Latest News

September 30, 2014

`জাগো বাংলা` আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

`জাগো বাংলা` আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

`জাগো বাংলা` আমাদের পত্রিকার নাম হলেও জাগো বাংলা অর্থাৎ বাংলা মা-কে সারা বিশ্বের দরবারে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের স্বপ্ন। বাংলার মাটির পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে…
 – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার বুকে তৈরি হওয়ার পর আমাদের মুখপত্র হিসেবে `জাগো বাংলা`-পত্রিকা চালু করেছিলাম। বছরের পর বছর কারও কাছে কোনও সাহায্য না নিয়েও আমি আর পার্থদা এই পত্রিকাকে অনেক কষ্ট করে চালিয়ে এসেছি। আমাদের বক্তব্য যখন কোথাও ছাপানো হত না, তখন এই `জাগো বাংলা`-তেই আমি প্রতি সপ্তাহে সম্পাদকীয় লিখতাম। সুখ-দুঃখ, আঘাত-প্রত্যাঘাত-সঙ্ঘাত সব কিছুতেই `জাগো বাংলা` বাংলাকে জাগানোর মতোই চেতনা-বিবেক ও আবেগের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে।

`জাগো বাংলা` শারদীয়াও আমার খুব প্রিয়। আমাদের অনেক প্রিয় লেখক-লেখিকা-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ ও অন্যান্য সাথি-বন্ধুদের মনোজ্ঞ লেখনি শারদীয়াকে সমৃদ্ধ করে। লেখেন অনেক সাংবাদিক-বন্ধুও। আর তা সবার দরজায় পৌঁছে দেন আমাদের দলের সহকর্মী ও হকার বন্ধুরা।

`জাগো বাংলা` সাপ্তাহিক কাগজ আর শারদোৎসবে `শারদ সংখ্যা` হাতে না পেলে, কী যেন একটা পেলাম না, সেটা সবসময় মনে হয়। কিছুদিন আগে একজন বিশিষ্ট চিত্রকর আমাকে বলেছিলেন, `জাগো বাংলা পত্রিকাটা খুব সুদিং। মানে নমনীয়। এখানে কোনও কুৎসা করা হয় না। সত্য সংবাদ, সঙ্গে বিশ্লেষণ। পার্টির কথাটাও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়। তাই আমি পড়ি। পড়তে ভাল লাগে।`

ওই চিত্রকরের কথাগুলি শুনে খুব ভাল লেগেছিল। যা মানুষকে দুঃখ দেয় না, শেখায় ভালবাসতে, তা তো সত্যিই সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। আমাদের `জাগো বাংলা` তেমনই। বাংলার নব সংস্কৃতির নব আলোকে `জাগো বাংলা`র মতো অনেক ছোট ছোট নতুন পত্রিকাকেও এই পরিসরে জানাচ্ছি আমাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

জাগো বাংলার প্রচ্ছদ যেমন আমাকে আঁকতে হয়, তেমনই একটা লেখাও শারদ শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখতে হয়। এবারও তাই কলম ধরলাম। আঁকলাম প্রচ্ছদও।

`জাগো বাংলা` আমাদের পত্রিকার নাম হলেও, জাগো বাংলা অর্থাৎ বাংলা মাকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করাটাই আমাদের জীবনের স্বপ্ন বলতে পারেন। বাংলার মাটির সম্পদকে মর্যাদার সঙ্গে তুলে ধরে, তার পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বাংলাকে `বিশ্ব বাংলা`য় প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই তাই শুরু করেছি। আমরা সেই আলোর পথে মাথা উঁচু করে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছি।

বাংলা মা-র সম্মান মানেই আমাদের সকল গর্ব, সকল অহংকার। মায়ের সেই সম্মান আমাদের জীবনের অলংকার। মায়ের আশীর্বাদ ছাড়া যেমন আমাদের জীবন পূর্ন হয় না, মনের ভোর দেখতে পাই না, যেমন তাঁর স্নেহভরা ছোঁয়া ছাড়া আমাদের জীবনে প্রত্যুষের সূর্যোদয় হয় না, তেমন `জাগো বাংলা`র শারদীয়া হাতে না পেলে পুজোর নতুন কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি বলেই মনে হয়। অনেকে বিনা পারিশ্রমিকে লেখা দেন। তাঁদের কাছে আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। সরকারি বিজ্ঞাপন আমরা এখনও পর্যন্ত নিইনি। ডেরেক-টুম্পাই-কিংশুক-মুকুল-পার্থদা-বক্সিদা, সবাই নিজেদের মতো করে চেষ্টা করেন।তাই `জাগো বাংলা` আজও আমাদের জাগ্রত রেখেছে।

জাগো বাংলার যাঁরা গ্রাহক, ভালবাসেন ও পড়েন তাঁদের উদ্দেশ্যে জানাই ভবিষ্যতকে বিশ্ব সংসারে তুলে ধরার জন্য আমার কাজের চাপ অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাংলার সব অর্থ দিল্লি সুদ বাবদ কেটে নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আজ অনেকাংশে অনেকের থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

আমরা মর্যাদার সঙ্গে এগোচ্ছি, তাই কুৎসাপক্ষদের অপপ্রচার ও একশ্রেণির সংবাদমাধ্যমে কুৎসা ও মিথ্যাচার বেড়েই চলেছে। বাংলাকে যারা আবার সর্বনাশের পথে ঠেলে দিতে চায়, সেই CPM, BJP আর Cong চিরকাল আমাদের বিরোধিতা আর অসম্মান করেছে। তবে নিজেদের স্বার্থে CPM+Cong+BJP-র ভোলবদল ও দলবদল, মহাঘোঁট নতুন কোনও ব্যাপার নয়, চিরকাল এসব চলে আসছে। পুরনো বোতলে নতুন মদের মতোই একেক সময় একেক রকম খেলা। আসল উদ্দেশ্য বাংলা মাকে অসম্মান। উন্নয়নে বাধা দেওয়া। গণতন্ত্রকে খুন করে নিজেদের স্বার্থে দলতন্ত্র কায়েম করা। বলতে বাধা নেই, আজ যাবতীয় হম্বিতম্বি, অহঙ্কার, ঔদ্ধত্য সবটাই BJP-র ফেরিওয়ালা ABP-র পরিকল্পিত। এটা প্রকাশ্য।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, মানুষই আমাদের সব। তাঁদের আশীর্বাদ, ভরসা, বিশ্বাস আমাদের চলার পথের পাথেয়। তাই মা-মাটি-মানুষকে বলব, বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন। জাগো দুর্গা, মা এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করবেই করবে।  

শিশির ভেজা শিউলি ভোরে                                                        
মা যে আসছেন মোদের ঘরে।

এই তিনবছর একটানা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাজ করে যাবার পর আমার মনে হয়েছে রাজ্যে উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা প্রকৃত দৃষ্টির অভাবে হেলাফেলা করে নষ্ট করা হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আমাদের অনেকগুল বছর, নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। প্ল্যানিং যদি সময়ে করা যায়, এবং তা ফলপ্রসূ করার উদ্যোগ নিয়ে যদি সঠিককভাবে কার্যকর করা হয়, তবে নিশ্চই কাজটা কাজের মতো করেই হবে। কিন্তু উদ্যোগে যদি ঘাটতি থাকে, নানারকম অছিলায় কাজ দেরি করে দেওয়ার অপচেষ্টা থাকে, তা হলে কোনও দিনই কোনও প্রোজেক্ট ঠিকভাবে হতে পারে না। সেটাই হয়েছে এতদিন।

আমরা আসার পর সর্বক্ষেত্রে তাই পরিবর্তন আনতে হয়েছে। বলতে পারেন ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে ইমারত গড়ার কাজটা শুরু করতে হয়েছে। এবং সফলভাবে এগোচ্ছি। আমি এখনও মনে করি, যাদি ঠিকমতো পরিকাঠামো তৈরী করা যায় এবং বাণিজ্যিক উদ্যোগ বাংলার মেধাসম্পদকে কাজে লাগানো যায় তা হলে কিন্তু বাংলার মাটিতে আবার উন্নয়নের স্বর্ণযুগ ফিরে আসতে পারে। উদ্যোগ বাড়লে তবেই তো কর্ম করার জন্য শ্রমের প্রয়োজন হবে। যে শ্রম আমাদের ছাত্র-যৌবন মেধা-প্রতিভা-স্কিল সবকিছুর মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ হবে।

বাংলায় আমাদের সেই উদ্যোগেই তৈরী হচ্ছে অনেক কাজ। হতে পারে আরও অনেক কিছু। কী নেই আমাদের? কোনও দিন চেষ্টাই হল না। আমরা এসে চেষ্টাটাই শুরু করলাম। তিন বছরে বহু কাজ করেছি। আরও করতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, সঙ্কীর্ণ রাজনীতির মানসিকতা ও একশ্রেণীর সংবাদমাধ্যমের মালিকের ব্যক্তিগত স্বার্থপরতায় বাংলার মাটির বিরুদ্ধে একতরফা কুৎসা ও অপপ্রচার চলছে। যাঁরা প্রতিনিয়ত বাংলার মানুষ ও রাজ্যকে অসম্মান করে চলেছেন, তাঁদের বোঝবার ক্ষমতাই হয়তো নেই যে, `যে গাছের ডালে তাঁরা বসে আছেন, আসলে সেই গাছের ডালই তো তাঁরা কাটছেন।`

আসলে তাঁরা ভাবছেন, বদনাম, দুর্নাম ও মিথ্যা অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়ে রাজ্য সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। অথবা ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে সরকারি যন্ত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কিন্তু তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, আমাদের সরকারটা মা-মাটি-মানুষের। এখানে মানুষের কথাই শেষ কথা।

