাম শৌচাগার অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে আমাদের গ্রামগুলো গোবর-গাদায় পরিণত হবে, যেমন আজও হয়েছে। গ্রাম্য শৌচাগারগুলো গ্রাম জীবনে যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তেমনই এটি একটি কঠিন কাজ। তাই এই দীর্ঘকালীন অশৌচাগারের সমস্যা নির্মূল করতে গেলে বিরোচিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন”।
২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের শেষে দেখা যাচ্ছে সারা ভারতের মধ্যে মোট শৌচাগার নির্মাণে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। সারা ভারতে যে মোট শৌচাগার নির্মিত হয়েছে তার প্রায় ১২ শতাংশই (১১.৮০ শতাংশ) নির্মিত হয়েছে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এই শৌচাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছিল, তার প্রায় ৯০ শতাংশই (৮৯.৬৩ শতাংশ) অর্জন করা গিয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের শেষে।
(তথ্যসূত্রঃ Ministry of Drinking Water and Sanitation, Govt. of India.)
মোট শৌচাগার নির্মাণে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ভারতের মধ্যে দ্বিতীয়
১৯৯৯-এর ১ এপ্রিল থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত ১৭ বছর সময়কালে পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭৬২ টি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। মোট শৌচাগার নির্মাণে প্রথম উত্তরপ্রদেশ। ১৯ বছর সময়কালে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে শৌচাগার নির্মিত হয়েছে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫২ টি।
সারা ভারতে এই প্রকল্পে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাত। ১৯ বছর সময়কালে রাজ্যভিত্তিক মোট শৌচাগার নির্মাণে গুজরাতের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিগুণের বেশি শৌচাগার নির্মিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে শৌচাগার নির্মিত হয়েছে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ, গুজরাতে এই সংখ্যা ৬৬ লক্ষ।
তবে রাজ্যভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এই ১৭ বছর সময়কালে তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯০ শতাংশ (৮৯.৬৩ শতাংশ) অর্জন করতে পেরেছে। পশ্চিমবঙ্গে মোট শৌচাগার নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৫১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮১৩ টি। ২০১৬-১৭-র শেষে মোট ১৭ বছর সময়কালে এই লখ্যমাত্রার প্রায় ৯০ শতাংশই অর্জন করা গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে মোট শৌচাগার নির্মাণের ৩৮ শতাংশের হয়েছে গত ৪ বছরেই
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে ৫২ লক্ষ ৩ হাজার ৪৯০ টি পারিবারিক শৌচাগার নির্মাণ করতে পেরেছে বর্তমান রাজ্য সরকার। অর্থাৎ বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে গত ৪ বছরে রাজ্যে যে সংখ্যায় পারিবারিক শৌচাগার নির্মিত হয়েছে তা গত ১৭ বছরে রাজ্যে মোট শৌচাগার নির্মাণের প্রায় ৪০ শতাংশ।
গত ৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান শীর্ষে
২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে মোট পারিবারিক শৌচাগার নির্মাণে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ছিল ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে। মোট শৌচাগার নির্মিত হয়েছিল ১৪ লক্ষ ৫৫ হাজার। নদিয়া জেলা ছিল ভারতশ্রেষ্ঠ। এর জন্য রাজ্য জাতিসংঘ জনসেবা পুরস্কার পেয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয়।
ওই বছর পারিবারিক শৌচাগার নির্মিত হয়েছে ১৪ লক্ষ ১৭ হাজার। প্রথম ছিল রাজস্থান। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। গত বছর রাজ্যে শৌচাগার নির্মিত হয়েছে ২৩ লক্ষ ৩১ হাজার। তাই সামগ্রিকভাবে গত ৪ বছরে পারিবারিক শৌচাগার নির্মাণে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান শীর্ষের তালিকায়। রাজ্যে নদিয়া ও হুগলি জেলায় ১০০ শতাংশ শৌচাগার নির্মাণ সফল হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ থেকে কেন্দ্রের অনুদান কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেক। তৎসত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার লক্ষ্যপূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
লেখক: দেবনারায়ণ সরকার , অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও সেক্রেটারি, সেন্টার ফর ইকনমিক স্টাডিজ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়