Latest News

October 1, 2014

দুর্গা দুর্গতিনাশিনী – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

দুর্গা দুর্গতিনাশিনী – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবী দুর্গার আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে দেবলোকে এক অভূতপূর্ব আশা, আকাঙ্ক্ষা ও উন্মাদনার সৃষ্টি হল, বিশ্ব চরাচর উদ্বেলিত হল।সর্বত্রই এক কী হয়, কী হয় ভাব…।
– অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

অসুরকুল তাদের নানান কূটকৌশলে নানান নিচ ও হীন পথে এবং ঘৃণ্য উপায়ে দেবলোক হস্তগত করে। আপাত মিষ্টিমধুর কথার আড়ালে লুকনো তীব্র হলাহলে দেবলোক তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ম্লান-ম্রিয়মাণ। স্বর্গীয় শান্তি হয়ে উঠেছে নেহাতই অতীতের ইতিহাস।

বিষাদগ্রস্ত সুরলোকে সে প্রাণের মূর্ছনা আর নেই। যে অদ্ভুত আলোর ছটায় দেবলোক উদ্ভাসিত হত সে আলো আজ ম্লান। এক কথায় স্বর্গের সৌরভ যেন স্মৃতিকথায় বর্যবতি হয়েছে। সুরবালারা আর নির্ভয়ে রাস্তায় বের হতে পারে না। সুরললনারা যেন সদাই আতঙ্কগ্রস্ত। উন্মত্ত অসুরের রূঢ় ভৈরবে মত্ত মাতঙ্গের উন্মাদ নৃত্যে শিল্প-সাহিত্যের আঙিনা লণ্ডভণ্ড হয়েছে।

সমস্ত দেবলোকের আকুল প্রার্থনায় আবির্ভূতা হলেন দেবী-দুর্গতিনাশিনী। দশপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা বরাভয় দিলেন সঙ্কটগ্রস্ত দেবলোককে। সমস্ত একক শক্তিতে অমিত পরাক্রমশালী প্রায় অজেয় এই অসুরকুলের বিরুদ্ধে লড়াই।

দেবী দুর্গার আবির্ভাবের সাথে সাথেই দেবলোকে এক অভূতপূর্ব আশা আকাঙ্ক্ষা এবং উন্মাদনার সৃষ্টি হল- বিশ্বচরাচর উদ্বেলিত হল। সর্বত্রই এক কি হয় কি হয় ভাব। একদিকে গোটা অসুর সমাজ-দৈত্য, দানব আর রাক্ষসকুল এবং অপরদিকে দশপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা- এক এবং অদ্বিতীয়া- অজেয় এবং অক্ষয়। ভীষণ সে যুদ্ধে অসুরকুল পরাস্ত হল। কিন্তু তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা আশ্রয় নিল বিভিন্ন অন্ধকার গহ্বরে, সুযোগ বুঝে চোরাগোপ্তা আক্রমণের আশায়।

সাতাত্তর সালের কোন এক কুক্ষণে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হল নানান ছলচাতুরি নানান অপপ্রচার আর মিথ্যাচারের মাধ্যমে-নানান ঘৃণ্য উপায় অবলম্বনে।

অন্ধকারের জীব স্বাভাবিকভাবেই আলোকে ভয় পায়-আলো তাদের কাছে অসহ্য। তাই তারা প্রথম আক্রমণটা হানল শিক্ষা এবং সংস্কৃতির উপর। পরীক্ষায় পাস-ফেল প্রথা তুলে দেওয়া হল, বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধ করা হল- `মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ` এই স্লোগানের আড়ালে প্রাথমিকে ইংরাজি ভাষাকে বিদায় দেওয়া হল। কলেজস্তরে ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব এবং এমনকী মাতৃভাষার গুরুত্বও হ্রাস করা হল। `হোপ ৮৬`-এর আদলে গ্রামে গ্রামে চটুল গানের আসরে শিল্প-সংস্কৃতির অন্তর্জলি যাত্রা সুনিশ্চিত করা হল। এরই সঙ্গে সঙ্গে সমাজে বিবেকবান মানুষদের প্রতিবাদী মানুষদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হল। প্রয়োজনে খুন-জখমেও তারা পিছপা নয়। এই অসুরকুলের হাতে নতুন অস্ত্র গণধর্ষণ। শিল্প সাহিত্য সংবাদ মাধ্যম প্রভৃতিরও একচেটিয়া অধিকার কুক্ষিগত করে নিল তারা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ হল। গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত- মত প্রকাশের স্বাধীনতা তারা অস্বীকার করল- গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হল তাদের ঘৃণ্য দলবাহীর আখড়া।

বিদ্যুৎ গতিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, বাসভাড়া বৃদ্ধি আর নিত্যপ্রয়জনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের যখন প্রাণান্তকর অবস্থা তখন চারিদিকে শুরু হল অত্যাচারিতা নারীদের করুন আর্তনাদ। জমি-হাঙরেরা চারিদিকে ঘুরে বেরাচ্ছে চাষের জমি গ্রাস করার জন্য। নাগিনীর বিষাক্ত নিঃশাসে গোটা বাংলা জর্জরিত। প্রেত-উল্লাসে ঘৃণ্য শ্বাপদেরা চারিদিকে দাপিয়ে বাড়াচ্ছে। এরকম এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে মানুষ প্রার্থনা জানাচ্ছে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য-এই কাল বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য, মৃত্যুর হাহাকার থেকে জীবনের ছন্দে ফেরার জন্য।

যদা যদা হি ধর্ম্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমঅধর্ম্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্ম্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।

মানুষ আকুলভাবে উন্মুখ হয়ে রয়েছে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন-সেই ঐশী শক্তির আবির্ভাবের তথা উত্থানের আশায়। কোটি মানুষের প্রাণের আবেগের-প্রাণের আকুতিতেই আবির্ভাব মমতা ব্যানার্জির। শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- নেহাতই একটা নাম নয় এ আসলে লক্ষ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা এবং প্রাণের আবেগের এক বাস্তব রূপ।

মমতাময়ী মমতার মধ্যেই মম অর্থাৎ আমার, মত অর্থাৎ ইচ্ছাটা তথা আকাঙ্ক্ষা বা মতামত প্রতিভাত হয়। তাই মমতা হলেন প্রতিটি সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা এবং মতামতের প্রতীক। অন্ধকারের জীবেদের মমতাকে চিনতে এতটুকু দেরি হয়নি। তাই তার প্রাণনাশের চেষ্টায় তারা কসুর করেনি।কিন্তু প্রতিবারেই তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই যেটা করলেন সেটা হল পাহাড় এবং জঙ্গলমহলকে শান্ত করা। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি শতকরা ১০০ ভাগ সফল। এরপর তার পদক্ষেপ স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থান। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের চরম বেহাল অবস্থার মোড় ঘোরাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নজর দিলেন। অবস্থা এখন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। এ ছাড়া কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, কমদামে ঔষধ বিক্রয় কেন্দ্র, শিশুসাথী প্রকল্প সারা দেশে মডেল। প্রতি ব্লকে কৃষক বাজার, জল ধরো জল ভরো, এমপ্লয়মেন্ট বাঙ্ক প্রকল্প গ্রহণ করলেন। নারীক্ষমতায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেন পঞ্চায়েত আইনের সংশোধন ঘটিয়ে এক তৃতীয়াংশ মহিলা আসন সংরক্ষিত করে। কিন্তু এখনও মানুষের বহু চাওয়া-পাওয়া বাকি। অশুভ শক্তির দোসর সুযোগ সন্ধানীরা ওৎ পেতে আছে তাদের থাবা বিস্তারের আশায়।

এ পুণ্য শারদ প্রভাতে একটাই প্রার্থনা, বাংলা তার স্বমহিমায় বিরাজ করুক। বাংলা হোক বিশ্ববাংলা। এ আশা পূর্ণ হোক। চারিদিকে আনন্দধারা ঝরে পড়ুক।

অনাথস্য দীনস্য তৃষ্ণা তুরস্য ভয়ার্তস্য ভীতস্য বন্ধাস্য জন্তোঃ।
তমেকা গতিদ্দেবি নিস্তার দাত্রী নমস্তে জগত্তারিণী ত্রাহিদুর্গে।।