বলতে দ্বিধা নেই, এই কুৎসাপক্ষ মানুষ ঠকিয়ে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা কামাই করেন। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে তাঁদের, বাংলার মাটিকে। মানুষকে অসম্মান করার কোনও অধিকার আপনাদের নেই। সব কিছুর একটা সীমারেখা আছে। আমরা যারা পাবলিক লাইফে থাকি, আমাদেরও একটা সীমারেখা রয়েছে। বস্তুত, সব জগতে সবার জন্যই একটা সীমারেখা ও একটা সিস্টেম থাকে। সবাইকে সেই সিস্টেম, কার্টসি রক্ষা করে চলতে হয়। সংবাদ মাধ্যমের নাম করে যে শ্রেণী কুৎসার খবর বেচেন, তাদেরও একটা সীমারেখা থাকা উচিত।

একটা সাধারণ মানুষ যদি অন্যায় করেন, তবে সেটা অন্যায়। তেমনই কোনও কুৎসাপক্ষ খবরের নামে লোকঠকানো ব্যবসা করেন, মিথ্যা কুৎসা করে বার বার আইন ভাঙেন, নিজেদের স্বঘোষিত সমাজের `বড় ভগবান` মনে করেন, তাঁরাই বা আইনের চোখে সমান দোষী হবেন না কেন? মনে রাখতে হবে, কেউ কোনও ক্রিমিনাল অফেন্স করলে সেটা ক্রাইম। সে তিনি যেই হোন। আর আইন কিন্তু সবার ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য হয়। যে সব ব্যবসায়ী নিজেদের কাজ ঠিকমতো না পেলেই সমস্ত সীমারেখা উল্লঙ্ঘন করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও আইন একই। ভুলে যাবেন না।

এই কথাগুলো আজ বলার প্রয়োজন এসেছে। কারণ, বাংলার মানুষ বুঝতে পারেন কারা এসব করছেন। তাই মানুষ এঁদের দ্বারা প্রভাবিত হন না। মানুষ খুব বুদ্ধিমান। সব লক্ষ করেন তাঁরা, জানেন সব। ফলে মানুষ ওদের দ্বারা প্রভাবিত হন না। কিন্তু বাংলার বাইরে অথবা দেশের বাইরে যাঁরা থাকেন, তাঁদের পক্ষে সব খবর রাখা সম্ভব হয় না। ফলে কুৎসাপক্ষের বিরামহীন মিথ্যাচারে কেউ কেউ কিছু সময়ের জন্য হলেও ভাবতে শুরু করেছিলেন যে বাংলায় সত্যিই খারাপ কাজ হয়, ভাল কিছু হয় না। কিন্তু সিঙ্গাপুর সফরে আমাদের শিল্পপতি, অফিসার ও বাংলার প্রকৃত সাংবাদিকদের একত্রিত ভূমিকায় প্রবাসী বন্ধুরা জানতে পেরেছেন প্রকৃত সত্য ও সঠিক তথ্য।

তাঁরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছেন, তবে কেন এই কুৎসাপক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে চলেছেন? আমরা প্রবাসীদের বলেছি, দেখুন যেটা সত্য সেটা সত্যই। আর যা মিথ্যা, তা মিথ্যা। মিথ্যার দ্বারা কোনও সঠিক তথ্যকে চেপে রাখা যায় না। তা প্রকাশিত হবেই। সূর্যের আলোর সামনে কি `টর্চের আলোর` কোনও গুরুত্ব থাকে? থাকে না। তাই সূর্যের আলোর সামনে যেমন টর্চের আলোর প্রয়োজন নেই, তেমনই মিথ্যাচারী লোকঠকানো ও প্রতারক সংবাদপক্ষও একদিন হারিয়ে যাবে খবরের জগৎ থেকে। সত্যের পথে যাঁরা অবিচল থাকেন, সেই নির্ভীকরাই এই যায়গা পূরণ করবে। কালের গতিতেই কুৎসাপক্ষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে।

সিঙ্গাপুরকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আমাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। ধন্যবাদ আমদের কথা শোনার জন্য। প্রবাসীদের ধন্যবাদ ভুল ধারণার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য। মাত্র তিন বছর সময়ে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে আমাদের উদ্যোগ সাফল্যমণ্ডিত করতে সদর্থকভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছেন যাঁরা, ধন্যবাদ তাঁদেরও।

বাংলা মায়ের স্বার্থে আসুন আমরা সবাই এগিয়ে যাই। শরৎ শিউলির ভোরে মা আসছেন বাংলার ঘরে। মাগো, বাংলাকে ভালো রেখো। বাংলার মা-মাটি-মানুষকে ভালো রেখো। দেশ ও দশকে ভালো রেখো। আর নিজেও ভালো থেকো।

সাবাইকে জানাই শারদ শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন।

জাগো মা, জাগো বাংলা।

আপনাদের একান্ত

মমতা