May 13, 2014
শেষ দফার ভোটে মমতার সারাদিন

প্রায় অর্ধেক বাংলার নির্বাচন ঘিরে তখন আছড়ে পড়ছে উত্তেজনা। বুথে বুথে লম্বা লাইন। ক্যাম্প অফিসে তৎপরতা। কিন্তু ৩০ বি হরিশ চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিটে ঢুকে মনে হচ্ছিল, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।
তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়ার রুম অথচ কী নিস্তব্ধতা!
গেটের মুখে লোহার ব্যারিকেড। ঢোকার মুখে পুলিশি পরীক্ষার ব্যবস্থা। জেড ক্যাটেগরি নিরাপত্তা অফিসাররা বসে আছেন। নিয়ম মেনে সবই চলছে। ভিতরে এক ডাক্তার বিধায়ক ঢুকছেন–বেরোচ্ছেন। ছোট একটা দরজা ঠেলে মাঝে ঘুরে গেলেন শ্রীরামপুরের লোকসভা প্রার্থী এক আইনজীবী। কিন্তু সেটাও যেন কেমন নিয়মমাফিক।
বিকেলে ভোট দিতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় নিজেকে বন্দিই করে রেখেছিলেন ঘরের মধ্যে। ছয় ফুট বাই ছয় ফুটের বেডরুম কাম রিডিং রুম থেকে বারবার নির্দেশ গিয়েছে ভোট ম্যানেজারদের কাছে। মাঝেমধ্যে ঘরে চা আর মুড়ি পাঠানো হয়েছে।
ব্যস এইটুকুই। দরজা খুললেই শোনা গিয়েছে টিভির চ্যানেলের শব্দ আর ফোনের কথোপকথন। সূত্রের খবর, `দিদি` নাকি সারাক্ষণ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের নেতাদের ফোনে বলে গিয়েছেন। সবই শান্ত ভঙ্গিতে। এক বারের জন্যও উত্তেজিত হয়নি।
ভোট দেওয়ার পর মমতার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ডান হাত তুলে `ভি` দেখানো দেখে অন্তত মনে হয়েছে, তিনি পাঁচ দফার ভোটের পর অন্তত খুশি।
দুপুরের অমৃতযোগে ভোট দিতে যাননি। বিকেল পাঁচটায় মাহেন্দ্রক্ষণে মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ভোট দিয়ে বেরনোর সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ক্লান্ত দেখালেও বিধ্বস্ত মনে হয়নি। না–হলে গাড়ি একটা গলিতে রেখে গটগট করে বড় রাস্তা পেরিয়ে ঢুকে গেলেও ফেরার পথে ফটোগ্রাফারদের খুশি করতে যাবেন কেন?
এখানেই শেষ নয়। বহু দিন পর ভোট দিয়ে মমতা এ দিন সোজা চলে গিয়েছেন তৃণমূল ভবনে। এত দিন বাইপাসের ধারের ওয়ার রুমটি সামলাতেন মুকুল রায় এবং ডেরেক ও ব্রায়েন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে এ দিন ঘণ্টা দুয়েক সময় কাটিয়েছেন মমতা। মুকুল–ডেরেক–সুলতান আহমেদ–কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীদের সঙ্গে বসে আসন ধরে ধরে আলোচনা করেছেন। আলোচনার পর আসন সংখ্যা মনের মতন হওয়ায় সবাইকে মিষ্টিও খাইয়েছেন। দারুণ মুডেও ছিলেন।
গত দু`মাসে প্রায় ১২৫টি সভা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। চারদিন পর তার ফল বুথফেরত সমীক্ষার হিসেব উল্টে যদি তিনি প্রত্যাশিত সাফল্য পান, তা হলে ৩০–বি এ দিনের মতো নিস্তরঙ্গ থাকতে পারবে?
খবরটি আনন্দবাজার পত্রিকাতে প্রকাশিত