December 10, 2013
উত্তরবঙ্গে `শিল্প-মেলার` আয়োজন করতে চলেছে রাজ্য সরকার

ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের প্রসারে এ বার উত্তরবঙ্গে `শিল্প-মেলার` আয়োজন করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে শিলিগুড়িতে ওই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার উদ্বোধনে হাজির থাকতে পারেন মুখম্যন্ত্রীও। গত রবিবার শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে সিআইআই-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে উদ্যোগ শুরু কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প সচিব ।
উত্তরবঙ্গে শিল্প স্থাপনে রাজ্য সরকারের বার্তা শিল্পমহলে পৌঁছে দিতে রবিবার শিলিগুড়িতে বৈঠক করে এ দিন সোমবার কোচবিহারে গিয়েছিলেন শিল্প সচিব। কোচবিহারে আরও তিনটি শিল্পতালুক গড়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ দিন জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন বণিকসভার সঙ্গে বৈঠকও করেন শিল্প সচিব। তিনি বলেন, `মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার-সহ সমগ্র উত্তরবঙ্গেই শিল্প বিকাশে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কোচবিহারে আরও তিনটি নতুন শিল্পতালুক করার পরিকল্পনা হয়েছে। পিপিপি মডেলের ধাঁচে ওই তিনটি শিল্পতালুক হবে।` চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় কেন্দ্রীয় ভাবে `এমএসএমই-২০১৩` অনুষ্ঠিত হয়। শিল্প গড়তে উদ্যোগীদের ওই মেলা থেকেই প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র তুলে দেওয়া হয়। রাজ্য শিল্প দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সেই মেলায় সাফল্য পাওয়ার পরে এবার উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার উদ্যোগীদের সুবিধে দিতেই আগামী জানুয়ারি মাসে রাজ্য সরকারের সব দফতরের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে শিলিগুড়িতে আসছে শিল্প দফতর।
সিআইআই সূত্রে জানানো হয়েছে, দু`দিন ধরে চলা ওই ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প মেলায় অংশগ্রহণ করতে বিদ্যুৎ, অর্থ, থেকে শুরু করে শিল্প গড়তে যে দফতরগুলির ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়, সে সব দফতরই উপস্থিত থাকবে। সেই মেলাতেই জমির চরিত্র বদলে রাজ্য সরকারের চিন্তাভবনার কথা তুলে ধরা হবে।
সিআইআই সূত্রে জানানো হয়েছে, শিল্প গড়তে চেয়ে আবেদন করার পরেই দ্রুত সমীক্ষা করে জমির চরিত্র বদলের শংসাপত্র সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছেন। রবিবারের বৈঠকে শিল্পসচিব এমনই জানিয়েছেন বলে বণিকসভার তরফে জানানো হয়েছে। বণিকসভাগুলি জানিয়েছে, শিল্পের জন্য কোনও জমি কেনার পরে, সরকারি নিয়ম অনুসারে ওই জমিকে বাণিজ্যিক ব্যবহার তথা শিল্পের জন্য জমি এই শংসাপত্র সংগ্রহ করতে হয়। জমির চরিত্র বদলের শংসাপত্র পেতে কোনও সময় এক-দু বছরও লেগে যায় বলে অভিযোগ। যতদিন না শংসাপত্র মেলে তত বসে থাকা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই বলে উদ্যোগীদের অভিযোগ করেছেন। আগামী জানুয়ারিতে শিলিগুড়ির ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মেলায় উদ্যোগীদের এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নতুন পরিকল্পনার কথা বুঝিয়ে বলা হবে বলে জানানো হয়েছে। এবং ওই মেলাতে অন্তত ৫০টি নতুন শিল্প সংস্থাকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শিল্প গড়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সিআইআইয়ের কার্যকরী সমিতির সদস্য সঞ্জিত সাহা বলেন, `রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত শিল্পের পক্ষে খুবই সহায়ক হবে। বিশেষত উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মেলা হলে নতুন উদ্যোগীদের সুবিধে হবে।` অন্যদিকে, কোচবিহার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলার দুটি এলাকায় ১০০ একর করে জমি নিয়ে এবং আরেকটি এলাকায় ৫০ একর জমিতে নতুন তিনটে শিল্প তালুক নির্মাণ করা হবে বলে সোমবার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোন এলাকাগুলিতে শিল্পতালুক তৈরি হবে তা আগামী মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে। কৃষি ভিত্তিক শিল্পের পাশাপাশি জেলায় অন্য ভারী শিল্প সম্ভাবনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ দিন চকচকা শিল্পতালুক ঘুরে দেখেন শিল্প সচিব। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের অধিকর্তা অশ্বিনী যাদব। চকচকায় জুট পার্কের জন্য চিহ্নিত জমিতে কাজ শুরু করতে নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং জেলাশাসক মোহন গাঁধীকে দায়িত্ব নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন শিল্পসচিব। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, `মালদহের আম, হলদিবাড়ির লঙ্কা, টম্যাটো ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, মিনি রাইস মিলের মত নানা শিল্প সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গে রয়েছে। সঠিক ভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে।`
The article was first published in Anandabazar Patrika, Kolkata on December 10, 2013