Latest News

May 5, 2014

অসমে গণহত্যার দায় কি মোদী এড়াতে পারেন?

অসমে গণহত্যার দায় কি মোদী এড়াতে পারেন?

১৯৮০-র গোড়া থেকেই অসমে `বাঙালি খেদা` আন্দোলন শুরুহয়। অসম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলে সাতটি রাজ্যকে নিয়ে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি গুলি `7-sisters`ধ্বনি তুলে বিদেশি রাষ্ট্রের মদতে ভারত থেকে আলাদা হওয়ারচক্রান্ত করেছিল তাদেরই একাংশ এই `বাঙালি খেদা` আন্দোলনের জন্ম দেয়। BJP এদের পেছন থেকের মদত দিতে শুরু করে। তার কারণ ১৯৭০-৭১ সালে বাংলাদেশেরমুক্তি যুদ্ধের সময় থেকে প্রায় ১ কোটি শরণার্থী মূলত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও অসমেআশ্রয় গ্রহন করে। এদের অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলমান। BJPতাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে এই শরণার্থী issue টিকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। এই ৮০ র দশকেই অসমে ঘটে `নেলী গণহত্যা`।কেন্দ্র ও আসুর মধ্যে চুক্তির ফলে এই জাতি দাঙ্গার ভয়াবহ পরিবেশ কিছুদিনের জন্যস্তিমিত হলেও ২১ শতকের গোড়া থেকে আবার তা বিষিয়ে ওঠে।

২০১২ সালে ২০ জুলাই অসমের জোড়াবাড়ি জেলার বিস্তীর্ণঅঞ্চলে বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর বিনা প্ররোচনায় পরিকল্পিত সশস্ত্র আক্রমণ শুরু হয়। মাত্র ১ মাসের মধ্যে শতাধিক বাঙালি সংখ্যালঘু খুন হন এবং প্রায়৪০০ গ্রামের ৪ লক্ষ বাঙালি মুসলিম ২৭০ টি ত্রান শিবিরে অংশ নেন। অসমেরমুখ্যমন্ত্রী তরুন গগৈ ২৭ শে জুলাই কেন্দ্রের UPA সরকারেরবিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে সময়মত সামরিক বাহিনী স্পর্শ কাতর এলাকা গুলিতে যদিমোতায়েন করা হত তাহলে এত মানুষ নিহত আহত এবং ঘরছাড়া হত না। 

এবছর ৮ই ফেব্রুয়ারী BJP রস্বকথিত প্রধানমন্ত্রী পদের দাবীদার গৌহাটিতে নির্বাচনী জনসভায় বললেন,ক্ষমতায় আসলেশরণার্থীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।একইভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার জনসভাতেওমোদী বাঙালি শরণার্থীদের বিতাড়িত করার সদম্ভ ঘোষণা প্রত্যেকটি জনসভায় করে চলেছেন। রাজ্যও জাতীয় স্তরে সমস্ত বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদপত্রে তা ফলাও করে ছাপা হয়েছে।আর যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয় যে মোদী শুধু অনুপ্রবেশকারীদের কথা বলেছেনতাহলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকার ও সীমান্ত সুরক্ষা দলের। ৬দশক ধরে মোদীরা একথা তুললেন না কেন? এই ধরনের সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উদ্ভাবনী মূলকবক্তব্য ভারতের সংবিধানের ৫১ ধারার `ই` উপধারায় যা বলা হয়েছে তার সম্পূর্ণপরিপন্থী। যে মানুষ `আমি প্রধানমন্ত্রী হব`, `আমি প্রধানমন্ত্রী হব` বলেআকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করছেন, তিনি সংবিধান পড়েননি অথবা সংবিধানের নির্দেশকেঅমান্য করবেন, তা ভাবা যায়না। এমন নয় যে মোদীর দলে আইন বা সংবিধান জানা মানুষ নেই।তারা যেমন মোদীকে সংবিধানের শিক্ষা দিতে পারতেন, তেমনই রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৯৫১ এবং১৯৬৭ সালে ঘোষিত আন্তর্জাতিক সনদ, যা `Refugee Convention` নামে পরিচিত, সেটির প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতেন।ওই আন্তর্জাতিকসনদে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি দেশ থেকে অন্য দেশে সামাজিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক, জাতি-ভাষা-ধর্ম জনিত দাঙ্গা ইত্যাদি কারণে শরণার্থীরা আশ্রয়নিলে, তাদের প্রতি কি ধরনের মানবিক আচরণ করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত একাধিক মামলায়নির্দেশ দিয়েছেন সংবিধানের ২১ নং ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের সম্মানের সঙ্গে বেঁচেথাকার যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তা শরণার্থীদের জন্যও একইভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু BJP সংবিধান বা আন্তর্জাতিক সনদের এই ধরনের নির্দেশ বরাবর অগ্রাহ্য করেছে।কারণ, তাদের রাজনীতির অভিমুখ মানবিক নয়, পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক। সুতরাং, BJP র এই ধরনের উস্কানি এবং প্রকাশ্য মন্তব্যে ভাষা গত ও ধর্মীয়সংখ্যালঘুরা যেমন আতঙ্কিত,সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ও একই ভাবে উদ্বিগ্ন ওবিচলিত বোধ করছেন। কারণ, ভারতের অন্য কোন রাজ্য তো ভাগ হয়নি ভাগ হয়েছে শুধু বাংলাও পাঞ্জাব।  

স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরে আবার সেই ধর্মের ভিত্তিতে অশুভ বিভেদের রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ভারতের নির্বাচন কমিশন কেন এই বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ রয়েছে। মোদী তথা BJP র সাম্প্রদায়িক উস্কানিরফলশ্রুতিতে অন্তত ৩২ জন নিরীহ বাঙালি মুসলমান গত সপ্তাহে অসমের কোঁকড়াঝার ও বক্সাজেলায় খুন হয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার পরিবার। নির্বাচন কমিশনের আসুকর্তব্য, অবিলম্বে অসম, ত্রিপুরা ও পশ্চিম বাংলায় মোদীর সমস্ত প্রচারসভার videofootage এবং পেপার clipping  সংগ্রহ করে শতঃ প্রনোদিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া।যেহেতু মোদী ভারতীয় সংবিধান, ভারতীয় দণ্ডবিধী এবং আন্তর্জাতিক সনদের নির্দেশকেউল্লেখ করেছেন, সেহেতু অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারিমামলা রজ্জু করা উচিত। এটি শুধু তৃনমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবী নয়,সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, যারা ভারতের ভৌগলিক অখণ্ডতা, সাম্প্রদায়িকসম্প্রীতি ও সৌভাতৃত্বের আদর্শে বিশ্বাস করেন তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এইসময়োপযোগী আহ্বানে সাড়া দেবেন এটি আমাদের বিশ্বাস এবং বিনম্র অনুরোধ।

লেখক: সুখেন্দুশেখর রায়, রাজ্যসভা সাংসদ, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস