নভেম্বর ১১, ২০১৯
দিল্লির বুক থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে বাংলার অধিকারঃ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

এনআরসি এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশ্নপত্রে বাংলা ভাষাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বাংলার প্রতি বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে আজ গান্ধী মূর্তির পাদদেশে এক অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচীর আয়োজন করে তৃণমূল যুব কংগ্রেস। বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেস এর সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ:
বাংলা ভাষাকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, বাঙালিকে যেভাবে লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত, অবহেলিত ও অপমানিত হতে হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আজ আমাদের প্রতিবাদ। এই মাটিতে আমরা সব সময় সমাবেশ, প্রতিবাদ করেছি। এই মাটির এক আলাদা বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য রয়েছে। মহাত্মা গান্ধীকে সম্মান জানিয়ে, ওনার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে, তাঁর ভাবনাচিন্তাকে আগামিদিনের পথ চলার পাথেয় করে আমাদের এই লড়াই চলবে
তিন দিন আগে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে থাকা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বলেছে বাংলা তাদের চিঠি দেয়নি। আমার প্রশ্ন, দার্জিলিং জঙ্গলমহল থেকে আপনারা যখন সিআরপিএফ তুলে নেন, আপনাদের অঙ্গুলিহেলনে যখন দার্জিলিং অশান্ত হয় তখন কি আপনারা রাজ্য সরকারের অনুমতি নেন? যখন আপনাদের নেতারা বাংলায় এসে বড় বড় ভাষণ দিয়ে বাংলাকে অশান্ত করে তখন আপনারা রাজ্য সরকারের অনুমতি নেন?
হিন্দির পর ভারতে সবচেয়ে ব্যবহৃত ভাষা বাংলা। তাই বাংলাকে বাদ দিয়ে হিন্দি আর গুজরাতি ভাষা ঢোকালে বাংলার মানুষ চুপ করে থাকবে না
বাংলার মনিষীরাই দেশকে পথ দেখিয়েছিলেন। আর এই বিজেপি নির্বাচনের সময় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙল। ১২ লক্ষ বাঙালিকে অসমের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ দিয়ে দিল। এই বিজেপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বুক ঠুকে বলেছিল ৩৭০ ধারা হলে দেশে সন্ত্রাসবাদের হামলা হবে না, অথচ এক মাস পার হল না, কাশ্মীরে ৫ জন বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হল। বাংলার প্রতি কেন এত বঞ্চনা? কেন এত লাঞ্ছনা?
আগে আমাদের ৩৪ জন সাংসদ ছিল তাই এফআরডিআই বিল পাস হতে পারেনি আর এখন ২২ জন সাংসদ আছেন তাও ওরা এফআরডিআই বিল পাস করাতে পারবে না
সাধারণ মানুষের টাকা এখন আর ব্যাঙ্কে সুরক্ষিত নয়। আজ বিজেপির সরকার বলছে ওদের রাষ্ট্রায়ত্ত আর প্রাইভেট ব্যাঙ্কের দুঃসময় এলে ওরা ১ লক্ষের বেশি টাকা মানুষকে আর ফেরত দিতে পারবে না। অর্থাৎ, টাকা বাড়িতে থাকলে কালো আর ব্যাঙ্কে রাখলে গেলো, বাড়িতে থাকলে চোরের ভয় আর ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে চৌকিদারের ভয়
আমরা সব ভাষাকে সম্মান করি, আমরা চাই সব ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। কিন্তু বাংলাকে অপমান করা চলবে না। যে বাংলা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল তাকে বঞ্চনা লাঞ্ছনা অপমান করলে কিন্তু বাংলা ছেড়ে কথা বলবে না। বাংলা ভাষাকে যতদিন স্বীকৃতি দেওয়া না হবে ততদিন কেন্দ্রের একতরফা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন চলবে। বাংলা ভাষা জয়েন্টে স্বীকৃতি না পেলে দিল্লির বুক থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে বাংলার অধিকার
কি দুরবস্থা দেশের – বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১১৭ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০২ নম্বরে। বাংলাদেশ নেপাল এগিয়ে অথচ ভারত পিছিয়ে কারণ মোদী ক্ষমতায়
এন সি আর বি বলছে বাংলায় অপরাধের সংখ্যা কম। কেন্দ্রীয় সংস্থা বলছে দেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও দ্বিতীয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যা অন্য রাজ্য করে দেখাতে পারেনি তা বাংলা করে দেখিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা এগোচ্ছে। এই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে আজ সিপিএমের সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করে থাকতে হত বাংলার মানুষকে
আজ আপনারা বাংলা নাম পরিবর্তন করার অনুমতিটুকুও দেন না। যারা বাংলা ভাষা লিখতে পারে না, পড়তে পারে না তারা বাংলা ভাষার মর্ম বুঝবে কি করে? এই বাংলা নেতাজি, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণের বাংলা
৪০% ভোট পাওয়ার পরও ওদের টিকিও দেখা যাচ্ছে না, শুধু নামের পাশে পাহারাদার লিখলেই পাহারাদার হওয়া যায় না। বিপদের সময় জীবন বিপন্ন করে যে মানুষের পাশে দাঁড়ায় সেই আসল পাহারাদার। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মানুষের ভরসা
আজ বিরোধীদের মুখে টুঁ শব্দও নেই, তাদের কাজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দোষারোপ করে যাওয়া। অথচ মুখ্যমন্ত্রী আজ নিজের উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করে বকখালি, নামখানায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন
অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীকে দেখুন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখুন। আজও তিনি টালির চালের বাড়িতে থেকে হাওয়াই চটি পরে সারা বাংলা দাপিয়ে বেড়ান। ঘূর্ণিঝড়ের রাতে সারারাত তিনি নবান্নের কন্ট্রোল রুমে জেগে বসেছিলেন
আসামের যে ১৯ লাখ লোকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁর মধ্যে ১২ লাখ বাঙালি হিন্দু। বাংলা চাইলে দিল্লীর মসনদ কাঁপিয়ে দিতে পারে, এটা আজ দেখিয়ে দেওয়ার সময় এসে গেছে। আজ বাঙালির গর্জে ওঠার সময়